গুগলের পাওয়ার হাউজ ইউটিউব
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক ডেস্ক
বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ‘ইউটিউব’। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক তিন পেপাল কর্মীর হাত ধরে যাত্রা করে সেবাটি। তবে যাত্রার দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই ২০০৬ সালের নভেম্বরে ইউটিউব অধিগ্রহণ করে গুগল। সেই থেকে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এখন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ইউটিউব। একই সঙ্গে গুগলের রাজস্বে ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে প্লাটফর্মটি। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে ইউটিউবকে গুগলের জন্য একটি পাওয়ার হাউজ মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেছে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন। এতে দেখা যায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন রাজস্ব ৬৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন রাজস্ব ছিল ৪৭০ কোটি ডলার।
সামগ্রিকভাবে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের রাজস্ব এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৬৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে গুগলের ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিজ্ঞাপন রাজস্বের ১৫ শতাংশই এসেছে ইউটিউব থেকে।
এ বিষয়ে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) রুথ পোরাট বলেন, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে সার্চ সেবা এবং ইউটিউব প্লাটফর্ম। কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে গত বছরের শুরুর দিকে সার্চ সেবার চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে ইউটিউব, যা অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের বিজ্ঞাপন রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
এ বিষয়ে গুগল ও গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই বলেন, গত বছর পাঁচ লাখের বেশি চ্যানেল লাইভ স্ট্রিমিংয়ে গেছে। ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অসংখ্য আর্টিস্ট বাসায় থেকে লাইভ পারফরম্যান্স স্ট্রিমিং করেছে। গত বছর অনেক চার্চ তাদের কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তরে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বজুড়ে নতুন ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততা সার্চ সেবা ও ইউটিউব প্লাটফর্মের বিজ্ঞাপন রাজস্ব বাড়িয়েছে।
গত বছর শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী সেবা আনার ঘোষণা দেয় গুগল। এরই অংশ হিসেবে ইউটিউবে ‘শর্টস’ নামে একটি প্লাটফর্ম চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। শর্টস প্লাটফর্মে টিকটকের মতো ছোট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করার সুবিধা রয়েছে। ঠিক যেমন টিকটকের জন্য করতে হয়। গানের সঙ্গে ভিডিও বানানোর সুবিধাও রয়েছে শর্টসে। টিকটকের সঙ্গে টেক্কা দিতেই ইউটিউবের আওতায় শর্টস চালু করা হয়।
সুন্দর পিচাই বলেন, টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইউটিউবের শর্টস দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন শর্টস প্লাটফর্মে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ভিডিও দেখা হচ্ছে। চলতি বছর শর্টস প্লাটফর্মের কার্যক্রম বিশ্বের আরো কিছু দেশে চালু করা হবে।
শর্টস ছাড়াও নিজেদের প্লাটফর্মে ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে গুগল একটি নতুন ফিচার আনতে চলেছে। এ ফিচারের মাধ্যমে গুগলের বিভিন্ন সেবায় ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্লাটফর্মগুলোর ভিডিও কনটেন্ট দেখা যাবে। এরই মধ্যে ফিচারটি সীমিত আকারে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, কয়েক বছর ধরে গুগল ভিডিও কনটেন্টের জন্য সূচি তৈরি করছে। তবে এক্ষেত্রে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা টিকটকের সঙ্গে গুগলের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বা চুক্তি রয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।
গুগলের মতে, ফিচারটি মোবাইল ডিভাইসে পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা মোবাইল ডিভাইসের জন্য গুগল অ্যাপ এবং মোবাইল ওয়েবে সীমিত পরিসরে পাওয়া যায়।
‘শর্ট ভিডিওস’ গুগল ডিসকভার পেজের ‘ওয়েব স্টোরিজ’ ফিচার থেকে আলাদা। এটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজ ও স্ন্যাপচাটের মতো একইভাবে কাজ করে। স্টোরিজের ক্যারোসেল ওয়েবে থাকা সেরা কিছু ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে টেক জায়ান্টটি আরো বেশি দেশ ও গুগল পরিষেবাগুলোতে ওয়েব স্টোরিজ বিস্তৃত করতে চায়।
সূত্র: বণিক বার্তা