মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুবর্ণ ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক :
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করা মানেই নিজেকে নৌ পেশায় সম্পৃক্ত করার সুবর্ণ সুযোগ। এ পেশার সব চাকরিই সৌখিন ও আনন্দময়। সমুদ্রযাত্রা কে না ভালোবাসে। আপনিও পারেন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার হিসেবে এ সৌখিন পেশাকে বেছে নিতে। আর এ পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আপনাকে কি কি করতে হবে এ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন-
- কোথায় পড়বেন
দেশের মোট দুটি সরকারি ও একাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করানো হয়। সরকারি দুটি হল- বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নারায়ণগঞ্জ ও পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি চট্টগ্রাম।
- পড়শোনা ও ভর্তির যোগ্যতা
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর সরকারি ও বেসরকারি প্রতেষ্ঠানে রয়েছে ৪ বছর ও দু’বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। সব প্রতষ্ঠিানে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোনো বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির আবদেন করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উল্লেখ্য, একজন শিক্ষার্থী পরপর তিন বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ব্যতিক্রম পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে এইচএসসি বা আলিম পরবর্তী শিক্ষার্থীরা কেবল আবেদন করতে পারবে।
- পড়াশোনার খরচ
সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ একেবারেই কম। এখানে খচর পড়বে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খচর একটু বেশি এখানে প্রতিষ্ঠান ভেদে খচর পড়বে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো।
- কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো-
* ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪ বছর
* ডিপ্লোমা ইন শিপবিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪ বছর
* মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন আর্টিফিসার- ২ বছর
* শিপ ফেব্রিকেশন- ২ বছর
* শিপবিল্ডিং ওয়েল্ডিং- ২ বছর
* শিপবিল্ডিং ড্রাফসম্যানশিপ- ২ বছর
- ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার গড়তে অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেমন- স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, দুবাই ইত্যাদি দেশে চাকরির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষাও নিতে পারবেন। বাংলাদেশ শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন, খুলনা শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ডে রয়েছে চাকরির ব্যাপক চাহিদা। বাংলাদেশ নেভি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি ইত্যাদি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। দেশী-বিদেশী জাহাজে নাবিকসহ ভালো মানের চাকরি রয়েছে।
এছাড়াও আপনি পাওয়ার প্লান্ট ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এবং ডিজাইন সেকশনে চাকরি করতে পারবেন। মোটকথা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংদের রয়েছে বহুমুখী উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের হাতছানি।
- আয়-রোজগার
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পর বেকার থাকা বা কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখানে আয়-রোজগারের বিষয়টা প্রতিষ্ঠানভেদে হয়ে থাকে। অনেকটা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। নারায়ণগঞ্জ মেরিন ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ এম আকরাম আলী জানান, একজন ছাত্র পেশাগত জীবনে বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করতে পারবে ও দেশি জাহাজ বা অন্য প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারে। বিদেশী জাহাজে চাকরিরত অফিসার মাসুদ আহমেদ জানান, এখানে থাকা-খাওয়া ও বেতন সবকিছুই মানসম্মত।
- উচ্চশিক্ষা
দেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে আপনি উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশে বুয়েটে এমএস/এমএসসি ও পিএইচডি করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ পেশার ওপর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এছড়াও বিদেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্বলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পার্টটাইমে চাকরির সুযোগ আছে। সুতরাং দেশের জাহাজ শিল্পের গুণগত মান বিকাশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে এ সৌখিন ও আনন্দময় পেশায় গড়ুন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার।
সূত্র : দৈনিক যুগান্তর ।