ক্যারিয়ার গড়ুন বায়ো-কেমিস্ট্রিতে
- রবিউল কমল
কোথায় পড়বেন
সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো-কেমিস্ট্রিতে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে একাধিক সরকারি ও গুটিকয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো-কেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াশোনা করানো হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ ছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ বিষয়টি রয়েছে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ-সাউথ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হয়। বর্তমানে বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি বায়োলজিক্যাল ফ্যাকালটির প্রধান বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।
ভর্তির যোগ্যতা
বায়ো-কেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা করতে চাইলে আপনাকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। ‘ক’ ইউনিটের অধীনে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট কমপক্ষে জিপিএ-৮ পেতে হবে। আর কোর্সের মেয়াদ চার বছর। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক আলাদা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ একেবারেই কম। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. হাসিনা খান জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছরে পড়াশোনার মোট খরচ পড়বে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ একটু বেশি। এখানে প্রতিষ্ঠান ভেদে আপনার খরচ হবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই।
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
বায়ো-কেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা শেষ করার পর আপনার রয়েছে বহুবিদ ক্যারিয়ার গড়ার অনবরত সুযোগ ও আকর্ষণীয় সম্মানীর অপার সম্ভাবনা। যেমন পেশাগত জীবনে আপনি সরকারি জব করতে চাইলে মেডিকেল কলেজগুলোতে, বিসিএসআইআর, পরমাণু শক্তি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বিসিএস, আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অনেক সরকারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানে আপনার জন্য চাকরি দরজা খোলা রয়েছে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি সেন্টার, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণমূলক প্রতিষ্ঠান, ফরেনসিক ল্যাব, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বেসরকারি হাসপাতাল, রিসার্চ ল্যাবরেটরি, এইডস ও পশুপাখির ভ্যাকসিন জাতীয় রোগ নির্ণয় প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে আপনার সেরা ক্যারিয়ার গড়ার সুবর্ণ সুযোগ ও সফলতার হাতছানি।
আয়-রোজগার
এখানে পড়াশোনা করে বেকার থাকা বা চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। বায়ো-কেমিস্ট্রিদের জন্য রয়েছে দেশ-বিদেশে সর্বোচ্চ সেরা চাকরির উজ্জ্বল সম্ভাবনা। বিশেষ করে বিদেশে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে গবেষণার প্রচুর সুযোগ ও চাকরির ব্যবস্থা আছে। এ পেশায় মোটা অঙ্কের বেতনসহ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে প্রমোশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এখানে শুরুতেই আপনি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। এমনকি মাসে চার থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। মোট কথা এখানে আপনার চাকরি যেমন উন্নত সম্মানী, তেমন মানসম্পন্ন।
উচ্চশিক্ষা
এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আপনি বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেছে নিতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রে জাপান, আমেরিকা, ফিনল্যান্ড ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য রয়েছে অপূর্ব সুযোগ।
কিছু কথা
বিশেষজ্ঞের অভিমত বায়ো-কেমিস্ট্রির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-কেমিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বায়ো-কেমিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানান, বায়ো-কেমিস্ট্রি মানে জীবনের কেমিস্ট্রি। মানুষ, পশুপাখি ও অন্যান্য জীবদেহে রোগজীবাণু ঘটে এবং তা কোনো জিনের মাধ্যমে ঘটে ও কোনো কোনো অনুজীব ঘটায়। এছাড়া মানুষের শরীরের পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান, কৃষিবিজ্ঞান, লবণাক্ততার মধ্যে ধানসহ অন্যান্য শস্যের অধিক উৎপাদন, জীবদেহে একাধিক রোগ নির্ণয়সহ সবকিছুই বায়ো-কেমিস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা এর আয়তন ব্যাপক ও এটি একটি বেসিক বিষয়। এছাড়া এটি গবেষণামূলক বিষয়ও বটে। আর বায়ো-কেমিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার সম্ভাবনার মধ্যে অন্যতম হলো ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং কৃষি ও খাদ্য গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ফরেনসিক ল্যাব এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যেখানে বায়ো-কেমিস্ট্রির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও পর্যাপ্ত সম্মানী।