সাক্ষাৎকার : সাফল্যের মূল সূত্র সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক
- লিডারশিপ ডেস্ক
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইয়ের সভাপতি নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। ১৯৮১ সালে যখন নিটল মটরসের যাত্রা শুরু হয় তখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল স্বামী-স্ত্রী মিলে চারজন। অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট আবদুল মাতলুব আহমাদ নিজে জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করতেন আর তার স্ত্রী সেলিমা আহমাদ সেগুলো বিক্রি করতেন। সেখান থেকে শুরু। আজ নিটল-নিলয় গ্রুপে সাত হাজার কর্মী কাজ করছেন। তিনি কীভাবে শুরু করলেন, কীভাবে ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটিকে বৃহৎ কোম্পানিতে পরিণত করলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি তার পরামর্শ, মাতলুব আহমাদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের হালচাল- এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন এই সাক্ষাৎকারে।
: আপনি দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট। আপনার ক্যারিয়ারের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
মাতলুব আহমাদ : ১৯৭০ সালে স্কলারশিপ নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাই। সেখানে ইকনমিক্স অনার্সে ভর্তি হই। ১৯৭৬ সালে মাস্টার্স শেষ করি। যখন অক্সফোর্ডে পড়ি দেশ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। অনেক দেশ আমাকে চাকরির অফার দিয়েছিল, কিন্তু ভেবেছিলাম নতুন স্বাধীনতা পাওয়া দেশ, এ দেশকে আমাদেরই গড়তে হবে। এসব ভেবে আমি লেখাপড়া করে সোজা দেশে চলে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। পড়াশোনা করা অবস্থায়ই আমি ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসায় প্রথম থেকেই আমার শিক্ষা ও বুদ্ধি দিয়ে প্রোডাক্ট গ্যাপগুলো খুঁজে বের করেছি। এই মুহূর্তে দেশে কোনটা প্রয়োজন সে পণ্য নিয়ে এসেছি। তখন ব্যবসা ছিল ফুলফিলমেন্ট অব প্রোডাক্ট গ্যাপ। আমার নীতি ছিল, আজ যদি রসুনের ঘাটতি হয় তবে কালই আমি রসুন আমদানি করব, পরশু বাজারে দেব। এভাবে আমি শরটেজ মিট করতাম। এতে পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা আসত। আমাদের লাভ হয়েছে, দেশেরও লাভ হয়েছে। পরে আমরা টাটার সঙ্গে জয়েন্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে গেছি। তারপর ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছি।
 : আপনার সফলতার পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?
: আপনার সফলতার পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?
মাতলুব আহমাদ : আমানতদারি, বিশ্বস্ততা। ‘অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি’। মনে রাখতে হবে, আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক টাকা নিয়ে ব্যবসা করি। ব্যবসায় লস করেছি, কিন্তু ব্যাংকের কাছে কোনো দিন মাফ চাইনি। আমি যদি লসও করে থাকি, অন্য ব্যবসা থেকে হলেও ব্যাংকের টাকা সবসময় আমি সময়মতো শোধ করে দিই। এভাবে ব্যাংক যদি আপনার বন্ধু হয়ে যায়, তাহলে যে কোনো পরিমাণ লোন আপনি পেতে পারেন। আমি মনে করি, উদ্যোক্তা হিসেবে আমার সাফল্যের মূল সূত্র হল দৃঢ়তা, স্বপ্ন দেখা, সব চ্যানেল পার্টনার যেমন- ব্যাংক, সরকার, যাদের সঙ্গে ব্যবসা করছি তাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।
: আপনার ভিশন কি?
মাতলুব আহমাদ : দেশকে শিল্পায়িত করা আমার ভিশন। বাংলাদেশ অচিরেই মালয়েশিয়ার মতো উন্নত হবে, সেই স্বপ্ন দেখি আমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই আমরা সমৃদ্ধশালী দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারব।
: তরুণদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
মাতলুব আহমাদ : তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, চাকরির জন্য বসে না থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ব্যবসায় ঢুকে পড়। কেননা চাকরিপ্রার্থীর অনুপাতে বর্তমানে দেশে চাকরির সংখ্যা অনেক কম। বর্তমানে বিনিয়োগের সেরা জায়গা পেট্রোক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। টেক্সটাইল মিলে জায়গা আছে। লেদার শু ইন্ডাস্ট্রি, ডাইভারসিফিকেশন অব এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং প্লান্ট, প্লাস্টিক কাঁচামাল প্লান্ট, বিটুমিন প্লান্ট হল বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় জায়গা। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আমার পরামর্শ, সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করো। কঠোর পরিশ্রম করো, তবে স্মার্টলি। নির্ভয়ে বিনিয়োগ করো, তবে বিচক্ষণতার সঙ্গে। ভুলগুলো নির্মমভাবে পরিত্যাগ করো, তবে সুকৌশলে। তোমার কাছে যদি একটি পণ্য বা সেবা থাকে যা বাজারের গ্যাপ পূরণ করবে, এটাই তোমার উদ্যোক্তা হওয়ার সেরা সময়।
: আপনি বলেছিলেন দেশে প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি করবেন। এক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি হল?
মাতলুব আহমাদ : শুধু ঢাকা চট্টগ্রামে নয়; দেশের ৬৪ জেলায় শিল্পায়নের কথা আমি বলেছি। এফবিসিআই’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলা চেম্বারগুলোকে আমি সে লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করছি। দেশে প্রচুর পরিমাণে শিল্পোদ্যোক্তা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সব সাপোর্ট দিচ্ছি। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ৫টি দেশ থেকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে পার্টনারশিপ জোগার করে দিয়েছি, যাতে নতুন উদ্যোক্তারা সহজে ব্যবসা করতে পারে। আমি চাই বাংলাদেশ বিনিয়োগের তীর্থ ভূমি হিসেবে তৈরি হোক। যাতে দেশী-বিদেশী নতুন নতুন উদ্যোক্তা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠে।
: আপনার হাতে গড়া নিটল নিলয় গ্রুপ সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশে ছোট্ট করে যদি কিছু বলতেন–
মাতলুব আহমাদ : কয়েকটি কোম্পানির সমন্বয়ে নিটল নিলয় গ্রুপ। এর মধ্যে রয়েছে- নিটল মটরস লিমিটেড, নিলয় মটরস লিমিটেড, সিলেট পেপার মিল, নিটল সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, নিলয় সিমেন্ট, নিটল সুগার মিলসহ নিটল নিলয় গ্রুপে প্রায় ত্রিশটি কোম্পানি রয়েছে। দেশের ৫৬টি জেলায় আমাদের অফিস রয়েছে। এগুলোতে প্রচুর জনবল কাজ করছে।
 : নিটল নিলয় গ্রুপে কি পরিমাণ জনবল কাজ করছে?
: নিটল নিলয় গ্রুপে কি পরিমাণ জনবল কাজ করছে?
মাতলুব আহমাদ : সাত হাজার কর্মী কাজ করছে। ৪ হাজার ৮শ’ জনের মতো শুধু স্টাফ। সবচেয়ে বেশি জনবল কাজ করছে অটোমোবাইল বিজনেসে। এছাড়া কোম্পানির প্রয়োজনে বছরের বিভিন্ন সময়ে ডেইলি বেসিসে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়।
: বিভিন্ন সেক্টরে বছরে কি পরিমাণ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়?
মাতলুব আহমাদ : চাহিদা অনুযায়ী বছরে অন্তত ৫শ’ থেকে ৭শ’ নতুন লোকবল নিয়োগ দেয়া হয় নিটল নিলয় গ্রুপে। সবচেয়ে বেশি লোকবল নিয়োগ দেয়া হয় অপারেশন ডিভিশনে। এখানে সেল্সে এবং ক্রেডিট রিকোভারিতে এ নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া অ্যাকাউন্টস, মানবসম্পদ বিভাগ, পাবলিক রিলেশনস, অ্যাডমিনসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়।
: এখানে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের কতটা সুযোগ দেয়া হয়?
মাতলুব আহমাদ : নিটল নিলয় গ্রুপে এন্ট্রি লেভেলে বেশিরভাগই ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ দেয়া হয়। তরুণদের মেধা ও ইনোভেশনকে কাজে লাগাই আমরা। ফ্রেশারদের নিয়োগে মোটাদাগে তাদের অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি-রেজাল্ট, প্রেসেন্টেশন স্কিল, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, ব্যক্তিত্ব, মানসিক দক্ষতা-বিশেষ করে সমাজের সব শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা আছে কিনা সেটি দেখা হয়। এছাড়া কমিউনিকেশন স্কিল, কনভিন্সিং পাওয়ার, কাজের প্রতি আগ্রহ আছে কিনা কিংবা পরিশ্রম করার মানসিকতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	