কার হাতে উঠছে চ্যাম্পিয়নস লীগের রুপালি ট্রফি
- আজিজুর রহমান ফয়সাল
টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতে নিজেদের সম্পত্তি করে নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ । জিনেদিন জিদানের হাত ধরে রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য এক দল। চ্যাম্পিয়নস লীগের আধুনিক সংস্করণে ইতিহাস গড়ে জিতে নেয় টানা তিন শিরোপা, যা কোনো দলই এ পর্যন্ত করে দেখাতে পারেনি। রোনালদোর বিদায়, ডাগআউটে জিদানের অনুপস্থিতি রিয়াল যেন হারিয়েছে তাদের সে জৌলুস। ২০১৮/১৯ সিজনের শেষ ১৬’র লড়াইয়ে আয়াক্সের সাথে হেরে ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লীগের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিরোপা জেতা দলটি। তাই অবধারিতভাবেই এবারের ইউরোপ সেরার মুকুট উঠছে অন্য কারো হাতে।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের নিয়নে উয়েফা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চ্যাম্পিয়নস লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের ড্র। কোয়ার্টার ফাইনালের এই ধাপে কে কার মুখোমুখি হবে তাও জানা হয়ে গেছে ।
আগামী ৯ এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে টটেনহাম হটস্পার্স মুখোমুখি হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের আরেক দল ম্যানচেস্টার সিটিস সাথে। টটেনহামের নতুন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম চ্যাম্পিওয়নস লীগ ম্যাচেই দেখা হয়ে যাচ্ছে দুই ইংলিশ জায়ান্টের। অপর ম্যাচে লিভারপুল আতিথেয়তা দেবে এফসি পোর্তোকে।
১০ এপ্রিল আয়াক্সের মাঠে দেখা যাবে জুভেন্টাসকে এবং অপর ম্যাচে বার্সেলোনা খেলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে।
আসুন দেখে নিই কেমন হতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালের দৌরত্ত্ব গুলো।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম বার্সেলোনা
চ্যাম্পিয়নস লীগের বিগ ম্যাচ হতে যাচ্ছে ম্যানচেস্টার বার্সেলোনার মধ্যকার ম্যাচটি। ওলে গুণার সোলশেয়ারের অধীনে বদলে যাওয়া রেড-ডেভিলদের দেখছে দর্শক। ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ ফার্গুসনের পর যেই কোচই এসেছে, ইউনাইটেডকে খেলিয়েছে রক্ষণাত্মক কোলসে। মরিনহোর বিদায়ের পর রক্ষণাত্মক নীতি বাদ দিয়ে সোলশেয়ার ফিরিয়ে এনেছে রেড-ডেভিলদের সেই পুরনো ফর্মুলা এটাক, এটাক এন্ড এটাক। এতে ইউনাইটেড ফলও পাচ্ছে হাতেনাতে। প্রিমিয়ার লীগের পয়েন্ট টেবিলে বার থেকে উঠে এসেছে চারে। চ্যাম্পিয়নস লীগে শক্তিশালী পিএসজির সাথে ২-০ তে পিছিয়ে পড়ার পরও কামব্যাক করেছে ৩-১ এ জিতে। ডি গিয়া, পগবা , লুকাকু আর রাশফোর্ডদের দিয়ে গড়া দলকে হারানো কঠিনই হবে চ্যাম্পিয়নস লীগে ফেবারিট হিসেবে ধরা বার্সেলোনার জন্য। অপর দিকে মেসি নির্ভর হয়ে পড়া বার্সেলোনা ততটা নির্ভার থাকতে পারছে না। সুয়ারেজ, কৌতিনহোর অফ ফর্ম ডাম্বেলের ইঞ্জুরি ভাবিয়ে তুলছে কোচ এরনেস্তো ভালভার্দেকে। গোল করা ক্ষেত্রে সবাই মেসি নির্ভর হয়ে যাওয়ায় ইউনাইটেডের জমাট রক্ষণে ভুগতে হবে বার্সেলোনাকে। তবে বার্সা সমর্থকদের আশা দেখাচ্ছে গোল বারের নিচে টের স্টেগানের অতিমানবীয় পারফর্মেন্স আর ডিফেন্ডারদের ফর্মে থাকা।
নিঃসন্দেহে কোয়ার্টার ফাইনালের সেরা একটি ম্যাচ হতে যাছে এটা।
টটেনহাম হটস্পার্স বনাম ম্যানচেস্টার সিটি
গত কয়েক সিজনে পানির মত টাকা ঢালছে ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনে লীগ জেতার পর এবার চোখ চ্যাম্পিয়নস লীগে। বার্সেলোনার হয়ে স্বপ্নের মত সময় কাটানোর পর চ্যাম্পিয়নস লীগ ট্রপি আর জেতা হয়নি গার্দিওলার । বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগে ব্যর্থ সময় কাটানোর পর সিটিতে এসেও সুবিধা করতে পারছে না। পছন্দের সব প্লেয়ার কিনে দল সাজিয়েও লাভ হয়নি কিছুই। কোয়ার্টার আর সেমিতেই যাত্রা থেমে যাচ্ছে। তবে এবার অন্য এক ম্যান সিটিকে দেখা যাচ্ছে। গার্দিওলার পজেশন নির্ভর সিস্টেমের সাথে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের গতির সংমিশ্রণ ম্যান সিটিকে করে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য। জমাট রক্ষণ ডমিনেটেড মিড ফিল্ড আর উইংয়ে গতির ঝড় তুলে ফরোয়ার্ডরা গোলের বন্যা বয়িয়ে দিচ্ছে। ডি ব্রুইনে, সানে, জেসুসদের সাথে ইপিএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা সার্জিও আগুয়েরো প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে যেকোন ম্যাচেই।
অপর দিকে টটেনহাম হটস্পার্স তাদের নতুন স্টেডিয়ামের ফান্ড সংগ্রহের তাগিদে এই সিজনে কোনো প্লেয়ারই কেনেনি। স্কোয়াড ছেড়ে চলে গেছে কয়েকজন। স্কোয়াড ডেফথ এ কিছুটা ঘাটতি থাকার পরও কোচ পচেত্তিনো ভালোভাবেই সব ঘুচিয়ে নিয়েছে। আধুনিক ট্যাকনিকাল ফুটবলকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে ভয়ংকর একটা দল। হ্যারি কেইন, এরিকসনদের দিনে অপ্রতিরোধ্য এক দল। এবারের চ্যাম্পিয়নস লীগের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ গুলোর একটি ধরা হচ্ছে এই ম্যাচকে।
আয়াক্স বনাম জুভেন্টাস
রিয়াল মাদ্রিদকে শেষ ১৬ থেকে বিদায় করে ইতিমধ্যে ইতিহাস গড়া হয়ে গেছে ডাচ ক্লাব আয়াক্সের। ডি জং, ডি লাইটের মত তরুণ তারকারা আলো ছড়াচ্ছে পুরো সিজন জুড়ে। যাদের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দলে ভিড়াতে নজর দিয়েছে ইউরোপের বড় বড় ক্লাব গুলো। প্রতিভার কোনো অভাব নেই এই দলটাতে। রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসা দলটি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কোচ এরিক টেন হ্যাগ নিজের দিনে এই দল নিয়ে হারিয়ে দিতে পারে যে কাউকেই। তাই টানা সাতবার ইটালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের শিরোপার পথে এগিয়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ হবে না তা বলাই যায়।
ইটালির মিলান শহরের দুই বড় দল এসি মিলান আর ইন্টার মিলান অনেক আগেই হারিয়েছে তদের আধিপত্য। নাপোলিও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না জুভেন্টাসকে। টানা সাতবার লীগ জিতে জুভেন্টাস ঘরোয়া লীগে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে। তাই গত কয়েক সিজন ধরে তাদের চোখ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে। শেষ দুইবার ফাইনাল খেলেও শিরোপা হাতে তোলা হয়নি। গত শতাব্দিতে চ্যাম্পিয়নস হওয়ার পর আবার ইউরোপ সেরার মুকুট জিততে মরিয়া ইতালিয়ান জায়ান্টরা। আর তাই গত কয়েক সিজনের তাদের সবচেয়ে বড় বাধা রোনালদোকে মাদ্রিদ থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে। শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগে এতলেটিকো মাদ্রিদের সাথে অতিমানবীয় পারফর্ম করে রোনালদো বুঝিয়ে দিয়েছে জুভেন্টাস সঠিক লোককেই বেচে নিয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন তাই দেখতেই পারে জুভেন্টাস ভক্তরা।
লিভারপুল বনাম পোর্তো
পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তো কাঠখড় পুড়িয়ে উঠে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। প্লে-অফে ভালোভাবে পার হলেও শেষ ১৬’র লড়াইয়ে এএস রোমার সাথে ঘাম ঝড়িয়েই জিততে হয়েছে। ৪-৩ এগ্রিগেটে এগিয়ে উঠে আসে কোয়ার্টারে।
গতবার চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় লিভারপুলের। দীর্ঘ সময় শিরোপা ক্ষরায় কাটানো লিভারপুল সমর্থকরা ক্লপের হাত ধরে শিরোপা জিততে মরিয়া। ক্লপের হেভি-মেটাল ফুটবল আশা দেখাচ্ছে ভক্ত সমর্থকদের। সালাহ, সাদিও মানে আর ফিরমিনো ত্রয়ি বর্তমানে ইউরোপের সবচেয়ে ডেডলি ত্রয়ি গুলোর একটি। চ্যাম্পিয়নস লীগের আরেক দাবিদার বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে উঠে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ক্লপের হাত ধরে সুন্দর ফুটবল খেলা লিভারপুলের জন্য পর্তুগিজ ক্লাব কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে তাই দেখার বিষয়।
সিজনের এই পর্যায়ে এসে এখনো বলা যাচ্ছে না কে জিততে পারে এইবারের চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা। সেমি-ফাইনালের জন্য অন্যতম ফ্রেভারিট ধরা হচ্ছে বার্সেলোনা, জুভেন্টাস, লিভারপুল আর ম্যান সিটিকে। তবে ছেড়ে কথা বলবে না অন্য দল গুলোও। প্রত্যেকটা দলের জন্য শিরোপা জয়ের পথটা কঠিন হবে তা বলাই যায়।