পড়তে পারেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের মতে, বর্তমানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শিল্প হলো পর্যটনশিল্প। সারা বিশ্বে কর্মসংস্থানের দিক থেকে পর্যটনশিল্পই সবচেয়ে এগিয়ে, প্রায় ১১ শতাংশ। ভ্রমণপ্রিয় মানুষের চাহিদা মেটাতে পর্যটনশিল্পে চাহিদা বাড়ছে প্রশিতি ও দ জনবলের। যুগোপযোগী এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে প্রশিণ দিচ্ছে দেশের বেশ কটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিণ নিলে পেতে পারেন দেশ-বিদেশে পাঁচতারকা মানের হোটেলে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ। পর্যটন বিষয়ে পড়তে চাইলে এইচএসসি পাস এবং ইংরেজি বলায় পটু হতে হবে। সৌন্দর্যের চেয়ে এখানে ভালো কাজ জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারকা হোটেলগুলোর কিছু বিভাগে শারীরিক গঠনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। জানাচ্ছেন শামস বিশ্বাস
দায়িত্ব
এখনকার পাঁচতারকা হোটেল মানেই যেন একটা ছোটখাটো শহর। গোটা ছয় রেস্তোরাঁ ২৪ ঘণ্টা খোলা, কফিশপ, কনফেকশনারি, সুইমিংপুল, ডিস্কো, কনফারেন্স রুম, বুটিক, টেনিস কোট কিছুই বাদ নেই। তাই এসব হোটেল চালাতে গেলে প্রয়োজন পেশাদার কর্মীর। কারণ একটি আধুনিক পাঁচতারকা হোটেলে বেশ কিছু বিভাগ থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হাউসকিপিং, পাবলিক রিলেশন, মার্কেটিং, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টসহ সব জায়গায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাস করা ছাত্রছাত্রীদের কদর। কিছু কিছু বিভাগে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের চাহিদাই বেশি। এর মধ্যে হাউসকিপিং, ফ্রন্ট অফিস অপারেশন ও ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম অন্যতম।
কর্মক্ষেত্র
এ কোর্সগুলোর যে কোনো একটি করার পর শুধু হোটেলেই চাকরি হয় তেমন নয়। তারকা হোটেল ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানি, ট্যুর অপারেটর কোম্পানি এবং ট্রাভেল এজেন্সিতে। আর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, সাইপ্রাস, দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ
২০০৭ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পাঠদান শুরু হওয়ার পর অনেক সরকারি-বেসরকারিসহ একাধিক ট্রেনিং সেন্টারে এ বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিসহ গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হয়।
এ ছাড়া ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, মহাখালী। বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, গ্রিনরোড, ঢাকা। পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, দিলকুশা, মতিঝিল। হোটেল রাজমণি ঈশা খাঁ, কাকরাইল। ড্যাফোডিল ইনষ্টিটিউট অব আইটি, পান্থপথ, ঢাকা। এছাড়া আরও অনেক জায়গায় ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যেসব বিষয়ের পড়তে পারেন
হোটেল ম্যানেজমেন্ট শুধু একটি বিষয় নয়। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। যেমনÑ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন, ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, হাউসকিপিং, বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রডাকশন, ফ্রন্ট অফিস সেক্রেটারিয়াল অপারেশন ইত্যাদি। এসব বিষয়ে ছয় মাসের শর্ট কোর্স এবং এক বছর, দুই বছর কিংবা তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। আর স্নাতক কোর্স তো আছেই। চাহিদামতো যে কোনো একটি কোর্স করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি কোর্সগুলো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি গ্রহণযোগ্য। চাকরির ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি এমন ছয়টি বিষয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস : খাবার তৈরি, টেবিল সাজানো, খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন, পানীয় ও খাদ্যতালিকা হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন ইত্যাদি বিষয় কোর্সের অন্তর্ভুক্ত।
ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন : এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো বাংলাদেশি, চায়নিজ, ইউরোপিয়ান, ইন্ডিয়ান খাবার তৈরি প্রণালি, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন।
ফ্রন্ট অফিস সেক্রেটারিয়াল অপারেশন : অভ্যর্থনা টেলিফোন ম্যানার্স, চেক ইন, চেক আউট, বিল সংরণ, হিসাব সংরণ, রেকর্ড সংরণ ও কম্পিউটারসংক্রান্ত বিষয়গুলো শিখবেন এ কোর্সে।
সার্টিফিকেট কোর্স ইন হাউসকিপিং অ্যান্ড লন্ড্রি : কসজ্জা, বেড তৈরি, কিনিং, লন্ড্রি সার্ভিস, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন, ফাস্ট এইড ইত্যাদি এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত।
বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রডাকশন : এ কোর্সে শিখবেন কেক, পেস্ট্রি, ব্রেড, কুকিজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট আইটেম প্রস্তুত, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশনের মতো বিষয়গুলো।
ট্রাভেল এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেশন : এয়ারলাইনস, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এখানে শিখবেন ট্যুর অপারেশন্স অ্যান্ড ট্যুর গাইডিং, ট্রাভেল সার্ভিস, ট্রাভেল ও কালচারাল জিওগ্রাফি বিষয়গুলো।
ভর্তির যোগ্যতা
এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে এইচএসসি পাস করতে হবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে ‘গ’ ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কারণ এখানে এটি ব্যবসা অনুষদের বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য এইচএসসিতে যে কোনো বিভাগ থাকলে চলবে।
পড়াশোনার খরচ
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনার খরচ একেবারেই কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চার বছরে খরচ পড়বে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো। এ ছাড়া দুই বছর অথবা তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে আপনাকে গুনতে হবে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
বিদেশে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ড, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমে পড়াশোনাসহ গ্র্যাজুয়েশন করার সুযোগ রয়েছে। পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভর করে এসব দেশে গড়ে উঠেছে প্রচুর হোটেল রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, ট্যুর কোম্পানি ও ট্রাভেল এজেন্সি। এসব দেশে এখনো দ পেশাজীবীর প্রচুর চাহিদা। এখনো পড়াশোনা এবং প্রশিণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো শিার পাশাপাশি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ। তাই এসব দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর শিার্থী যাচ্ছে। আপনিও চাইলে প্রয়োজনীও শর্ত পূরণ করে যেতে পারেন এসব দেশে। আমাদের স্বপ্নের এ বাংলাদেশে ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার দিন দিন বাড়ছে। আমাদের এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে আপনিও পারেন অবদান রাখতে।
আয়-রোজগার
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নতুন হলেও সমাজে ও কর্মেেত্র এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এর প্রতি শিার্থীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখানে যেমন রয়েছে পর্যাপ্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা। প্রতিষ্ঠান ও কাজভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হয়। ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারীরা কাজ শুরু করতে হবে শিানবিশ হিসেবে। এ সময় তারকা হোটেলগুলো থেকে যাতায়াত ভাড়া বাবদ কিছু টাকা দেওয়া হয়। তবে সব হোটেলে একই রকম নিয়ম নেই। শিানবিশ শেষে শুরুতে বেতন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অভিজ্ঞদের বেতন ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের একটা অংশও কর্মচারীদের দেওয়া হয়।
সূত্র : আমাদের সময়। 
