সর্বাধিক লাভজনক ১৫টি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
- ক্যারোলিন সান
পরিচালনার হাত দক্ষ হলে ক্ষুদ্র ব্যবসাকেও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যায়। পহেলা ফেব্রুয়ারী ২০১৬ ইং তারিখে প্রকাশিত ফাইনানসিয়াল ডাটা সার্ভিসের প্রায় ১৬,০০০ ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর (সেপ্টেম্বর ২০১৪-আগষ্ট ২০১৫) চালানো জরিপের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় লাভের শতকরা হারের দিক দিয়ে সবার উপরে রয়েছে এমন কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলো একাউন্টস ও ট্যাক্স সার্ভিস, যার লাভের হার ১৮.৪ শতাংশ, রিয়েল এস্টেট সার্ভিসে ১৫.২ শতাংশ, ল ফার্মে ১৪.৫ ও ডক্টরস অফিসে ১৩ শতাংশ।
এ খাতে কেন এতো লাভ? অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মতামত দেন, তবে কেউ কেউ বলেন তাঁরা সাধারণ লোকের টাকা খাটিয়ে ব্যবসা করে ফলে এত লাভ করা সম্ভব হয়।
‘সার্ভিস ইন্ড্রাসট্রিজ’ এর সেজওয়ার্কস বিশ্লেষক জেনা ওয়েভার বলেন, লাভজনক এসকল ক্ষুদ্র ব্যবসায় বেশ কিছু সাধারণ জিনিস দেখতে পাই। এখানে বেশি লাভ হওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো উপরি খরচ বা ওভারহেড ও স্টার্টআপ খরচ কম। এ ব্যবসার অধিকাংশই বাড়িতে বসে শুরু করা যায়।
এসব ব্যবসায়ের উদ্দ্যোক্তাদের শুধু লাভ নিয়ে ভাবলেই চলবে না এজন্য খাত অনুযায়ী দক্ষও হতে হবে। ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স করতে হবে, ট্রেনিং প্রয়োজন হবে এবং মন্দার সময়ে এই ব্যবসা কতটা যুক্তিযুক্ত ব্যবসা শুরু করার আগে এসব নিয়ে ভাবতে হবে।
নিম্নে জরিপ অনুযায়ী সর্বাধিক লাভজনক ১৫টি ক্ষদ্র ব্যবসায়ের তালিকা ও শতকরা লাভের হার দেয়া হলো ঃ
- ১. একাউন্টিং, ট্যাক্স প্রস্তুতকরণ, হিসাবরক্ষণ এবং পে রোল সার্ভিস ১৮.৪%। সেজওয়ার্কস বিশ্লেষক জেনা ওয়েভার এর মতে, এই খাতটি সবচেয়ে বেশি লাভজনক। অর্থনীতি কিভাবে চলছে তাতে কিছু আসে যায় না, প্রত্যেকটা লোকেরই নিজ নিজ ব্যবসার জন্য হিসাব রক্ষক দরকার। এখানে উপরি ব্যায় কম হয় এবং একই সেবা গ্রহীতা বারবার আসে তাই এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়ে থাকে।
- ২.প্রতিষ্ঠান ও এন্টারপ্রাইজ ব্যবস্থাপনা ১৫.৫%। ছোট ও ব্যক্তিগত মালিকানায় এসব প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। যাতে ব্যাংক হোল্ডিং কোম্পানী ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের হোল্ডিং কোম্পানীর কাজ করা হয়ে থাকে। উদহারণ স্বরুপ ওয়ারেন বাফেটের ’বার্কশায়ায়র’ (যদিও এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আর ক্ষুদ্র ব্যবসা ক্যাটাগরিতে পড়ে না) এবং কার্ল আইচ্যানের ’আইচ্যান এন্টারপ্রাইজ’।
- ৩. রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ও ব্রোকার ১৫.১৯%। দেশের অর্থনীতিতে রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর বড় ভুমিকা রয়েছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর এজেন্ট ও ব্রোকারদের পরিচালনা ব্যায় অনেক কম হওয়ায় এ ব্যবসাটি অনেক বেশি লাভজনক।
- ৪. গাড়ী ভাড়া ও লীজিং ১৪.৫৫%। সেজাওয়ার্ক এর বিশ্লেষক লিবি বিয়ারম্যান জানান, চলমান অর্থনীীতর প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে ভাড়ার গাড়ীর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে। এছাড়াও মানুষ অন্যান্য কাজেও ভাড়ার গাড়ী ব্যবহার করে থাকে। এ ব্যবসাও অনেক লাভজনক।
- ৫. আইন সেবা ১৪.৪৮%। বর্তমান দিনে আইন পেশা অনেক জমজমাট। প্রত্যেকটা লোকই চায় তাঁর কাজের আইন সিদ্ধ একটা ভিত্তি থাকুক। আর এ কারণেই তাঁরা আইন বিশেষজ্ঞের নিকট আসে। এ ব্যবসায় কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এতে পরিচালনা খরচ অনেক কম তাই লাভও বেশি।
- ৬. ডেন্টিস্ট অফিস ১৪.৪১%। কিছু বিশেষজ্ঞ ডেন্টিস্ট ডাক্তারদের নিয়ে একটি অফিস চালু করতে পারেন। শুরুটা একটু ব্যয়বহূল হবে কারণ এর উপকরণসমূহের দাম বেশি। এসব উপকরণ একবার কিনলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায় ফলে পরবর্তীতে পরিচালনা খরচ কম হয়ে থাকে। আর এসব প্রতিষ্ঠ একবার চালু হয়ে গেলে ধীরে ধীওে অনেক রোগী সেবা নিতে আসবে ফলে আয়ও অনেক বেড়ে যাবে।
- ৭. ইলেকট্রিক পাওয়ার জেনারেশন, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশ ১৪.০২%। প্রথাগত ফসিল ফুয়েল ইলেকট্রিক পাওয়ারের কথা বলছি না। ক্ষুদ্র ও ব্যক্তি মালিকানাধিনও হতে পারে যেমন- সোলার সিস্টেমস।
- ৮. রিয়েল এস্টেটের লেজরস ১৪.০১%। লেজর, ল্যান্ডলর্ড হিসেবে পরিচিত। জরিপ অনুযায়ী এই ব্যবসাাটি লাভের দিক থেকে শীর্ষ দশে রয়েছে।
- ৯. অফিস ও অন্যান্য হেলথ প্রাকটিশনার ১৩.৩০%। প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাব এই ক্যাটাগরি ফিজিশিয়ানদের থেকে আলাদা হতে পারে? আসলে এক রকম নয়, ইহা আলাদা ব্যবসা। এখানে সেনসাস ডিলাইনএসান, চিরপ্রাকটর, অটোমেটরিস্ট, মেন্টাল হেলথ প্রাকটিশনার ইত্যাদি এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।
- ১০. ফিজিশিয়ানদের অফিস শুরুতে একটু খরচ হলেও পরবর্তীতে পরিচালনা খরচ কম হয়ে থাকে। এখানে নিয়মিত রোগী আসে ও মুনাফা অধিক হয়ে থাকে।
- ১১. কর্মাশিয়াল ও ইন্ডাসট্রিয়াল মেশিনারিজ ও ইকুইপমেন্ট ভাড়া ও লিজ ১২.৫৮%। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে এসব মেশিনারিজ ভাড়া ও লিজ দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।
- ১২. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ১২.৪১% । বিভিন্ন ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও লাভ হয়ে থাকে।
- ১৩. ম্যানেজমেন্ট, সাইনটিফিক এবং টেকনিক্যাল কনসাল্টিং সাভির্স ১২.০৫%। কিছু বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দিয়ে এ ব্যবসা করতে পারেন এর পাশাপাশি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা , মার্কেটিং ও বিভিন্ন পরিবেশগত ইস্যূ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েও এ ব্যবসা করা যায়।
- ১৪. স্পেশালাইজড ডিজাইন সেবা ১১.৪%। ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ইন্ডাসট্রিয়াল ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বেশ লাভজনক ও সন্মানের, এতে পরিচালনা খরচও কম।
- ১৫. অফিস প্রশাসন সেবা ১১.৩%। অফিস প্রশাসন ব্যবসা প্রত্যেক ব্যবসা পরিচালনার মেরুদন্ড। খাবার সেবা থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা পর্যন্ত যা দৈনন্দিন ভিত্তি প্রশাসনিক সেবা হিসেবে পরিচিত যেমন-তথ্য সংরক্ষণ, আর্থিক পরিকল্পনা এবং বিল পরিশোধ ইত্যাদি।