তিন তরুণের বাংলা প্রোগ্রামিং
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি
বাংলাভাষী শিশুদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে একদল বাংলাদেশী প্রোগ্রামার এবার সম্পূর্ণ বাংলায় লেখা প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেছেন। ‘পতাকা’ নামের এ প্রোগ্রামিং ভাষাটি তৈরির জন্য নরওয়েজিয়ান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি টেলিনরের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইকরাম হোসেইন একত্রিত হন অন্য দুই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ওসমান গনি নাহিদ ও রাকিব হাসান অমিয়র সঙ্গে। এক ইমেইল ইন্টারভিউয়ে গ্লোবাল ভয়েসকে ইকরাম বলেন, কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে তা থেকে পতাকা তৈরির ধারণা পান তিনি।
ইংরেজিভাষী নয় এমন অনেক দেশেরই যেমন— ফ্রান্স, চীন ও জাপানের রয়েছে নিজস্ব প্রোগ্রামিং ভাষা। কিন্তু ২০ আগস্ট ২০১৬-এর আগে বাংলাদেশের এমন কিছুই ছিল না। অথচ ব্যবহারকারীদের হিসাবে পৃথিবীতে বাংলার অবস্থান ষষ্ঠ। পতাকাই প্রথম স্থিতিশীল বাংলা প্রোগ্রামিং ভাষা। এর আগে অবশ্য ২০১৪ সালে চা স্ক্রিপ্ট দিয়ে একই ধরনের একটা চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা কাজ করেনি।
ইকরাম শুরুটা করেন নিজের ব্লগ-এর প্রোগ্রামিংয়ের টিউটোরিয়াল লেখার মাধ্যমে। কিন্তু একটা সময় তিনি বুঝতে পারলেন যে, সেগুলো প্রোগ্রামিং যারা নতুন বা শিশুদের উপযোগী নয়। তার মতে শিশুরা যদি অল্প বয়স থেকেই প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করে তবে পরবর্তীতে তারা বাংলা প্রোগ্রামিং সম্প্রদায়কে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে। তিনি পতাকা নির্মাণ শুরু করেন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। তিনি যে সময় নিজে নিজে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন তখন তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। গ্রামের ছেলে হওয়ায় তার এবং তার মতো অন্যান্য অনেক ছাত্রের ইংরেজি ভাষার ওপর দখল কম থাকার কারণে অনলাইনের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিং শিখতে তাকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। অনলাইনের প্রায় সবই ইংরেজিতে, সেখানে বাংলায় কিছু নেই বললেই চলে। ইকরাম মনে করেন, বাংলাভাষীদের জন্য প্রোগ্রামিং শেখার সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে এটাই, নিজের মাতৃভাষায় প্রোগ্রামিং শেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকা এবং জটিল এক জগতে জড়িয়ে পড়ার ভয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ার পূর্বশর্তটা যদি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে তিনি আশা করেন, বাঙালি শিশুরা কিছুটা ভয় কাটিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলায় প্রোগ্রামিংয়ের স্বাদ নিতে পারবে।
পতাকার কাঠামো তৈরির সময় ইকরাম অনেক লোকের সঙ্গে গবেষণা করে দেখেছেন— যারা প্রোগ্রামিং সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তিনি তাদের ইতোমধ্যে বর্তমান এমন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা, ঈ, দেখান আর তার সঙ্গে পতাকার পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর তুলনা করেন। যার ফলস্বরূপ তিনি পতাকার শব্দবিন্যাস নতুনদের জন্য যতটা সম্ভব সহজ রাখতে পেরেছেন। এছাড়াও পতাকাতে ছোটদের প্রবেশযোগ্যতা ও আগ্রহ বাড়াতে সেখানে বিভিন্ন কৌতুক ও খেলার সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দুর্লভতা বিবেচনা করে পতাকা পরবর্তীতে একটি অফ-লাইন ডেস্কটপ সংস্করণ বের করবে— যেটা ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও ব্যবহার করা যাবে। তাদের স্বপ্ন হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্ররাও যাতে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। তবে তারা এটা জানে যে, এর জন্য আরো অনেক লোককে তাদের সঙ্গে আসতে হবে।
ইকরাম এটাও বলেন যে, পতাকা নিয়ে সমস্ত সমস্যার সমাধান আমি নিজে নিজে করতে পারব না। সেজন্যই তিনি চেষ্টা করেছেন পতাকাকে কেন্দ্র করে একটি সমাজ গড়ে তুলতে। সে উদ্দেশ্যেই পতাকাকে শুরু থেকেই ওপেন-সোর্স রেখেছেন তিনি। এছাড়া প্রাথমিক উত্সাহে ভাটা পড়লেও যাতে পরবর্তীতে পতাকা টিকে থাকতে পারে তার জন্য পতাকা-কেন্দ্রিক একটা সমাজ থাকা জরুরি। বর্তমানে তিনি নিজের বেতনের এক-তৃতীয়াংশ পতাকার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করছেন, কিন্তু তিনি জানেন এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে পতাকা। বর্তমানে ইন্টারনেটের পুরো কাঠামোটাই যখন লাতিন ভাষার মুখাপেক্ষী, তখন পতাকা যেন নতুনের গান গাইছে। পতাকা লাতিন ভাষায় লিখিত নয় এমন আরো দুটো প্রোগ্রামিং ভাষা আরবি ও জাপানিজ লেখার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
পতাকা এখনো বেটা ১.০ ভার্সনে রয়েছে। চাইলে ভাষাটি potaka.io ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পারেন। ওয়েবসাইটটিতে সিনট্যাক্স হাইলাইটিং সমৃদ্ধ এডিটর, বিল্ট-ইন অভ্র টাইপিং ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ করার সুবিধা আছে। ইকরাম বলেছেন, আরেকটু স্থিতিশীল একটি সংস্করণ বের করার পর আমরা সবার থেকে কোড নেয়া শুরু করব। তার আগ পর্যন্ত সবাইকে ভাষাটি ব্যবহার করতে এবং প্রক্রিয়া জানতে উত্সাহিত করেছেন তিনি।
1 Comment on this Post
DebrajCode
wow nice information