সাক্ষাৎকার : থ্রিডি এনিমেশন শিখে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক :
বাংলাদেশের থ্রিডি এনিমেশন প্রশিক্ষণের একজন পথিকৃৎ। তিনি বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মাল্টিমিডিয়া ও ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে থ্রিডি এনিমেশনের প্রসার ও রিসার্সের জন্য আভা থ্রিডি (AAVA3D) প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আরিফ আহমেদ : ১৯৯৫ সাল থেকে। পারসোনাল কম্পিউটারে উইন্ডোজ এনভায়রনমেন্ট আসার পর থেকেই বিভিন্ন গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। থ্রিডি এনিমেশন তৈরির শক্তিশালী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স এই সময়ে রিলিজ হয়। এর আগে অবশ্য পিসির থ্রিডি স্টুডিও নামে ডসওএস-এর উপযোগী একটি সফটওয়্যার ছিল। এছাড়া ম্যাকিন্টোস কম্পিউটারে ম্যাক্সওএস-এর উপযোগী ইন ফিনিডি নামে সফটওয়্যারটিও কেউ কেউ সীমিত ব্যবহার করতেন।
ক্যারিয়ার : আপনাকে বাংলাদেশের থ্রিডি এনিমেশন প্রশিক্ষণের একজন পথিকৃৎ বলা হয়। আপনার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
আরিফ আহমেদ : আমি ১৯৯০ সালে ম্যাক কম্পিউটার ব্যবহারের একটি সুযোগ পেয়ে যাই। সেই সুবাধে ফটোশপের মতো গ্রাফিক্স সফটওয়্যারের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ১৯৯৫ সালে ঘটনাচক্রে থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স সফটওয়্যারের ০.১ প্রি বেটা ভার্সন, ১২ মেগাবাইটের একটি সফটওয়্যারও আমার হাতে চলে আসে। ইতিমধ্যে পিক্সার এনিমেশন স্টুডিওর টয় স্টোরি মুভি দেখার সুযোগ হয়। থ্রিডি এনিমেশনের বিস্ময়কর জগতের আকর্ষণে মোহবিষ্ট হয়ে পড়ি। দিন-রাত থ্রিডি সফটওয়্যার আয়ত্ত করার চেষ্টাও করতে থাকি। সেই সময় রিসোর্স, টিউটোরিয়াল, ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না। ২/১ জন যারা বিজ্ঞাপনের জন্য সীমিত কিছু কাজ করতেন তারাও কোনো কিছু শেয়ার করতে চাইতেন না। সফটওয়্যারের হেল্প ম্যানুই ছিল কাজ শেখার একমাত্র রিসোর্স। এভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই থ্রিডি এনিমেশনের কিছু কাজ আয়ত্ত করে ফেলি। কাকতালীয়ভাবে তৎকালীন একটি বড় পোস্ট প্রোডাকশন হাউসে বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণে এনিমেশনের কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। পরে ৬/৭ বছরে প্রায় ২০০ মতো বিজ্ঞাপনে এনিমেশনের কাজ করি। শুরু থেকেই থ্রিডি এনিমেশনের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বুঝতে পারি। ১৯৯৬ সালে প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থ্রিডি এনিমেশনের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি। ২০০৩ সালে ড্যাফোডিল মাল্টিমিডিয়ায় চিফ থ্রিডি এনিমেটর হিসেবে যুক্ত হই। থ্রিডি এনিমেশনকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে পরবর্তী ৫ বছরে প্রায় ৬০টির মতো ২ দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ পরিচালনা করি।
ক্যারিয়ার : বাংলাদেশে থ্রিডি এনিমেশনের ভবিষ্যৎ কেমন?
আরিফ আহমেদ : আমি অবশ্যই ভালো বলব। কারণ ইতিমধ্যে এক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সফলতা পেয়েছি। আর বিশ্ব বাজারে এনিমেশন, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আশার কথা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে থ্রিডি এনিমেশন নিয়ে আগ্রহটা চোখে পড়ার মতো।
ক্যারিয়ার : থ্রিডি এনিমেশন শিখে চাকরির সুযোগ কতটুকু? এর ওপর নির্ভর করে ক্যারিয়ার গড়ার উপয়াটা জানতে চাই।
আরিফ আহমেদ : থ্রিডি এনিমেশনের কাজে দক্ষ হলে চাকরি বা কাজের অভাব হয় না। আমাদের দেশে টিভি চ্যানেল, আর্কিটেকচারাল ফার্ম, ইনটেরিয়র ডেকোরেশন ফার্ম, এনিমেশন স্টুডিও-তে কাজের সুযোগ আছে। এছাড়া বিশ্ব বাজারে মুক্ত পেশাজীবী হিসাবে কাজের ব্যাপক চাহিদা আছে। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে। থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স, মায়া, সিনেমা ফোর-ডি ইত্যাদি এনিমেশন সফটওয়্যারে দক্ষ হতে হবে। পাশাপাশি গ্রাফিক্সের অন্যান্য সফটওয়্যার যেমন, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, এডব প্রিমিয়ার, আফটার ইফেক্ট, সাউন্ডফোর্জ ইত্যাদি সফটওয়্যারও জানতে হবে। ফ্রি হ্যান্ড স্কেচিং, কালার কম্পোজিশন জানা ও বোঝা জরুরি। সর্বোপরি প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছা এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা এবং এর সঙ্গে একাডেমিক ডিগ্রি যুক্ত হলে যে কেউ থ্রিডি এনিমেশনে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। যারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন তারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করে সহজেই এনিমেশনে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
ক্যারিয়ার : যারা থ্রিডি এনিমেশন শিখতে চায় তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আরিফ আহমেদ : নিজে নিজেও থ্রিডি এনিমেশন শেখা যায় কিন্তু সেক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশি লাগবে। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল, ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেয়া। আমাদের দেশে প্রশিক্ষণের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ভালোভাবে যাচাই করেই ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া ভালো। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের সম্ভাবনা থাকে।
আরিফ আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।