নারী পুরুষ সমতা কতদূর?
- আফরিদা ইফরাত
সমগ্র বিশ্বজুড়েই নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। হ্যাঁ, বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে নারীরা অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সচেষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু আদপে নারী-পুরুষ সমতা কতদূর এগিয়েছে? পুরো চিত্রটুকু ভালোভাবে এবং স্পষ্টভাবে না দেখলে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারব না।
প্রথমত বাংলাদেশ নারী-পুরুষ সমতা নামক সূচকগুলোতে সবসময় এগিয়ে ছিল। এমনকি ২০১৭ এর একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৮ তম। এটুকু বোঝা অসম্ভব না যে এই সূচক মূলত কর্মক্ষেত্রের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রধানত গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ থেকেই এই সমীক্ষায় সমতার পরিমাপ নেয়া হয়েছিলো বলে আমার ধারণা। কিন্তু সে সমীক্ষার চার বছর পর আমরা কি চিত্র দেখি?
করোনাকালীন পরিস্থিতি আমাদের সকলের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে। সমাজ, জীবনযাত্রা, রাজনীতি, যাপিত জীবন এবং বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে করোনা। আর অর্থনীতি এবং জীবন-ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসলে নারী-পুরুষ সমতার সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই না। বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকে যখন প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক খোলা থাকে।
আসুন শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বাদ দিয়ে চিন্তা করি। বাংলাদেশ এখন নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী। এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা-মা এখন সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর কথা চিন্তা করেন। এমনকি মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের যত্নও লক্ষ্য করার মতো। ফলশ্রুতিতে, শিক্ষাজীবন পরিসমাপ্তি শেষে তারা নিজেদের কর্মপদ্ধতি বেছে নিতে পারে। কিন্তু একথাও সত্য যে করোনাকালীন পরিস্থিতির আগেই বাংলাদেশে প্রায় ৫৮ শতাংশ ছেলে-মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতি অবশ্যই সেই শতাংশ আরো বৃদ্ধি করবে।
তাই যারা শিক্ষার সুযোগ পায়নি তাদের ক্ষেত্রে সমতার পরিমাপক কি? সমতার প্রশ্নে আমরা সবসময় শিক্ষাগত অগ্রগতি, নারীর মূল্যায়ন, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিয়ে বড়াই করি। অর্থাৎ আমাদের পরিমাপকগুলো মূলত নির্ভর করে বিকাশমান নারী জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ যারা নিরক্ষর, বৃদ্ধা, অথবা এখন বিভিন্ন পর্যায়ে গৃহবন্দি – তাদেরকে আমরা একটি পরিস্থিতিতেই আটকে রাখতে পেরে স্বস্তি পাই।
তাই নারী পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে বিচারগত যে শূণ্যতা, সেটুকু ভাবলেই কিছুটা চিন্তিত হতে বাধ্য সকলে। নারীকে গৃহবন্দি থাকতে হয়। নারীরা অবশ্য এখন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়ে উঠছে। অন্তত সমাজের এই শিক্ষাগত বা ভাবনাগত পরিবর্তনও নারীকে প্রেরণা জোগায়। অন্তত সে নিজের উপর আস্থা রেখে বলতে পারে, “আমার ব্যবস্থা আমি করে নিব।” এই ভাবনাটুকুও একটি বড় প্রাপ্তি আমাদের সমাজের গাঠনিক ভিত্তির কথা বিচারে।
আইনগতভাবে এবং কর্মক্ষেত্রের ভিত্তিতে নারীরা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিণতিতে সেসকল কিছুই নারীর প্রতি বৈষম্য হ্রাস করতে পারেনি। এখন বৈষম্য বলতে আমরা কি বুঝব? মূলত মানসিকতার স্তরায়নকেও আমরা বৈষম্য বলতে পারি। নারীকে সমীহ এবং শ্রদ্ধা করার মানসিকতা না রাখাও এক প্রকার বৈষম্যই বলা চলে। নারীরা এমন অসংখ্য বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একথা ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের বিশাল একটি নারীগোষ্ঠী মূলত তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল। বিশেষত যাদের স্বামী প্রবাসে কাজ করে। তাই অধিকাংশ নারী এখনো গৃহবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও আমাদের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়। করোনা পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস শিল্পে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করেছে। মূলত নারীরা কায়িক পরিশ্রম খুব বেশি করতে পারেনা বিধায় পুরুষদের আবেদন বেড়ে যায়। তাই গার্মেন্টস শিল্প বা অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও পুরুষ অংশগ্রহণ বাড়ছে।
নারী পুরুষ সমতা কতদূর তা বলা এখনো মুশকিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে এখনো আমরা বলতে পারিনা যে, সমতার মাত্রাটুকু এখনো আশাপ্রদ নয়। তবে পরিস্থিতিগুলোতে মনোযোগ দিলে সম্ভবত আমরা সংকটগুলো আবিষ্কার করতে পারি।
প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি