এইচএসসির পর কী পড়বেন?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশের নামকরা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের স্বপ্ন কার না থাকে। স্বপ্নপূরণ করতে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হতে পারেন ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের সর্বোচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর করতে পারবেন স্নাতকোত্তর। হতে পারবেন বিভিন্ন বিষয়ের স্পেশালিস্ট। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কেউ বা কেমিস্ট আবার অনেকেই পদার্থবিদ্যায় পারদর্শিতা দেখিয়ে হতে পারেন বিজ্ঞানী। প্রাণিবিদ্যায় পড়ে হবেন প্রাণিবিদ। আবার উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিতের মতো অনেক ভালো বিষয়গুলোতে হতে পারেন বিশেষজ্ঞ। ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয় আইবিএ, বিবিএ অথবা অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট। কলা বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে হতে পারবেন অর্থনীতিবিদ। কেউবা আবার হয়ে যাবেন ইতিহাসবেত্তা, দার্শনিক। চারুকলা আর আইন অনুষদে পড়াশোনা করে হয়ে যেতে পারেন শিল্পী ও আইনজ্ঞ। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন আরও অনেক ভালো ভালো বিষয় আছে। এখানকার আরেকটি সুবিধা হল পড়াশোনার খরচ অত্যন্ত কম। থাকা খাওয়ার জন্য রয়েছে আবাসিক হল ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নের দিনগুলো শেষ করতেই আপনার জন্য অপেক্ষমাণ থাকছে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা শিক্ষার্থীর তুলনায় কম। ফলে আপনাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যার জন্য প্রস্তুতি ও ভর্তি পরীক্ষা হওয়া চাই সর্বোচ্চ ভালো।
প্রকৌশলী হতে ইঞ্জিনিয়ারিং–বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ
ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর ও যুগোপযোগী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), খুলনা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট ও চুয়েট) প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিদ্যার বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে।
এখান থেকে পড়াশোনা শেষে বের হবেন একজন আন্তর্জাতিক মানের প্রকৌশলী হিসেবে। প্রকৌশল বিদ্যার সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার সফটওয়্যার, অটোমোবাইল প্রভৃতি বিষয়ের ওপর পড়তে পারবেন বিএসসি ও এমএসসি। তবে এখানে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তবে আপনাকে পাস করতে হবে। প্রকৌশল বিদ্যায় বিএসসি ও এমএসসি শেষ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ থাকে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেন। তাছাড়া গওঝঞ তে ভর্তি হয়ে পড়তে পারেন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল বৈমানিক। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার পর কাজের পরিসর অনেক বড়। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা
সেবামূলক ও সম্মানজনক পেশা চিকিৎসক পেশা। এইচএসসি পাসের পর দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে পড়তে পারেন এমবিবিএস কোর্স। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার উত্তম পেশা ডাক্তারি পেশা। আত্মসেবামূলক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার এক অনন্য সুযোগ রয়েছে এই পেশায়। রয়েছে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার বহু পথ। এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছর মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সেজন্য আপনাকে নামতে হবে অগ্নিপরীক্ষায়। পাল্লা দিতে হবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। নৈর্বক্তিক পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো করতে হবে। আসন সংখ্যা সীমিত কিন্তু পরীক্ষার্থী অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভাগ করে দেয়া হবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ। সরকারি মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। তবে সরকারির তুলনায় বেসরকারিতে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি। সরকারি মেডিকেলের পড়ার মানও অনেক ভালো। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে জোরেশোরে। ডেন্টাল কলেজেও একই অবস্থা। সরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তির জন্য ও ভর্তি প্রয়োজনীতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারি পেশায় সম্মানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথও আছে অনেক।
কৃষিবিদ হতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। কৃষিকে আরও বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করতে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। সেজন্য আপনাকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানের জন্য দেশে রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি কলেজ। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যা ময়মনসিংহে অবস্থিত। এছাড়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রভৃতি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এগ্রিকালচার, ফিশারিজ, ভেটেরিনারি, এগ্রোনমি, হর্টিকালচার এগ্রো ইকোনমিক্স প্রভৃতি বিষয়ের ওপর বিষদ জ্ঞান অর্জন করে কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে লিপ্ত হয়ে উঠতে পারেন সফল কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানী। কাজের ক্ষেত্র রয়েছে অনেক। হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। গড়তে পারেন কৃষি খামার। চাকরি করতে পারবেন বিভিন্ন বীজ ও কীটনাশক কোম্পানিতে। এছাড়া বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার ব্যয় খুবই কম। এখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে রয়েছে সম্মানজনক চাকরির সুযোগ।
সেবিকা হতে নার্সিং
মেয়েদের জন্য উত্তম পেশা হতে পারে নার্সিং। নার্সিং কলেজগুলোতে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে পড়ানো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে। আর প্রার্থীদের অবশ্যই মেধাবী হতে হবে। কারণ মেডিকেল কলেজের মতোই নার্সিং কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই যোগ্যতা লাগবে। সরকারি নার্সিং কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি নার্সিং কলেজগুলোতেও পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চাকরির সুযোগ রয়েছে। নার্সিং পেশায় আয় রোজগারও বেশ ভালো।
মার্চেন্ডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিং
পোশাক খাত সব থেকে সম্ভাবনাময় খাত। রফতানি আয়ের বৃহৎ একটি অংশ আসে এ খাত থেকে। ফলে এই শিল্পে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যার জন্য আপনাকে হতে হবে দক্ষ মার্চেন্ডাইজার বা ফ্যাশন ডিজাইনার। বিজিএমইএ ও শান্ত-মরিয়ম-এর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। ফ্যাশন ডিজাইনিং, মার্চেন্ডাইজিং, গার্মেন্টস ডিজাইনিং, প্যাটার্ন মেকিং, অ্যাপারেলস প্রভৃতি বিষয়ে স্নাতক করতে পারবেন। এসব বিষয়ে ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয় এখন এ খাত।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে পড়ার সুযোগ রয়েছে। বিদেশের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে করতে পারেন সুপ্রতিষ্ঠিত। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠান। তবে এর জন্য আপনাকে IELTS টেস্টে ভালো নম্বর পেতে হবে।
অন্যান্য
এইচএসসি পাসের পর পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স করতে পারবেন। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রোফেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। CAT, ACCA এর মতো আন্তর্জাতিকমানের কোর্সগুলো সম্পন্ন করে চাকরি করতে পারবেন বিশ্বের প্রায় সব দেশে। পড়তে পারেন সিএমএ বা কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস, ব্যবস্থাপনা আর হিসাব শাখায় দক্ষ পেশাজীবী হতে এ কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। দ্য ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এ কোর্সের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে।