স্বপ্নের সমান হতে চাই!
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
হূদিতার খুব ছোট্টবেলা থেকেই ছবি আঁকার শখ ছিল, টিফিনের জমানো টাকায় রংতুলি বা কার্টিজ কিনে নিজেই দারুণ দারুণ সব ছবি এঁকে বন্ধুদের উপহার দিত সে। এরপর বড় হয়ে যখন স্কুলের এক বড় আপুর কাছে চারুকলার কথা শুনল, স্থির করেই ফেলল সে, চারুকলাতেই ভর্তি হতে হবে। আব্বু-আম্মু দিলেন না সায়, ভর্তি পরীক্ষার সুযোগটাও সে পেল না! অন্যদিকে ধ্রুবর ছোটবেলা থেকে গল্পের বইয়ে ডুবে থাকতে থাকতে কখন যে দারুণ হাত চলে এসেছে লেখালেখিতে, তা সে নিজেও জানে না। খুব ইচ্ছা তার সাংবাদিকতাতেই পড়তে হবে। অথচ তাকেও পরিবারের ইচ্ছাতে পড়তে হচ্ছে প্রকৌশলশাস্ত্রে। প্রশ্ন হলো, হূদিতা আর ধ্রুব কি এখানেই থেমে যাবে? কিন্তু না, তারা আসলেই স্বাপ্নিক হয়ে থাকলে স্বপ্নলোকের পথ ধরে এগোবেই। সমুদ্রসমান প্রত্যাশা, শিশিরবিন্দু সে পথে কোনো বাধাই না। আমাদের দেশটা যেহেতু এখনও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে, সব সৃজনশীল পেশা বা কাজেই এখন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তারুণ্যের ছোঁয়ায় সেগুলো প্রাণবন্ত হচ্ছে। কিন্তু বাবা-মায়েরা চান আমাদের এমন কোনো জায়গায় দেখতে, যেখানে কিনা নিশ্চিত সাফল্যের হাতছানি। এর মানে কিন্তু এই নয়, আমাদের বাবা-মায়েরা বড্ড সেকেলে। এর মানে এই, বাবা-মায়েদের সামনে আমার ইচ্ছাকে ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারা। শুদ্ধ দারুণ ছবি তোলে, বাবার তাতে কোনো আগ্রহ নেই, ক্যামেরা কিনে দেওয়ার কথা তাই সে বলতেই পারে না, ছবি তুলতে দূরে কোথাও যাওয়ার কথা তো আরও ‘দূরের কথা’। বন্ধুর থেকে ধার করা ক্যামেরায় তোলা বাসার ছাদে ঝরে পড়া এক ফুলের ছবিই শুদ্ধকে এনে দেয় বিশাল এক পুরস্কার। এরপর বাবাই তাকে ক্যামেরা কিনে দিলেন। শুদ্ধ যদি প্রথমেই ক্যামেরা নেই, ক্যামেরা নেই করে ঘুরঘুর করত, তার হয়তো এই সুযোগটাই আসত না!
অভ্র লেখালেখি করে পত্রিকায়। মাকে নিয়ে দারুণ এক স্মৃতিকথা লিখেছে সে। স্থানীয় পত্রিকা অফিসে দিতে গেল, তারা বলল, তুমি কে হে বাপু? কী করেছ? যে তোমার মায়ের গল্প মানুষকে জানাতে হবে? হতাশ হয়ে এক জাতীয় দৈনিকের পাঠক পাতায় পাঠিয়ে দিল, ছাপাও হলো। সেখানেই শেষ হতে পারত, না হয়নি। অন্য পত্রিকার এক সাব এডিটর লেখাটি পড়ে তাকে ডেকে নিয়েছেন তার পাতায় লেখার জন্য। আসলেই এভাবেই সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমাকে বলুন তো, এরকম ক’জন আছে সফল ব্যক্তি, যার গল্প এরকম যে, জন্ম নিল, স্কুলে গেল, ফার্স্ট হলো, চাকরি পেল, বিয়ে করল, গল্প লিখল, বিখ্যাত হলো, মরে গেল? সবারই গল্পে একটা মোড় আছে। আপনার জীবনের মোড়টার সন্ধান করছেন তো? আমাদের বাবা-মায়েরা এই বিষয়গুলোর আগে জোর দেন আসলে পাঠ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার উপর। সেটাই বা কেন দেবেন না? আমাদের জীবনের তাগিদেই তো আমাদের এই বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে। সুন্দর একটা ফোন থাকলেই চলে না, সংযোগ থাকা সবার আগে দরকার। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা আমাদের জীবনের সেই সংযোগ, এরপর বাকি সব সেই জীবনকে সুন্দর করার জন্য। আর বাবা-মা যদি সেটা বুঝতে পারেন যে, তাদের ছেলেমেয়ে ঠিকঠাক লেখাপড়া করছে, পাশে ছবি আঁকছে, গল্প লিখছে, সেদিকাটাতেও সুনাম কুড়াচ্ছে, তাতে তারা আনন্দই পান, কেন বাধা দিবেন? এটাও সত্যি সবসময় সবকিছুতে সায় পাওয়া যায় না। কিছু ব্যতিক্রম হতেই পারে, তাই বলে থেমে তো আর যাওয়া যাবে না। আমাদের স্বপ্ন দেখতে তো আর কেউ বাধা দিতে পারবে না, তাই না? যে কাজ করার প্রয়োজন হোক, যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়া দরকার হোক, শখটা তো শখই। আমরা এরকম অনেকের উদাহরণ দিতে পারি, যে কিনা প্রকৌশলী হয়েও আজ লেখক, ডাক্তার হয়েও সাংবাদিক, ইসলামের ইতিহাস পড়ে পুলিশ অফিসার অথবা অর্থনীতি পড়ে দারুণ আঁকিয়ে। বিষয়ভিত্তিক কাজের সুযোগ যে আমাদের দেশে তৈরি হয়নি তা না, তবে সৃজনশীল মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলই যথেষ্ট। আশপাশের মানুষগুলো অনেক কথাই বলতে পারে, বন্ধুরাও পরামর্শের ঝুলি নিয়ে বসবে, তবে এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যাওয়া মানেই সফলতার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। আমরা যেন থমকে না যাই, বাস্তবতার দোহাই দিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভুলে না যাই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই, আমরা স্বপ্নের সমান হতে চাই!