সময় ব্যবস্থ্যাপনার দশ ভুল
- শিমি আক্তার
আপনার সময়কে কীভাবে কাজে লাগান? আপনি যদি অন্য দশ জনের মতো হন, আপনার উত্তর হয়তো পুরোপুরী ‘হ্যা’ বোধক বা পজিটিভ হবে না। আপনার অনুভুতির বোঝা হয়তো অনেক ভারী। আপনি প্রায়ই কাজ করতে দেরী করে ফেলছেন। অথবা আপনার দিনটি কাটছে এক সমস্যা থেকে আরেক সমস্যার মধ্য দিয়ে, যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং মনোবলহীনতার কারণ। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা জানেন সময়কে কীভাবে অধিক ফলপ্রসূরূপে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু আমরা যে ভুলগুলো করছি তা বুঝতে পারা কষ্টকর এবং কীভাবে এর উন্নতি করা যায় তা জানতে হবে। সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে যেমন কর্মোদ্যম বেড়ে যায় তেমনি কষ্টের মাত্রা কমবে।
ভুল- ১ : টু-ডু-লিস্ট ব্যবহারে অসর্তকতা
কখনো কি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ ভুলে গেছেন? যদি তাই হয় তাহলে সম্ভবত আপনি কাজের জন্য টু-ডু-লিস্ট ব্যবহার করেন না বা ব্যবহার করলেও ততটা গুরুত্ব দেন না। টু-ডু-লিস্টে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পর্যায়ক্রমে লিখে রাখতে হবে। অনেকেই এ-এফ কোড পদ্ধতি ব্যবহার করেন (এখানে এ-এর অর্থ হলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর এফ-এর অর্থ হলো কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ)। আপনার তালিকায় যদি বড় প্রকল্প থাকে, আর আপনি সর্তক না হলে টু-ডু-লিস্ট অকার্যকর হয়ে পড়বে।
ভুল- ২ : ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ না করা
আপনি কি ঠিক করেছেন পরবর্তী ৬মাস পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান? বা পরবর্তী বছর এই সময়ে? অথবা এখন থেকে ঠিক ১০ বছর পর? যদি ঠিক না করে থাকেন, এখনই ব্যক্তিগত কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলে আপনি গন্তব্যে পৌছাতে সক্রিয় হবেন। যখন জানবেন আপনি কোথায় যেতে চাচ্ছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সময় ও সম্পদের সঠিক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবেন।
ভুল- ৩ : অগ্রাধিকারমূলক কাজকে অগ্রাধিকার না দেয়া
আপনার সহকারী একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আসলেন, কিন্তু নতুন এক ক্লাইন্টের জন্য আপনার মাথায় চিন্তার ভাবনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আপনি নিশ্চিত যে, মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের জন্য আপনার মাথায় যে নতুন একটি ধারণা এসেছে তা কাজে লাগানো দরকার। কিন্তু আপনি যদি সহকর্মীর সমস্যাকে গুরুত্ব না দেন তাহলে আপনার বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কোন কাজটি আগে করা দরকার তা আপনাকে বুঝতে হবে। অনেক সময়, কোন কাজটিকে অগ্রাধিকার দেবেন তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন জরুরী কিছু কাজের মুখোমুখি হয়ে থাকেন। যাহোক, সময়কে যদি অধিক ফলপ্রসূরুপে কাজে লাগাতে চান, আপনাকে অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলোকে বাছাই করা শিখতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যাকশন প্রিয়রিটি ম্যাটরিক্স পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন যা আগ্রাধিকারমূলক ও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজকে বাছাই করতে সহায়তা করবে।
ভুল-৪ : বিরক্তিকর কাজ এড়াতে না পারা
আপনি কি জানেন যে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা প্রতিদিন প্রায় ২ঘন্টা বিভিন্ন কারণে কাজে অমনোযোগী থাকেন? ভেবে দেখুন আপনার সময়কে কীভাবে এর থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন! ই-মেইল, আইএম চ্যাটস, সহকর্মীদের সাথে আলোচনা, গ্রাহকদের ফোন কল ইত্যাদির মাধ্যমে এমন হতে পারে। অপ্রয়োজনে ই-মেইল, চ্যাটিং, গল্পগুজব বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফোনে কথা বলা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা জানতে হবে। যদি দিনটিকে আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এবং সেরা কাজটি করতে চান, তাহলে কিভাবে কাজের অমনোযোগীতা বা বিরক্তিকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে এবং কীভাবে মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়গুলি শিখতে হবে।
ভুল- ৫ : কালক্ষেপণ বা দীর্ঘসূত্রতা
কাজে কালক্ষেপণ ঘটে যখন আপনি উক্ত কাজ থেকে দুরে থাকেন। যখন দেখবেন আপনার কাজ থেকে দুরে থাকার কারণে বা কাজে দেরী করার জন্য কোন ধরনের সমস্যা তৈরী হয়েছে তখন নিজেকে দোষী মনে হবে। এজন্য আপনাকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, নিজেকে বলুন আপনি ১০মিনিটের মধ্যে একটি কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। কাজে সময়ক্ষেপণ তখনই অনুভুত হবে যখন দেখবেন কাজটার জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হতে বেশি দেরি নেই। এ ধরণের প্রত্যাশা আপনাকে ভাবনায় ফেলে দেবে এবং উদ্বেগ বাড়াবে। এ সমস্যা সমাধানে আপনাকে উপয্ক্তু ’কর্ম পরিকল্পনা’ গ্রহণ করতে হবে।
ভুল- ৬ : অতিরিক্ত চাপ নেয়া
আপনি কি সেই ব্যক্তি যে খুব কম সময়ই কাউকে ‘না’ বলতে পেরেছেন ? যদি তাই হয় তাহলো সম্ভবত আপনার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন এবং অন্যের প্রতি প্রদেয় প্রতিশ্রæতির বোঝা আপনার মাথায় রয়েছে। এতে আপনার স্বাভাবিক কাযকর্মে বাধাগ্রস্থ হবে, মানসিক চাপ বাড়বে এবং নৈতিকাতাও ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। আপনিও হতে পারেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবস্থাপক। যাঁরা কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে বা নিজের দ্বারা সব কাজ করতে শক্তি প্রয়োগ করে, সঠিকভাবে কোন কিছু করার জন্য কাউকেই বিশ্বাস করে না, এ ধরণের কাজে শুধু ব্যবস্থাপকই নয় সকলের জন্যই সমস্যা হয়ে থাকে। অর্থাৎ একসাথে অতিরিক্ত কাজ করতে গেলে আপনার সময় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ত্রæটিপূর্ণ হবে। সময় মতো কার্য সরবরাহ ব্যহত হবে এবং এর ফলে আপনার সুনামও ক্ষুন্ন হবে।
ভুল- ৭ : অধিক ব্যস্ততা দেখানো
কিছু লোক ব্যস্ততার কারণে বেপরোয়াভাবে অগ্রধাবন করতে চান। যখন দেখেন সময় হাতে নেই তখন অধিক ব্যস্ত হয়ে মেইল পাঠাতে বা মিটিংয়ের প্রস্তুতির জন্য একগাদা ফাইল নিয়ে মনোযোগী হয়ে পড়েন, দূর থেকে দেখা মনে হয় কাজের প্রতি একনিষ্ঠ। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, কোনো কাজই ঠিকমতো হয়ে উঠছে না, যা মানসিক চাপকে বাড়িয়ে দেয়। তাই অধিক ব্যস্ত না হয়ে একটি করে কাজ শেষ করতে থাকুন, তাহলে দেখবেন আপনার সময়ের সঠিক ব্যবহার হবে।
ভুল-৮ : বহুমূখী কাজ
কাজের অনেক চাপের মধ্যেও মিস লিন্ডা একই সাথে ই-মেইল পাঠাচ্ছেন, গ্রাহকদের সাথে ফোনে কথা বলছেন ও চ্যাটিং করছেন। তিনি মনে করছেন এতে তাঁর সময়ের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে, এ ধারনা আসলে ভুল ছিল। এ কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করলে শতকরা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ অতিরিক্ত সময় লাগতো। ফলাফলে দেখা যায় তাঁর পাঠানো ই-মেইল ভূলে ভরা এবং গ্রাহকদের মাঝে এজন্য হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিল। সুতরাং একই সাথে বহুমুখী কাজ করা পরিহার করে একটি কাজ শেষ করে অন্যটি হাতে নেয়া উচিত।
ভুল-৯ : পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দেয়া
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যখন কোন কাজ সম্পন্ন করা আবশ্যক তখন এই ভাবনাটা ভালো যে আপনাকে ৮-১০ঘন্টা কাজ করতে হবে। কিন্তু মস্তিস্ককে একটু বিশ্রাম ও সতেজ হওয়ার সুযোগ না দিয়ে একটানা এত সময় পূর্ণ গতিতে কারো পক্ষে কাজ করা অসম্ভব। সুতরাং বিশ্রামের সময়টাকে সময়ের অপচয় মনে করা যাবে না। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখলে কর্মীরা পূনরায় সতেজ হয়ে কাজ শুরু করতে পারবে ফলে কাজে সৃজনশীলতা আসবে, দক্ষতা ও মান বাড়বে এবং অধিক ফলপ্রসূ হবে। যদি আপনার জন্য কাজে বিরতি দেয়া কঠিন হয়ে যায় তাহলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিরতির বব্যস্থা রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে স্মরণ করানোর জন্য সংকেত বা এ্যালার্ম সেট করে রাখতে হবে। সামান্য একটু হেঁটে আসুন, এক কাপ চা বা কফি পান করুন অথবা নিজ আসনে বসেই একটু ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। প্রতি ১ঘন্টা বা ২ঘন্টা পরপর ৫মিনিটের সামান্য বিরতি নিতে পারেন। দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় পর্যপ্ত সময় নিয়ে খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে- পেটে ক্ষুধা থাকলে মান সম্মত কাজ করতে পারবেন না ।
ভুল- ১০ : কাজের নিষ্ফল সময়সূচী
অফিস সময়ে বা পিক আওয়ারে কাজের উচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন। কাজের চাপ যখন কম থাকে তখন অল্প শ্রমের কাজ (যেমন মেইল চেকিং বা ফোন করা ইত্যাদি) করতে পারেন। আপনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি বা উন্নতি ঘটানোর অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো সময় ব্যবস্থাপনার ভূলগুলো সনাক্ত করে সেগুলোর সংশোধন করা।
যখন উপরোক্ত ভূলসমূহ কাটিয়ে উঠতে পারবেন, এটা আপনার বর্তমান কর্মক্ষমতার মাঝে বড় পার্থক্য গড়ে দেবে। আপনার হতাশার অভিজ্ঞতাও কমে যাবে এবং অধিক শান্তিতে থাকবেন।
সুত্র : লিংকডইনডটকম