ডাক্তারি পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিদেশে বাংলাদেশের প্রচুর প্রকৌশলী কাজ করেন, তবে ডাক্তারেরা তুলনামূলকভাবে অনেক কম আসেন। বিশেষ করে আমেরিকায় ডাক্তারদের আসাটা অনেক কঠিন। কারণ প্রকৌশলীরা যেমন মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েট স্টাডি করতে পারেন, ডাক্তারদের রাস্তাটা সেরকম না। তবে তার পরেও ভারত বা পাকিস্তান থেকে প্রচুর ডাক্তার ঠিকই আসছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশের ডাক্তারেরা অনেক কম আসেন। কারণটা মূলত তথ্যের অভাব।
বাংলাদেশের মেডিকেল ডিগ্রি আমেরিকায় আধা স্বীকৃত। আধা কারণ হলো মেডিকেল কলেজ অনেকগুলাই আমেরিকার Educational Council for Foreign Medical Graduates (ECFMG) দ্বারা স্বীকৃত। তবে, বাংলাদেশের ডাক্তারেরা সরাসরি আমেরিকায় প্রাকটিস করতে পারেন না। এখানে প্রাকটিস করতে হলে প্রথমে United States Medical Licensing Examination (USMLE) পরীক্ষা পাস করতে হয়। তার পর এখানকার কোনো হাসপাতালের রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে ৩ থেকে ৪ বছরের রেসিডেন্সি করতে হয়।
বাংলাদেশের যত বাঘা ডিগ্রিই থাকুক না কেনো, এই দুইটা কাজ করতেই হবে। এমনকি ব্রিটিশ সিস্টেমের ডিগ্রি যেমন MRCP, FRCS বা এরকম যাই থাকুক না কেনো, এবং যত বছরের অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেনো, USMLE পাস করা ও রেসিডেন্সি করাটা বাধ্যতামূলক।
আমেরিকায় সব ডাক্তারকে (এমনকি যারা এখানে ডাক্তারি পড়েছে তাদেরকেও) এই ধাপগুলা পেরুতে হয়। ইউরোপের/অস্ট্রেলিয়ার বা দেশের–বিদেশের হাজার ডিগ্রি থাকলেও কোনো ছাড় নাই।
ইউএসএমএলই কী
USMLE পরীক্ষাটা ডাক্তারদের চিকিৎসা বিষয়ের জ্ঞান এবং ব্যবহারিক দক্ষতার পরীক্ষা। USMLE এর মোট পরীক্ষা ৪টা।
- USMLE Step 1
- USMLE Step 2 CK
- USMLE Step 2 CS
- USMLE Step 3
এর মধ্যে USMLE Step 2 CS হলো ব্যবহারিক পরীক্ষা। বাকিগুলা MCQ।
MCQ পরীক্ষাগুলা দিতে হয় Prometric Center এ। আর স্টেপ ২ CS দিতে হয় আমেরিকার ৫টা শহরের কোনো একটায় (শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টন, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস)।
আবাসন ব্যবস্থা
USMLE এর পুলসিরাত পেরুতে পারলে হাতে মিলে ECFMG এর MD সার্টিফিকেট। (স্টেপ ৩ বাদে বাকিগুলা পাস করলেই এটা দেয়)। পরের ধাপ হলো আবাসনের জন্য আবেদন করা। সেটা আরেক এভারেস্ট জয়ের মতো কাজ।
আমেরিকার সব মেডিকেল প্রোগ্রাম কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদন নেয়। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হয়। রেকমেন্ডেশন লেটার লাগে ৪/৫টা। আর প্রচুর খরচ করে আবেদন করতে হয় একেক প্রোগ্রামে, লিখতে হয় পার্সোনাল স্টেটমেন্ট নামের একটা রচনা।
আবেদন করার পর অপেক্ষার পালা। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারভিউ সিজন। সেসময়ে যদি ভাগ্যে শিকা ছিড়ে, তাহলে ইন্টারভিউয়ের ডাক মিলবে। নিজের খরচে সেখানে গিয়ে সরাসরি ১ দিন ধরে ইন্টারভিউ দিতে হবে।
কিন্তু এই ইন্টারভিউয়ের ডাক পাওয়াটা আরেক অসম্ভব ব্যাপার। কারণ অধিকাংশ প্রোগ্রামেই হয় (১) বিদেশি গ্রাজুয়েট নিবে না, বা (২) ৫ বছরের বেশি আগে পাস করা কাউকে নিবে না।
বাংলাদেশের একজন ডাক্তার পাস করার পরে USMLE দিয়ে সারতে সারতে আসলে ৫ বছর শেষ হয়েই যায়। কাজেই খুব অল্প যেসব প্রোগ্রামে ৫ বছর আগের এবং বিদেশী গ্রাজুয়েটদের নেয়, সেখানেই সুযোগ মিললেও মিলতে পারে।
ইন্টারভিউ যদি মিলে, তার পরে ফেব্রুয়ারি–মার্চে হয় আরেক ধাপ, Match। ডাক্তারেরা নিজেরা যেখানে ইন্টারভিউ দিয়েছেন, তার একটা র্যাঙ্কিং করেন। কোনটা ১ম পছন্দ, কোনটা ২য়, এরকম। আর প্রত্যেক হাসপাতালেও এভাবে আবেদনকারীদের রাংকিং করে, কাকে ১ম পছন্দ এরকম। এই দুই তালিকা মিলে একটা match algorithm চালিয়ে ম্যাচ হয়।
যদি এই সব পুলসিরাত পেরোনো হয়, তাহলে মিলে রেসিডেন্সি, জুলাই ১ থেকে শুরু হয়। ৩ থেকে ৪ বছর দিনে ১৪–১৬ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ দিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে তার পর মিলে ডাক্তার হিসাবে স্বীকৃতি।
পুরা ব্যাপারটায় আর্থিক সঙ্গতি থাকাটা অনেক জরুরি। USMLE এর কোচিং করা যায়, কিন্তু সেটার খরচ পরীক্ষা প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার ডলার। আর পরীক্ষার ফী ৭০০ থেকে ১২০০ ডলার। রেসিডেন্সি এপ্লিকেশন অন্তত ১০০টা হাসপাতালে করতে হয়, তার খরচ প্রায় হাজার খানেক ডলারের উপরে।