‘উদ্যোক্তা মানে শুধু ল্যাপটপ খুলে আইডিয়া খুঁজে বের করা নয়’

‘উদ্যোক্তা মানে শুধু ল্যাপটপ খুলে আইডিয়া খুঁজে বের করা নয়’

আইনজীবী থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট থেকে উদ্যোক্তা বনে যাওয়া লিয়াত অ্যারনসন তাঁর সমগ্র ক্যারিয়ারজীবনে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন জিল এন্ট্রাপ্রেনারশিপের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক এবং হরাইজন ল্যাবসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। প্রথমজীবনে ছিলেন বাণিজ্য বিষয়ের একজন পেশাদার আইনজীবী। কিন্তু আইন পেশায় তাঁর মন ভরছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে তাঁর মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে পারবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে পারবেন। তাই আইনের জগৎ ছেড়ে তিনি জিল এন্ট্রাপ্রেনারশিপের প্রোগ্রাম দলে যোগ দেন। সেখানে তিনি তরুণ মেধাবী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে শুরু করেন এবং কাজটি উপভোগ করতে থাকেন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হরাইজন ল্যাবে যোগ দিয়ে তাঁর উদ্যোক্তা সংক্রান্ত জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ করবেন।

লিয়াত অ্যারনসন নামের এই নারী উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ২০মিনিটস লিডার্সের নির্মাতা মাইকেল মাতিয়াস। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে ক্যালকালিসটেক ডটকম।


প্রশ্ন: আপনি কি জিল সম্পর্কে একটু বলবেন? এটি কী ছিল এবং কীভাবে আপনি আইডিসির স্নাতকদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতেন?

লিয়াত: আমার পথটা খুব সহজ-সোজা ছিল না। আমি আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেছি এবং ইসরায়েলের একটি আইন সংস্থায় বহু বছর কাজ করেছি। সময়ের সাথে সাথে আমি চেয়েছি নতুন কিছু করার। যদিও আমি একজন সফল আইনজীবী হয়েছিলাম, তারপরও আমার মন চাইত আরও অর্থবহ কিছু করতে। একবার ভাবলাম, পিএইচডিটা করে ফেলি। ততদিনে আমার চারটি সন্তান হয়েছে। জীবনজুড়ে এত ব্যস্ততা যে এর মধ্যে থেকে সময় বের করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমার এক বন্ধু আইডিসিতে চাকরি করত। সে একদিন বলল, তারা আইডিসির উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম চালানোর জন্য একজন লোক খুঁজছে। ‘তুমি কী সেখানে আবেদন করবে?’ আমি অবাক হয়ে উত্তর দিলাম, ভালো কথা। কিন্তু আমাকে কেন? আমি তো উদ্যোক্তা নই কিংবা শিক্ষকও নই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই পদের জন্য আমি আসলে অযোগ্যই ছিলাম। তারপরও কীভাবে যেন চাকরিটা হয়ে গিয়েছিল। আমি ক্যাম্পাসে গেলাম। দেখলাম, ছোট্ট, সুন্দর, ছিমছাম একটা ক্যাম্পাস। আগে সেখানে একটি সেনা ঘাঁটি ছিল। পরে সেটিই রূপান্তরিত হয়েছে ক্যাম্পাসে। প্রচুর গাছপালায় ঘেরা নির্মল বাতাসে ভরপুর একটি ক্যাম্পাস। উদ্যোক্তা মানসিকতাকে পুষ্ট করার জন্য এই পরিবেশ অবশ্যই উপাদেয়।

প্রশ্ন: জিল হচ্ছে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিজনেস স্কুলের মতো একটি প্রতিষ্ঠান এবং এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে সেরা উদ্যোক্তা স্কুল হিসেবে পরিচিত। এখানে বহু উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম রয়েছে। আপনি কী মনে করেন, জিল সত্যিকার অর্থেই একটি সফল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান?

লিয়াত: স্ট্যানফোর্ড অবশ্যই একটি সেরা প্রতিষ্ঠান। স্ট্যানফোর্ডের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। এর পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। একই ধরনের ঘটনা ২০০৮ সালে ঘটেছে জিলের ক্ষেত্রেও। ফলে তরুণ উদ্যোক্তাদের পক্ষে এই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করা সহজ হয়েছে। জিলের প্রোগ্রাম ছিল খুবই বাস্তবসম্মত এবং হাতেকলমে শেখার মতো। এখানকার শিক্ষকরাও প্রায় সবাই প্র্যাকটিকাল ফিল্ড থেকে আসা। এখানে অল্পকিছু একাডেমিক কোর্স রয়েছে আর বেশিরভাগ কোর্সই ফিল্ড-ওরিয়েনটেড। ফলে বারবার ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে শিখতে পারে। এটাই স্যাম জিলের নীতি। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যর্থতার চেয়ে বড় কোনো শিক্ষা নেই। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া এবং উঠে দাঁড়ানোর মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত শিক্ষা।

আমি মনে করি, আমরা যে নীতি আদর্শ ও সহযোগিতা পেয়েছি তা কেবল আইডিসি থেকেই নয়, বরং স্যাম জিলের কাছ থেকেও পেয়েছি। বলা চলে, আমরা একটা সুরক্ষা জালের মধ্যে ছিলাম। এই নীতি-আদর্শের সুরক্ষা জাল এতই শক্ত ছিল, আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি মনে করি উদ্যোক্তা প্রোগ্রামটি সফল হওয়ার পেছনে এই বিষয়টি দারুণভাবে কাজ করেছে। শুধু আইডিসি নয়, জিল এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ ব্যর্থ হয়, ধাক্কা খায়, পড়ে যায়, আবার উঠে দাঁড়ায়। এটি একটি স্যান্ডবক্সের মতো। আমাদের প্রচুর উদ্যোক্তা রয়েছে যারা আসলে কোনো ভেঞ্চার চালুই করতে পারেনি। আমরা তাদের পাশে থাকি। কখনোই হাল ছেড়ে দিতে বলি না। বছরের পর বছর তাদের পেছনে লেগে থাকি।

আমি আসলে ক্যাম্পাসটির প্রেমে পড়েছিলাম। এটি ‘প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়া’র মতো একটি ব্যাপার ছিল। তো যোগদান করার পর প্রথম এক বছর কেটে গেল নানা কিছু শিখতে শিখতেই। এসময় প্রচুর পড়াশোনা করতে হলো। এপিফ্যানি, লিন স্টার্টআপ এরকম অনেক জটিল জটিল নিয়ম কানুন পদ্ধতি শিখলাম। এরমধ্যে উদ্যোক্তা নেটওয়ার্কের সঙ্গেও আমার প্রচুর যোগাযোগ তৈরি হলো। আমি তাদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করলাম। কয়েক বছর ধরে আমি এই নেটওয়ার্কিংই করে গেছি শুধু। এরপর ২০০৮ সালে আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল। এটাকে জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলা যেতে পারে। জিল আসার আগে, বেশিরভাগ ছাত্রই বিনিয়োগ ব্যাংকার হতে চাইত। সন্দেহ নেই যে তারা প্রত্যেকেই অসম্ভব মেধাবী ছিল। কিন্তু কেউই উদ্যোক্তা হতে চাইত না। জিল এসে এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটালেন।

পৃথিবীতে ততদিনে আইফোন এসেছে, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ এসেছে, কম্পিউটারের আধুনিকায়ন হয়েছে এবং প্রযুক্তির ভুবনে নানা পরিবর্তন এসেছে। ফলে সবমিলিয়ে পরিবর্তন ঘটেছে গোটা অর্থনীতির। মানুষের হাতে টাকা এসেছে। তাই অনেক উচ্চ প্রতিভাধর মানুষ উদ্যোক্তা হতে চেয়েছে অথবা নতুনদেরকে উদ্যোক্তা বানাতে আগ্রহী হয়েছে।

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক। ২০০৮ সাল থেকে আমরা অনেক বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে শুরু করি। সেই সময় আমরা এমন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম যার জন্য এখনও আমার গর্ব হয়। আমি গর্বিত এজন্য যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী জিলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।

প্রশ্ন: আমরা এখন সেলিনা এবং হরাইজন ল্যাব সম্পর্কে একটু জানতে চাই। সেলিনা অবশ্যই অত্যন্ত সুপরিচিত এবং সফল একটি প্রতিষ্ঠান। আমাকে কী সংক্ষেপে একটু বলবেন, সেখানে কী কাজ করেছিলেন? এরপর আমরা ব্লকচেইন সম্পর্কে জানব।

লিয়াত: আইডিসি এবং সেলিনায় যাওয়ার আগে আমি দুই বছর মার্কার এলএলসিতে কাজ করেছি। এটি ছিল একটি নবীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম। এখান থেকেই আমি সেলিনার সন্ধান পাই। যাইহোক, আমি মার্কারে যোগ দিয়েছিলাম একজন পার্টনার বা অংশীদার হিসেবে। মার্কার ছিল নিউইয়র্ক-তেলাবিব ভিত্তিক একটি ফার্ম। এদের তদারকি করে ইসরায়েলের সংস্থাগুলো। মার্কার চাইছিল আমেরিকায় তাদের ব্যবসা বাড়াতে। কয়েক বছরের জন্য আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। তবে এখনও আমি মার্কারের একটি পোর্টফোলিও সংস্থার পরিচালক হিসেবে কাজ করছি। তাদের তহবিল তদারকি করে থাকি। 

প্রশ্ন: চারটি সন্তান লালন পালন করার পাশাপাশি আপনি কর্মক্ষেত্রে যে বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। নিঃসন্দেহে এই যাত্রা ছিল ভয়ংকর কষ্টের এবং সময়সাপেক্ষ। আপনি এতকিছু কীভাবে সামলেছিলেন, একটু বলবেন?

লিয়াত: আমার স্বামী একজন অসম্ভব ভালো মানুষ। সে আমাকে সব সময় সাহায্য করেছে। তাছাড়া আমার সন্তানরা যখন ছোট ছিল তখন তারাও আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। এখও তারা আমার পাশে আছে। আসলে আমি খুব ভাগ্যবতী, না হলে এভাবে পরিবারের সকলের সহযোগীতা পেতাম না। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সহযোগিতা ছিল বলেই আমি পড়ালেখা শেষ করতে পেরেছি এবং কর্মজীবনে এতটা দূর আসতে পেরেছি। তারা সহযোগিতা না করলে এই অসাধ্য সাধন করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। বিশেষ করে আমার স্বামীর কথা বারবার বলতে হবে। আমার সন্তানরা একজন অসম্ভব সহযোগিতাপরায়ণ বাবা পেয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে একটি ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সময় পার করে এসেছি আমি। আমার ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ারজীবনের মাঝে সমন্বয় করা সহজ ছিল না। আমার স্বামী-সন্তানরা পাশে ছিল বলে পেরেছি। এখন সেই কষ্টের ফল উপভোগ করছি।

থাক সে কথা। ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে বলি। আমি যখন মার্কার ছেড়ে যাচ্ছিলাম তখন সেলিনাতে জিলের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী কাজ করত। সে তখন আমাকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। প্রতিষ্ঠানটি তখন মাত্রই বড় বড় লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। সে সময় তাদের প্রয়োজন ছিল বিনিয়োগকারীদের একত্রিত করার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার। এসব কাজ খুব দ্রুত গতিতে করার প্রয়োজন ছিল, কারণ পৃথিবী পাল্টে যাচ্ছিল আলোর গতিতে।

আমি যেহেতু একটি পরামর্শমূলক প্রকল্প (কনসালটেন্সি প্রজেক্ট) থেকে এসেছি এবং ওই প্রকল্পে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) হিসেবে কাজ করেছি, সুতরাং কর্পোরেট অপারেশনের কলাকৌশল, পারস্পরিক যোগাযোগ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৌশল প্রণয়ন ইত্যাদি ব্যাপারে আমার যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা ছিল।

এসব কারণে আমি সেলিনাতে যোগ দেই। সেলিনার প্রধান অফিস (হেড কোয়ার্টার) ছিল পানামাতে। সুতরাং আমাকে নিয়মিত পানামায় যেতে হতো। সৌভাগ্যবসত তখন পানামায় আমার এক চাচাত ভাই বাস করত, যদিও তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অবশ্য লস অ্যাঞ্জেলেসে। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পরে সে পানামায় চলে যায়। সে যাইহোক। তার সঙ্গে আমার পুণরায় যোগাযোগ তৈরি হয়। আমি তার বাসায় যেতাম এবং একসঙ্গে প্রচুর গল্প-অড্ডায় মেতে উঠতাম। সে তখন ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করত। আমি অবাক হয়ে তার কাজকর্ম দেখতাম। এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি যখন সেলিনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই, সে তখন আমাকে আরেকটি পরামর্শমূলক প্রতিষ্ঠানে (কনসালটিং ফার্ম) যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। সেটিই ছিল হরাইজন, যারা পাবলিক ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করে। হরাইজন তখন চাচ্ছিল এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে যার মাধ্যমে ছোট ছোট ব্লকচেইনকে যুক্ত করা যাবে। কিন্তু এটা ছিল সত্যিই খুব ব্যয়বহুল এবং নিরাপত্তা ফিচার নিয়েও সমস্যা হচ্ছিল। আমি তখন ভাবলাম, আমার তো হারানোর কিছু নেই। হ্যাঁ, ব্লকেচেইন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না কিন্তু কাজটা বেশ আকর্ষণীয়। কাজ করতে করতেই শিখে যাব। এত ভাবনার কী আছে? আমার তো হারানোর কিছুই নেই। অতএব যোগ দিতেই পারি হরাইজনে। দেখি না কি হয়!

তারপর আমি ব্লকচেইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করি, এ এক অথই দরিয়া। যতই জানি, ততই মনে হয় কিছুই জানি না। ব্লকচেইন সম্পর্কে জানার আর শেষ হয় না। তবে আমি ভাগ্যবান, হরাইজনে কয়েকজন মানুষের চমৎকার একটা টিম পেয়েছিলাম। তারা আমাকে হাতেকলমে অনেককিছু শিখিয়েছেন।

মিলানো-ভিত্তিক আমাদের একটা চমৎকার প্রযুক্তি টিম ছিল। তাদের সঙ্গে রাতের নৈশভোজ খেতাম। নানা গল্প-গুজব হতো। তাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছিলাম। জেনেছিলাম হরাইজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কেও। হরাইজনের প্রধান নির্বাহী রব ছিলেন অসম্ভব উদ্দীপ্ত ও স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। তিনি মার্কেটিং টিম, স্ট্রাটেজি টিম, জেন ব্লকচেইন টিম, বিজনেস ডেভলপমেন্ট টিম, প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং টিম—এরকম প্রতিটি টিম সেরা সেরা মানুষদের দিয়ে সাজিয়েছিলেন।

মাইকেল মাতিয়াস। ছবি: ক্যালকালিসটেক ডটকম

একবার সুযোগ এলো হরাইজনের নতুন প্রক প্রকল্পে কিছু অর্থ অনুদানের মাধ্যমে ‘ফাউন্ডার’ হওয়ার। আমার চাচাতো ভাই ডিন বলল, তুমি কেন ফাউন্ডার হওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করছ? আমি তখন ভেবে দেখলাম, তাই তো! আমার ক্যারিয়ারজীবনে ফাউন্ডার শব্দটি যোগ হবে, ব্যাপারটা মন্দ নয়।

আমি তখন ঝুঁকি নিয়েছিলাম এবং ঝাঁপ দিয়েছিলাম। আজ আমি পেছন ফিরে যদি দেখি, হরাইজন থেকে কী অর্জন করে বাড়ি ফিরেছি, তাহলে দেখতে পাই, একদল গ্রেট মানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এটাও একজীবনের কম অর্জন নয়। ওই টিমটাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসতাম। কীভাবে অ্যাডভেঞ্জার উপভোগ করতে হয় তা তাদের কাছ থেকে শিখেছি। 

প্রশ্ন: এখনও আপনি ঠিকমতো ঘুমান না, এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে ছোটাছুটি করেন। প্রতিনিয়ত ক্যারিয়ার পরিবর্তন করেন। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেন। তবে যে প্রতিষ্ঠানেই গিয়েছেন সেখানেই আপনি আপনার নেতৃত্বগুণ দিয়ে অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। এই যে এতগুলো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারা এবং শুধু কাজ নয়, সফলতার তুঙ্গ স্পর্শ করা, সেটা কীভাবে সম্ভব করেছেন?

লিয়াত: প্রথমত, আমি আপনাকে একটা ভুল শুধরে দেই, সেটি হচ্ছে, আমার জীবনের বহু দিন এবং বহু রাত ব্যর্থভাবে কেটেছে। আমি সব সময় সফল ছিলাম না। এমনও দিন গেছে, আমি হতাশায় কষ্টে একেবারে ধ্বংসের শেষ কিণারে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তবে আমার একটা গুণ হচ্ছে, আমি যেকোনো কিছু ম্যানেজ করতে পারি। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা সুপ্ত আগুন থাকে। সেই আগুনকে উসকে দিতে হয়। তারপরও মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনকে অর্থবহ করার জন্য আমার আরও কিছু করার প্রয়োজন ছিল। আমি সেসব করতে পারিনি। আমি একজন ভালো মা হতে পারিনি। সন্তানদের সময় দিতে পারিনি। এজন্য মাঝে মাঝেই অপরাধবোধে ভুগি। আমার মেধা ও শক্তির সবকিছু যদি একজন ভালো মা হওয়ার জন্য ব্যয় করতে পারতাম!

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় তিনটি শব্দ বলুন।

লিয়াত: সাহস, উদারতা ও স্ব-উদ্যোগে কাজ করা।

প্রশ্ন: সবশেষে জানতে চাই, যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ বা উপদেশ কী?

লিয়াত: প্রথমত আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, উদ্যোক্তা হওয়া মানে ল্যাপটপের সামনে বসে যাওয়া এবং নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করা নয়। উদ্যোক্তা হওয়া সম্পূর্ণ ঝুঁকির ব্যাপার। ঝুঁকিটা বুঝতে হবে। জীবনের সর্বস্ব খোয়া যেতে পারে এটা মাথায় রাখতে হবে। আমি নবীন উদ্যোক্তাদের বলব, সবার আগে জীবনের অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি ম্যানেজ করা শিখুন।

সূত্র: ক্যালকালিসটেক ডটকম।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম

Sharing is caring!

Leave a Comment