সফল ফ্রিল্যান্সার ফারহান রিজভীর গল্প

সফল ফ্রিল্যান্সার ফারহান রিজভীর গল্প

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক 

ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশ জন্য একটি সম্ভাবনাময় পেশা। ফ্রিল্যান্সিং আর ইচ্ছাশক্তির  মাধ্যমে যেকেউ তার ভাগ্যের  চাকা ঘুরাতে পারেন।আর ঠিক সে ভাবেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি বিভাগে ছাত্র ফারহান রিজভী ।


ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশ জন্য একটি সম্ভাবনাময় পেশা। ফ্রিল্যান্সিং আর ইচ্ছাশক্তির  মাধ্যমে যেকেউ তার ভাগ্যের  চাকা ঘুরাতে পারেন।আর ঠিক সে ভাবেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি বিভাগে ছাত্র ফারহান রিজভী। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন একটি কোম্পানীর প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসাবে। এছাড়া  তিনি কাজ করেন আপওয়ার্ক সহ অন্যকিছু মার্কেটপ্লেসে এবং গ্রাফিক্স টেইনার হিসাবে আছেন একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানে।তার এ ফ্রিল্যান্সিং জীবন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন মাহবুবর রহমান সুমন এর সাথে।

আপনার ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু কিভাবে?

 আমি ২০০৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরু করি। তখন আমার কম্পিউটার ছিল না। তাই মোবাইলের মাধ্যমেই শিখতাম আর মোবাইল ওয়েব সাইট তৈরি করতাম। যদিও তখন জানতাম না যে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আয় করা যায়। পরে ২০১১ সালে এসে ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার পর ফ্রিল্যান্সিং শব্দের সাথে পরিচয়। তখন ২-৩টা কাজ করেছিলাম আর্টিকেল রাইটিং, এসইও এর। তবে সেগুলো নিয়মিত ছিলনা। এরপর রাসেল আহমেদ ভাইয়ের আর আর ফাউন্ডেশনের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখার পর আমি বুঝতে পারি একটা ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার কেমন হওয়া উচিত, ক্লায়েন্টদের সাথে কেমন কাজ করতে হয়।যেহেতু আগে থেকেই আমি মোটামুটি HTML, CSS এগুলো শিখে ফেলেছিলাম, তাই বুঝতে সুবিধা হয়েছিল। এভাবেই আমার শেখার শুরু। এরপর পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করি ২০১৩ সালে।

ফ্রিল্যান্সিং এ প্রথম কোন কাজ করেছিলেন এবং প্রথম পেমেন্ট কত পেয়েছিলেন?

 প্রথম কাজ করেছিলাম একটা এসইও এর। সেটা ছিল মাত্র ৫ ডলারের। কাজটা ছিল ১০টা লিঙ্ক খুজে দেয়ার।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পেয়েছিলেন কোথা থেকে?

 আমি এইচএসসিতে প্রত্যাশামত ফলাফল করতে পারিনি। রেজাল্টের পর অনেকেই অনেক কথা বলল। তখনই ভেবেছি সবাইকে ভুল প্রমাণ করবো। নিজের টাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়বো। আগে থেকেই ওয়েব ডিজাইনটা জানতাম। সেটার উপর ভরসা করেই শুরু করে দিয়েছিলাম। মূলত এই জিদের কারণেই ফ্রিল্যান্সিং এ আসা। আর ফেসবুকে তখন দেখতাম যে অনেকেই ভাল করছে। ওখান থেকে উৎসাহ পেতাম।

পরালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কে কিভাবে দেখেন?

 আমি নিজে একজন ছাত্র। তাই আমি যদি বলি পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। তবে এই পড়ালেখারও একটা লেভেল আছে। অর্থাৎ, যদি কেউ এইচএসসি এর আগে ফ্রিল্যান্সিং-এ আসতে চায়, আমি অবশ্যই “না” বলবো। কারণ, স্কুল এবং কলেজ লাইফটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন একজন ছাত্রের জন্য। এই সময়ে সে যদি ফ্রিল্যান্সিং এ সময় দেয়, তাহলে তার শিক্ষা জীবনের বেসিকটা নষ্ট হয়ে যাবে। জীবনের লক্ষ্য শুধুমাত্র “ফ্রিল্যান্সিং” হওয়া উচিৎ নয়। তবে আমি শেখার জন্য “না” বলি না। কেউ যদি পড়াশুনার পাশাপাশি শেখার জন্য ২ঘন্টা সময় দেয়, তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু, কাজকে একেবারেই “না” স্কুল-কলেজ লড়ালেখা

ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো পারফরমেন্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত? 

 ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করার মানসিকতা আর বিনয়।

একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার মুলমন্ত্র কি কি?

আমি মনে করি শুধু সফল ফ্রিল্যান্সার না, যেকোনো কাজে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হলোঃ -নিজের ইচ্ছাকে জানা। -যা কিছু হোক না কেন, লক্ষ্য ঠিক রাখা। -কঠোর পরিশ্রম করা। -বিনীত হওয়া। কারন, আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজের ইচ্ছা কী বা আমরা কোন কাজ করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করি সেটাই জানি না বা জানার চেষ্টা করি না। অত্থচ এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা। কিভাবে বাংলাদেশ এ সুযোগকে আরও বেশি কাজে লাগাতে পারে? 

প্রথমেই এসব ৫ দিনের ট্রেনিং, ১০দিনের ট্রেনিং বাদ দিয়ে, দলবেঁধে সবাইকে না শিখিয়ে যারা এসব কাজ মোটামুটি পারে তাদেরকে আরো ভাল প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারলে এই সেক্টরে অনেক উন্নতি আনা সম্ভব। মাথায় রাখা উচিৎ যে, ফ্রিল্যান্সিং ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাঙ্কারদের মতই একটা পেশার নাম। সবার জন্য ফ্রিল্যান্সিং না।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে সরকারের কাছে কি কোনো চাওয়া আছে?

পেমেন্ট ব্যবস্থাটাসহজলভ্য করা উচিৎ। আমরা এখনো পেপাল পাই নি। আর গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে, নাহলে এই সেক্টরে নতুনরা আসার সুযোগ পাবে না।

বায়াররা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কেমন মূল্যায়ন করে বলে মনে করেন?

একটা কথা আছে, “আপনি ভালো তো জগত ভালো”। আপনি যদি বায়ারের সাথে সঠিকভাবে ডিল করেন, বায়ার আপনাকে তেমনভাবেই মূল্যায়ন করবে। বায়াররা সাধারনত ফ্রিল্যান্সার কোন দেশের সেটা দেখে না। তারা কাজ ভাল পেলেই খুশি। কিন্তু কিছু কিছু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারের কারনে অনেক বায়ার বাংলাদেশীদের সাথে কাজ করতে চায় না। যেটা দুঃখজনক। ঠিক তেমনি অনেক বায়ার কিন্তু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের কাজ থেকে অনেক ভাল কাজ পেয়ে আবার আমাদেরকেই হায়ার করতে চায়। অর্থাৎ ভাল খারাপ দুইটা দিকই আছে এখানে।

আপনি নিজেকে এখন থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে কোথায় দেখতে চান? 

আমার কিছু স্বপ্ন আছে, সেগুলো পূরন করতে চাই। নিজেকে একটা হাসিখুশি, ভালোমানুষ হিসেবে দেখতে চাই ৫ বছর পরেও।

নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চায় তাদের জন্য কি গাইড লাইন দিবেন? 

 আগেই বলেছি, নিজের ইচ্ছাকে জানতে হবে। আপনার পরিচিত কোন বড় ভাই বা আপু কোনো কাজ করে সফল হয়েছে মানে এই না আপনিও ঐ কাজ করে সফল হবেন বা ঐ কাজ শিখতে পারবেন। যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চান, আগে ঠিক করুন আপনি কোন কাজটা করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করছেন। যদি কাজগুলোর সম্পর্কেই না জানেন তাহলে ইন্টারনেটে আগে কাজগুলো সম্পর্কে জানুন, যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। এরপর ঠিক করুন আপনি কোন কাজ করতে পারবেন। আর তারপর শেখার জন্য রিসোর্সের অভাব নেই ইন্টারনেটে। শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা।

নতুন বা ভবিষ্যৎ ফ্রিল্যান্সারদের আরও উৎসাহিত করতে আপনার কোন উপদেশ আছে কি?

সবার জীবনেই কষ্টের সময় আসে। আর কষ্টের সময়ে যারা ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারে, তারাই সফল হয়। যারা কষ্টের কাছে হার মানে তারা হারিয়ে যায়। যদি সফল মানুষদের জীবনগাঁথা পড়েন, দেখবেন সবাই একসময় অনেক কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু ধৈর্য্য হারায় নি। তাই, জীবনের কষ্টের সময়ে আশা না হারিয়ে কাজ করতে থাকুন, লেগে থাকুন। সফলতা আসবেই।

সূত্র: প্রিয় ডট.কম

Sharing is caring!

Leave a Comment