চির তরুণ বুফন !
- নিলয় বিশ্বাস
জর্জ ওয়াহ। আপনি যদি ফুটবলের পুরানো দর্শক হয়ে থাকেন নামটা শুনে থাকবেন অবশ্যই। জর্জওয়াহ ছিলেন সাবেক ফুটবলার ও লিবিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ফুটবলার হিসেবে খেলে গেছেন মোনাকো,প্যারিস সেইন্ট জার্মান, চেলসি, মিলান, ম্যানচেস্টার সিটির মতো বড় বড় ক্লাবে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে চিরতরুণ বুফনের কথা বাদ দিয়ে কেন জর্জ ওয়াহকে টেনে আনছি? বুফনকে চির তরুণের তকমাটা দিতে একটু তার প্রসঙ্গ না টানলেই নয়।
একটু বুফনের ক্যারিয়ার দিকে তাকাই। সালটা ১৯৯৫, বুফনের প্রথম প্রফেশনাল ফুটবল ম্যাচ। ইটালিয়ান ক্লাব পারমা দিয়েই শুরু তার ক্যারিয়ার জীবন। আর প্রফেশোনাল ক্যারিয়ার প্রথম ম্যাচই মিলানের বিপক্ষে! আর সামনে ত্রাস ছড়ানো ইন্টার মিলানের দুই আক্রমন ভাগের খেলোয়াড় কিং ওয়াহ (লাইবেরিয়ানরা তাকে ভালবেসে কিং ওয়াহ বলে ডাকে) আর রবার্ত ব্যাগিও! ব্যালন ডি’অর জয়ী কিং ওয়াহ সেদিন ১৭ বছর গোলকিপারকে পরাস্ত করতেই পারলেন না! ড্রতেই সমাপ্তি ঘটে সেদিনের ম্যাচের। আগামীতে গোলবারের নিচে রাজত্ব করবেন সেটার ইঙ্গিত সেদিনই দিয়ে রেখেছিলেন।
জর্জ ওয়াহ ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন সেই ২০০৩ সালেই। এখন ২০১৮ চলছে। কিন্তু থেমে নেই বুফন। সেই ১৭ বছর বয়সী বুফন এখন গোলবারের পোস্ট ছাড়েননি। বয়সের ছাপ যদিও চুলে দাড়িতে কিংবা মুখের ভাঁজে লেগে গেছে। তারপরও ফিটনেস যেন এখনো সায় দেয়—বুফন তুমি এখন দাড়াতে পার গোল পোস্টের নিচে।
পুরো নামটা জিয়ালুনজি বুফন। অনেকেই ডাকে জিজি বুফন নামে। ক্যারিয়ারে অর্জনের ঝুলিটা বেশ লম্বা। ক্যারিয়ার শুরু সেই পারমা থেকেই। ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পারমাতেই খেলে গেছেন। এরপর ভালো প্যারফরমেন্সের কারণে ডাক পান ইতালিয়ান লিজেন্ড ক্লাব যুভেন্টাসে। সেখানেই কেটে গেছে জীবনের একটা বড় সময়। ২০০১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ছিলেন যুভেন্টাস গোল পোস্টের অতন্দ্র প্রহরী। বয়সের কোঠা এখন চল্লিশে গিয়ে ঠেকছে। অবস্থা বুঝে তাই পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রান্সে। নাম লিখিয়েছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মান।
বুফনের রেকর্ডের ঝুলিটাও বেশ লম্বা। গোলকিপার হিসেবে যা যা অর্জন করা যায় মোটামুটি সবই নিজের ঝুলিতে ভরেছেন। ইতালিয়ান জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭৬টি ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলা। সর্বাধিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়ের তালিকায় চতুর্থ নম্বরে। খেলে গেছেন ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪ টানা ৫টি বিশ্বকাপ। ২০১৮ বিশ্বকাপটা যেন কপালে ছিল না। ইতালি কোয়ালিফাই করতে পারলে হয়তো এই বিশ্বকাপেও গোলবারের নিচে দাড়াতেন জিজি!
প্যারিস সেইন্ট জার্মানে গিয়ে নিজেকে আরেকটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হচ্ছে। যে জর্জ ওয়াহর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই প্রফেশনাল ফুটবলে পর্দাপন সেই জর্জ ওয়াহর ছেলে এখন জিজির টিমমেট। তিমোথি ওয়াহ বাবার মতোই একজন স্টাইকার। বয়স সবে মাত্র ১৮! একজন লিজেন্ড গোলকিপারকে দলের গোলকিপার হিসিবে পেয়ে, নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন এই ট্যালেন্টেড স্ট্রাইকার। বয়সের সাথে নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় মিলিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। নতুন জার্সি, নতুন দল, নতুন দেশ। সবকিছু মিলিয়ে বুফনের কাছে নতুন মিশন। সফলতার আরো শীর্ষে নিজেকে আর নিজের নতুন দলকে কতদূর নিয়ে যেতে পারেন, সেটাই এখন সমর্থকদের প্রত্যাশা।