বিশ্বকাপে জাত চেনালেন যাঁরা
- নিলয় বিশ্বাস
বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারে একটি দল। ২৩ জন হতে পারেন ইতিহাসের অংশ। কিন্তু বিশ্বকাপ একটি দল বা ২৩ জনের নয়। এবার ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ রাশিয়াতে অংশগ্রহণ করেছিল ৩২টি দেশের ৭৩৬জন খেলোয়াড়। দেশের জন্য নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন প্রত্যেকটি দল। উদাহরণ হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া-জার্মানী ম্যাচ কিংবা জাপান-বেলজিয়াম ম্যাচ। ট্রফি নিয়ে উল্লাস করার ভাগ্য সবার না হলেও এবার বিশ্বকাপে অনেকেই মন জয় করে নিয়েছেন ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে। এঁরা লিওলেন মেসি, ক্রিশ্চিয়ান রোনালদো কিংবা নেইমার জুনিয়রের মতো তারকা নন। মাঠের পারফরমেন্স দিয়ে জয় করছেন দর্শকদের মন।
ক্রিয়েরান ট্রীপার
উইং-ব্যাক, ইংল্যান্ড
প্রথমেই বলতে হবে ইংল্যান্ডের উইং ব্যাক ক্রিয়েরানট্রীপারের কথা। নিজের রক্ষণ ভাগকে সামলানো, আক্রমনে বলের যোগান দেওয়া সব কিছুতেই ১০০তে ১০০ করে দেখিয়েছেন। তার নাম স্মরণ করতে সেমিফাইনাল ম্যাচে তার করা গোলটি চোখে অবশ্যই ভাসবে আপনার। ক্রোশিয়ার খেলোয়াড়দের ভেলকি দেখিয়ে বলের গন্তব্য করে দিয়েছেন গোলপোস্টের জালে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ডেভিড বেকহ্যামের পর ইংল্যান্ডের হয়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করার রেকর্ডটা তার। প্রতিপক্ষের বক্সে সতীর্থদের কাছে বল যোগান দেওয়ার তালিকায় সবার আগেই আসবে এই টটেনহামের খেলোয়াড়ের। উল্লেখ্য এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড তাদের ১২ গোলের ৯টি করছেন সেট পিস ও স্পটকিক থেকে।
ডেনিসচেরেসিভ
মিডফিল্ডার, রাশিয়া
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই সৌদি আরবের জালে ৫ গোল। কদিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচে যারা সাবেক ২০১৪ এর চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে ২-১ গোলে জিতেছে, তারাই রাশিয়ার মতো দলের কাছে ৫-০ গোলে হেরেছে! পরিস্ংখ্যান দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফূটবল দলগত খেলা। সম্মিল্লিত প্রচেষ্টা বদলে দিতে পারে যে কোনো ম্যাচের ফলাফল। কম শক্তির দল নিয়ে কীভাবে সুন্দর ও গোছালো ফুটবল খেলতে হয় সেটার প্রমাণ রাশিয়া। রাশিয়ার ভালো খেলার পিছনে অনেকখানি অবদান সাবেক রিয়ালমাদ্রিদের খেলোয়াড় ডেনিসচেরেসিভের। ৫ ম্যাচে করছেন ৪ গোল। প্রথম ম্যাচে বদলি নেমেই দুই গোল করে জাত চিনিয়েছেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ একাডেমির ছাত্র। ইনজুরির কারনে রিয়াল মাদ্রিদে নিজেকে তুলে ধরতে না পারলেও রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দেখিয়ে দিয়েছেন। ক্রোশিয়ার বিপক্ষে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের শুটে করা গোলটা, বিশ্বকাপের সেরা ১০ গোলের তালিকায় অবশ্যই থাকবে।
তাকাশিইনুই
মিডফিল্ডার, জাপান
বলা হয় যে, একটি ফুটবল দলের প্রাণ মিডফিল্ডাররা। মাঝমাঠ দখল, আক্রমণে উঠে যাওয়া, দলের ডিফেন্স সুরক্ষিত রাখা—সব স্থানেই তাদের রাজত্ব করে বেড়াতে হয়। এক কথায় পুরো মাঠের খেলোয়াড়। তাকাশিইনুই ছিলেন এবারের জাপান দলের প্রাণভ্রমরা। বিশ্বকাপের আগে থেকে যোগ দিয়েছেন রিয়ালবেতিসে। জাপানের এবারের খেলার ধরন ছিল দ্রুত পাস দিয়ে বল নিয়ে আক্রমনে উঠে আসা। আর সে কাজটা ভালোভাবেই করে গেছেন ইনুই। শুধু বলের যোগান দিয়ে থেমে থাকেননি। করেছেন দুটি গোল। সেনেগালের বিপক্ষে দারুণ এক গোল করে দলকে এনে দিয়েছেন লীড। আর বেলজিয়ামের বিপক্ষে তো ডি-বক্সের বাইরে থেকে যে শুট নিলেন, গোলকিপার বলের নাগালও পাননি।
ক্যাসপারশ্মিশেল
গোলকিপার, ডেনমার্ক
ক্যাসপারশ্মিশেল খেলেন লিস্টার সিটির হয়ে। ২০১৬তে লিস্টার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন শ্মিশেল। এবার বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই তুলে ধরছেন। বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের তালিকায় হয়তো তার নাম আসবে না। কিন্তু ডেনিশ দলের কাছে ক্যাসপারই সেরা। বল সেভিং পারসেন্টেজেস শুনলে হয়তো চমকে যেতে পারেন। বিশ্বকাপে তার সেভিং পারসেন্টেজেস ৯১.৩ (নূন্যতম এক ম্যাচের বেশি ম্যাচ খেলার হিসেব)। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তিনটি পেনাল্টি সেভ! মনে হয় এখনও ভুলে যাননি, যদি ক্রোয়েশিয়া বনাম ডেনমার্ক খেলাটি দেখে থাকেন। সেদিন ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কারটা মিস করেননি তিনি।
বাবার মতো নিজের দলের গোলপোস্টকে আগলে রেখেছেন। বাবা পিটার শ্মিশেলের নাম হয়ত অনেকেই শুনেছেন। খেলে গেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাউটেডের হয়ে। বিশ্বের সেরা ১০০০ কিপারের তালিকা করতে গেলে বাবা-ছেলে দুজনকেই রাখতে হবে। শ্মিশেল শুধু বিশ্বকাপেই নজরকাড়া পারফরমেন্স করেননি। বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে ১৪ ম্যাচ ডেনমার্ক ছিল অপরাজিত। আর গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল শ্মেশিল। ভালো খেলার আভাস অনেক আগেই দিয়ে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে।
ইয়েরি মিনা
ডিফেন্ডার, কলম্বিয়া
কদিন আগেই চুক্তি সেরে ফেলেছে বার্সালোনা এই ২৩ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের সাথে। কাজ প্রতিপক্ষের আক্রমণ-ভাগের খেলোয়াড়দের আটকে রাখা। সাথে আরেকটি কাজ বেশ ভালোভাবেই করতে পারেন। গোল করার ক্ষমতা আছে তার। বিশ্বকাপে করে ফেলছেন ৩ গোল, যা এক ডিফেন্ডারের এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল। কলম্বিয়ার ডিফেন্স লাইনে বেশ ভালো সার্ভিস দিয়েছেন। বয়স মাত্র ২৩, নিজেকে চেনানোর ইংগিতটা বুঝি আগেভাগেই দিয়ে রাখলেন।