ফুটবলকে ‘বিদায়’ বললেন মার্কুয়েজ
- নিলয় বিশ্বাস
রাফায়েল মার্কুয়েজ—খেলে ফেলেছেন পাঁচ পাঁচটি বিশ্বকাপ। আমাদের অনেকের হয়তো পাচটি বিশ্বকাপ দেখাই হয়ে উঠেনি! আর রাফায়ালে খেলে ফেলেছেন পাঁচটি বিশ্বকাপ! পাঁচটি বিশ্বকাপে কেটে গেছে কুড়ি বছর। ফলে বয়সের অমোঘ নির্দেশে প্রিয় ফুটবলেকে ‘বিদায়’ বলতেই হলো এই কিংবদন্তি মেক্সিকান ডিফেন্ডারকে। টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলোয়াড়দের তালিকায় তৃতীয় খেলোয়াড় রাফায়েল মার্কুয়েজ। এর আগে তার স্বদেশী গোলকিপার এন্টেনিও কারবাহাল এবং ১৯৯০ বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান গোলকিপার লোথার ম্যাথুস এই রেকর্ড গড়েছেন।
পুরো নাম রাফায়েল মার্কুয়েজ। এই কিংবদন্তি ডিফেন্ডারের জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে, মেক্সিকোর যামোরা শহরে। ইয়ুথ ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯২ সালে এটলাস ক্লাবের হাত ধরে। ইয়ুথ টিমে খেলে গেছেন ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। সুদক্ষ ক্রিড়া নৈপুণ্যের কারণে ডাক পেয়ে যান ক্লাবের মূল দলে। মূল দলে খেলে গেছেন ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৯৯ সালে কোপা আমেরিকাতে ভালো পারফর্মেন্সের কারণে ডাক পান লীগ-১ ক্লাব মোনাকো থেকে। তার প্রথম সিজনে লীগের টাইটেল ঘরে তোলে মোনাকো। মোনাকোতে খেলে যান টানা চারটি মৌসুম। এরপর নিজেকে নিয়ে যান আরো উচ্চতায়। ডাক পেয়ে যান লিজেন্ডারি স্প্যানিস ক্লাব বার্সালোনা থেকে। বার্সেলোনোয় এরপর খেলে যান টানা সাতটি মৌসুম। বার্সালোনার হয়ে খেলেন প্রথম মেক্সিকান হিসেবে চ্যাম্পিয়ন লীগের ফাইনাল। এরপর ঘুরে ফিরে যোগ দেন জীবনের প্রথম ক্লাব আটলাসে।
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন ইকুয়েডরের বিপক্ষে। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। একজন খেলোয়াড়ের কাছে এটি অবশ্যই এক দারুন ব্যাপার। কিন্তু একটি দুঃখ আছে রাফায়েল মার্কুয়েজের মনে। ১৯৯৬ থেকে ইকুয়েডের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে নিয়মিত ছিলেন জাতীয় দলে। তবু ডাক পাননি ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে। ডাক পেলে হয়তো আজ টানা ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র খেলোয়াড় থাকতেন মার্কুয়েজ! যাইহোক, পরের বছর নিজের দলকে জেতালেন কোপা আমেরিকা। এরপর ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা খেলে গেলেন পাঁচটি বিশ্বকাপ।
যে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন রাফায়েল মার্কুয়েজ:
- কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ, ২০০২
- জার্মানী বিশ্বকাপ, ২০০৬
- সাউথ আফ্রিকা, ২০১০
- ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৪
- রাশিয়া বিশ্বকাপ, ২০১৮
মার্কুয়েজ করে গেছেন আরো একটি রেকর্ড ২০০২ সালে থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রত্যেক বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন নিজের দলকে। আর প্রতিবার নিজের দলকে নিয়ে গেছেন নক আউট পর্ব পর্যন্ত।
এক টুইট বার্তায় রাফায়েল তুলে ধরছেন জীবনের অন্যতম এক জটিল মুহূর্ত। ‘জার্মানির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়ে আমাদের শুরুটা দারুনভাবে উপভোগ করছি। চার বারের চ্যাম্পিয়ানদেরকে ২-১ গোলে হারানো কতটা আনন্দের সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেদিন প্রথম একাদশে ছিলাম না। সাইড বেঞ্চে অনেকটা শক্ত মনে বসতে হয়েছিল। কারণ কিছুক্ষণ আগে বাবাকে হারিয়েছি! আর দলের হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে অবদান রাখতে পেরেছি এটা আমার জীবনের শেষ্ঠ পাওয়া।’
নক আউটে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শেষ করছেন ২২ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ার। ৩৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার ক্যারিয়ার জীবনে বার্সালোনার হয়ে জিতেছেন একটি লা-লীগা, দুইটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ান্স লীগ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।