বিজয়ী ৫ গেম

বিজয়ী ৫ গেম

  • বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক

বিশ্বে বিলিয়ন ডলারের মোবাইল গেমসের বাজার। আর এসব গেমস তৈরি করছে তরুণরাই। দেশের তরুণদের মাঝেও গেম ডেভেলপার হওয়ার একধরনের ঝোঁক তৈরি হয়েছে। আর এই ঝোঁককে উৎসাহ দিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের শীর্ষ টেলিফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন ও হোয়াইট বোর্ড আয়োজন করে ‘গেম জ্যাম’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা। দেশের গেম ডেভেলপারদের জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে গ্রামীণফোন ও হোয়াইট বোর্ড। প্ল্যাটফর্মটির উদ্দেশ্য দেশের বাজারের উন্নয়নের সঙ্গে বিশ্বমানের গেম তৈরি করা। এ লক্ষ্যে গ্রামীণফোন ও হোয়াইট বোর্ডের আয়োজনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো ‘গেম জ্যাম’। গত ২৯ এপ্রিল দিনব্যাপী বুট ক্যাম্প এবং ৭ ও ৮ মে টানা ৩৬ ঘণ্টার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ২৫টি দল। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শেষে সেরা পাঁচটি গেমের আইডিয়া বেছে নেয় বিচারকরা। এগুলো হলো_ ইনফেক্টেড, গলি ক্রিকেট, নকশি, গেম স্কেচ জার্নি ও শব্দ। প্রথমবারের এ আয়োজনে পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা করেছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। আইডিয়াগুলো নিয়ে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে নতুন গেম উন্মোচন করবে গ্রামীণফোন।


ইনফেক্টেড
ইনফেক্টেড মূলত একটি অ্যাকশনধর্মী গেম। এটি তৈরি করেছে টিম রিবুট। এক বিজ্ঞানী ঢাকায় বসে একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস তৈরি করেন, যা ছড়িয়ে দিতে থাকেন কিছু মানুষের মাধ্যমে, যা মানবজাতির জন্য খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে শুরু হয় লুটপাট। এ অবস্থায় দেশকে আর দেশের জনগণকে বাঁচাতে হবে। গেমটিতে প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকাকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুলশান, ধানমণ্ডি, বসুন্ধরা এবং যমুনা ফিউচার পার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখানে আক্রমণ হতে পারে। এখানে গেমার একক এবং যৌথভাবে খেলতে পারবে। গেমটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেন নেওয়া যায়, সেভাবেই সাজানো হয়েছে। একজন ভাইরাস-আক্রান্ত ব্যক্তি লোকালয়ে এলে, আর একজনকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই ভাইরাস-আক্রান্তদের গুলি করে মারতে হবে গেমারদের। এভাবেই সে ধাপগুলো অতিক্রম করতে থাকবে। আর যত বেশি মারতে পারবে, তত বেশি স্কোর। ছয় সদস্যের এ দলে আছেন_ রেজাউল হাসান ইভান, জিসান হায়দার জয়, মেহরাজ মারুফ, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইমদাদুল হক ও সৈকত আজাদ। তারা সবাই ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। দলটির একজন সদস্য রেজাউল হাসান ইভান বলেন, এ ধরনের আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। এতদিন শুধু নিজ উদ্যোগে গেম তৈরি করেছি। পুরোটাই যেন শখের বিষয়। এবার তা ব্যবসায়ী চিন্তায় রূপান্তরিত হতে পারবে। এ ধরনের উদ্যোগ আন্তর্জাতিকমানে গেম ডেভেলপার তৈরিতে সহায়ক হবে।

বাংলা শব্দ বানান নিয়ে আমরা তেমন একটা মাথা ঘামাই না। ভিনদেশি ভাষার মিশ্রণে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক শব্দ। বাংলা শব্দকে পুনর্জীবিত করতে এবং শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি করতে ভিন্ন আঙ্গিকে একটি গেম নিয়ে এসেছে অনিরুদ্ধ পৃথুলের দল। তাদের দলে আরও রয়েছে মুশফিকা ফারিয়া নোভা এবং লাবিব ইসমাম খালিদ। ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে গেম তৈরিতে কাজ করছেন পৃথুল। সুযোগ পেলে আরও ভালো গেম উপহার দিতে চান তিনি। এটা মূলত একটি পাজল গেম। খেলাটি বাংলা শব্দ শেখার জন্য উৎসাহিত করবে আপনাকে। বর্ণ দিয়ে অর্থবোধক শব্দ তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আর স্কোরবোর্ডে যুক্ত হবে একটি করে পয়েন্ট।

স্কেচ জার্নি
যারা আঁকতে পছন্দ করে, তাদের জন্য দারুণ একটি গেম নিয়ে এসেছেন আরাফাত হোসেন এবং রাশেদ-উজ-জামান। গাড়ির গেম সবসময় সবার কাছে পছন্দ। তবে তার সঙ্গে আঁকাআঁকি যুক্ত হতে পারে। এটা অনেকেই চিন্তা করতে পারছেন না। তবে আপনার চিন্তার অবসান করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ গেম জ্যামে জয়ী আনইকুয়াল সোলজার্সের গেম মুক্তি পেলেই পাবে অপেক্ষার পূর্ণতা। স্কেচ এবং আর্টকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করছেন মোবাইল গেম স্কেচ জার্নি। এ গেমে খেলোয়াড়কে একটি গাড়ি চালাতে হবে। তবে গাড়ি চালাতে গিয়ে ওই খেলোয়াড়ের একটি অপশন থাকবে। তা হলো, তিনি ইচ্ছা করলে রাস্তা স্কেচ করে তার গাড়িটি সামনের দিকে নিতে পারবেন। এটি খেলতে গেলে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। একটি গাড়ির সঙ্গে ট্রাভেল করা এবং অন্যটি নিজের রাস্তা নিজেই স্কেচ করা।

গলি ক্রিকেট
মাঠের অভাবে কি আর খেলা বন্ধ থাকে? এখন তাই শহরের একটু নীরব গলিগুলো জমে ওঠে ক্রিকেট উন্মাদনায়। গলির এ ক্রিকেটকে ভিডিও গেমের মাধ্যমে তুলে এনেছে ভুতুমপেঁচা। এটি গেম জ্যামে জয়ী হওয়া আর একটি দল, যাদের গেমের নাম ‘গলি ক্রিকেট’। এটি মূলত একটি থ্রিডি গেম। এখানে একজনই শুধু খেলতে পারবেন। তবে চাইলে স্কোরের ভিত্তিতে আপনার বন্ধুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন। এর জন্য তাকে ইনভাইট করে খেলতে হবে। নিজের ব্যাডিংয়ের মাধ্যমে হয়ে উঠতে পারেন ‘গলির রাজা’। বিভিন্ন জেলার দশটি গলি সিলেক্ট করতে হবে। আর সর্বোচ্চ গলিতে নিজের পারফরম্যান্স দেখিয়ে মাস শেষে হয়ে উঠতে পারেন গলির রাজা। প্রথম পর্যায়ে শুধু ঢাকা অন্তর্ভুক্ত হলেও, পরে অন্য জেলাগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। এখানে একজন ব্যাটসম্যান তার পছন্দমতো গলির রাস্তায় খেলার সুযোগ পাবেন। খেলোয়াড় ভিন্ন ভিন্ন ডিরেকশন থেকে আসা বল খেলে তার রানের স্কোর বাড়াতে পারবেন। গেমটি তৈরির ধারণা এসেছে, দেশের ক্রিকেটপাগল জনগণ যেখানে যে অবস্থায় পারে ক্রিকেট খেলে। সৈয়দ মুন্সি হাসনাতের নেতৃত্বে দলটিতে রয়েছে রফিকুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, গোলাম মোস্তফা এবং রিয়াসাত আজিম খান, যারা গেমের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন। তবে দলটির সূচনা হয় প্যাচেস গেম স্টুডিও থেকে, যার পদচারণা শুরু হয় ২০১৩ সালে। সেই থেকে দেশি গেম নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া তারা আরও তিনটি গেম নিয়ে কাজ করেছে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এখনও সমাদৃত হয় নকশিকাঁথা। গ্রামের মেয়েরা নকশার মাধ্যমে তাদের আনন্দ-দুঃখ-বেদনাকে তুলে ধরে। তবে দিন দিন এ নকশিকাঁথার প্রচলন কমে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার অনেক বড় একটি শিল্প। এই নকশিকাঁথাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চান ইমরান উল হক। নিজেও পছন্দ করেন গেম খেলতে। আর কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী হওয়ায় বিষয়টির ওপর অনেকটাই ধারণা রয়েছে তার। গেম খেলতে গেলে তিনি দেখতেন দেশীয় সংস্কৃতি বা প্রেক্ষাপটে কোনো গেম নেই। আবার অ্যাকশনধর্মী গেম খেলতে গেলে মোবাইলের পারফরম্যান্সও ভালো হওয়া চাই; কিন্তু তাহলে তো সবার জন্য গেম খেলার সুযোগ থাকল না। তাই তিনি চিন্তা করলেন এমন একটি গেম তৈরির, যা কমদামি ফোনে খেলা সম্ভব। একই সঙ্গে অ্যাকশনধর্মী ও দেশীয় সংস্কৃতির মিশেল থাকতে হবে। তাই গেম জ্যামে নিয়ে এসেছে ভিন্নধর্মী গেম নকশি। গেমটি কিছুটা অ্যাকশনধর্মী আবার তার সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যর ছোঁয়া। শ্যাডোলিট নামের এ দলের সদস্য একজনই। গেমটিতে খেলোয়াড়কে একজন ঐতিহাসিক সৈনিক হিসেবে তার শত্রুদের হত্যা করতে হবে। আর যখনই তিনি শত্রু হত্যা করতে যাবেন, তখন তাকে নকশিকাঁথার মতো পথ ধরে কাজ করতে হবে। গুপ্তধন খোঁজার ধারণা থেকেই এ গেম তৈরি করা হচ্ছে গেম জ্যামে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment