হচ্ছে না পদোন্নতি বাড়ছে না বেতন ?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
অনেক দিন ধরে একই জায়গায় আটকে আছে বেতন। পদোন্নতিও হচ্ছে না কয়েক বছর ধরে। এ কারণে ভীষণ হতাশ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সজীব। এ অবস্থা হতে পারে অনেকের বেলায়। এ পরিস্থিতিতে কর্মীরও অনেক করণীয় আছে। প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী উপযুক্ততা বিবেচনা করে পদোন্নতি দিয়ে থাকে। কাউকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ইনক্রিমেন্ট নিয়েই। কারো আবার কোনোটাই জোটে না। এ ক্ষেত্রে কর্মীর কর্মদক্ষতা, একাগ্রতা, সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও প্রয়োজনটাও বিবেচ্য। এই দুইয়ে দুইয়ে চার না মিললে অনেক ক্ষেত্রে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি। আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা কাজী রাকিব উদ্দিন আহমেদ জানান, পদোন্নতিবঞ্চিত হলে হতাশ হয়ে পড়লে মুশকিল। এ সময় নিজেকে সামলে নিতে হবে, সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। তা না করতে পারলে পেশাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যক্তিজীবনেও দেখা দিতে পারে হতাশা, উদ্বেগ আর অস্থিরতা। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা করাটা জরুরি।
বেতন না বাড়লে
কর্তাব্যক্তিদের বেতন বাড়ানোর কথাটি বোধগম্য করে তোলা কঠিন কাজ, তবে অসম্ভব নয়। অনেক সময় দেখা যায়, বোঝাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তাই বিষয়টি সামনে আনতে হবে সময় ও পরিস্থিতি বুঝে। ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন) এস এম জাহিদ হাসান জানান, বসদের বোঝাতে চেষ্টা করুন, আপনার বেতন বাড়ালে প্রতিষ্ঠানেরও উন্নতি হবে। চাহিদা নির্দিষ্ট একটি সীমানার মধ্যে থাকলেই ভালো। শুধু বেতনের ব্যাপার নয়, আরো অন্য কিছু বিষয় নিয়েও আলাপ-আলোচনায় বসতে পারেন। কারণ কেবল বেতন দিয়েই কর্মক্ষেত্রের সুযোগ-সুবিধা বিচার করা কঠিন। তাই আলোচনায় উঠে আসতে পারে আপনার প্রতিষ্ঠানের লাভের হিসাব, সাম্প্রতিক অগ্রগতি, কাজের মূল্যায়ন, বোনাস, পদোন্নতির হালচাল, ছুটিসহ নানা বিষয়।
আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন
পদোন্নতির বিষয়ে ‘না-সূচক’ খবর শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যান অনেকেই। ক্ষোভে ফেটে পড়েন, হতাশায় মুষড়ে পড়েন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সবাই আপনাকে লক্ষ করছে। মুহূর্তের অপেশাদার মনোভাব, বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ আপনার সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে কর্তৃপক্ষের কাছে। নষ্ট হতে পারে আপনার দীর্ঘদিনের সুনাম। তাই তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন। আপনার চেয়ে উঁচু পদের হোক বা নিচু পদের, যাঁরাই পদোন্নতি পেয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন জানান। নিজ বিভাগের বাইরে অন্যদেরও শুভেচ্ছা জানান। অফিসের পরিচিত অনেকেই নিজে থেকে আপনার কাছে তাঁদের সুখবর নিয়ে আসতে পারেন। সবাইকে হাসিমুখে অভিনন্দিত করুন। হীনম্মন্যতায় ভোগার কিছু নেই। কারণ পদোন্নতি না পাওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনার দীর্ঘদিনের অর্জন বৃথা গেছে।
বসের সঙ্গে বসুন
বসের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিন। বিনয়ের সঙ্গে আপনার প্রত্যাশা ও না-পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করুন। নম্রভাবে প্রকৃত কারণটি জানতে চান। আপনাকে আরো কী কী বিষয়ে যত্নবান হতে হবে বা কী কী বিষয় শুধরে নিতে হবে, বিনীতভাবে জানার চেষ্টা করুন। মূল্যায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হলে বসকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। প্রশ্নের উত্তরেই আপনার প্রতি বসের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হবে। কোনো অবস্থায়ই তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না।
পুনর্বিবেচনার সুযোগ না থাকলে নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার ফিরিস্তি না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা, পরিকল্পনা ও নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন। পেশাজীবনে উন্নয়নের জন্য কোন কোন বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকা দরকার, এসব বিষয় তিনি বলতে চাইলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়টিও নিয়ে আসুন বসের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে। এতে আপনার আগ্রহ প্রকাশ পাবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি আপনাকে কিভাবে রাখতে চান, সেটিও জেনে নিতে চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার জন্য নিজের বিষয়ে পরিকল্পনা করাটাও সহজ হবে।
নিজের সামর্থ্যের পরীক্ষা নিন
ডায়মন্ড মেলামাইনের নির্বাহী পরিচালক মিনহাজ আহমেদ আদর মনে করেন, ঠাণ্ডা মাথায় আত্মমূল্যায়নে মনোনিবেশ করুন। বিগত বছরে প্রতিষ্ঠানের কী কী কাজ সফলভাবে করেছেন, তার একটা তালিকা তৈরি করুন। পাশাপাশি যা করতে পারেননি, তা-ও লিখে ফেলুন। এই কাজগুলো করতে পারা না-পারার মধ্যে নিজের ভুলগুলো উঠে আসবে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতারও পরীক্ষা নিতে পারবেন নিজে নিজেই। কারণ আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন, আপনি কী পারেন এবং কী করেছেন বা কী করতে পারেননি। মিলিয়ে দেখুন, আরো কী কী করা দরকার ছিল। এবার নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখুন, আপনার কতটুকু প্রাপ্য ছিল আর কতটুকু বঞ্চিত হয়েছেন।
শুরু হোক ব্যর্থতা থেকেই
আত্মমূল্যায়ন শেষে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবই আপনাকে তাগিদ দেবে নতুন করে শুরু করার। ভুলগুলো শুধরে এখানে কাজ করলে কত দূর যাওয়া সম্ভব, তা-ও ভেবে দেখুন। নতুন উদ্যমে শুরু করুন। শুধু নিজের ভালোটা দেখলেই হয় না, বুঝতে হবে প্রতিষ্ঠান ও কর্তাব্যক্তিদের লাভ। কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করুন, তাঁরা যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন, তাতে আপনার সমর্থন আছে। কোনো কিছু করার আগে বুঝতে চেষ্টা করুন, প্রতিষ্ঠান কী চাইছে। এতে অবশ্যই সুফল আসবে। নিজেও নতুন নতুন পরিকল্পনার কথা জানান। নতুন প্রস্তাব করার আগে তা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কতটা চলনসই তা খেয়াল রাখুন। আপনার প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নিলে তা কতটা কার্যকর হবে, প্রথমেই এটা দেখতে চাইবে প্রতিষ্ঠান।
খোলা থাক বিকল্প পথও
অনেক চেষ্টার পর কর্তাব্যক্তির মন গলাতে না পারলে বিকল্প পথ খোলা রাখুন। বিকল্প পথ তৈরি করে রাখতে হবে আগে থেকেই। এটা থাকলে দেনদরবারে সুবিধা করতে না পারলেও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করে ফেলতে পারবেন আপনি।
পদোন্নতি বা বেতন নিয়ে একেবারেই অসন্তুষ্ট থাকলে নতুন কোনো চাকরির খোঁজ করুন। তবে চাকরি পাল্টালেই যে ভালো কিছু পাওয়া যাবে, তারও কিন্তু নিশ্চয়তা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিন বুঝে-শুনে। যেখানেই কাজ করুন না কেন, আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাই মোক্ষম হাতিয়ার। এটি কাজে লাগিয়েই আপনাকে উন্নতির পথ তৈরি করে নিতে হবে।