সাক্ষাৎকার: ‘শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার সচেতন না’
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশের ফার্নিচার শিল্পে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স ফার্নিচার। বর্তমানে ৩৫ জেলায় এর আউটলেট আছে, যেখানে সহস্রাধিক স্টাফ কাজ করছে। ব্রাদার্সের ডিরেক্টর শরিফুজ্জামান সরকার এ প্রজন্মের একজন প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তা। কীভাবে ব্যবসা শুরু করলেন, কীভাবে সফল হলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি তার পরামর্শ- এসব নিয়ে শরিফুজ্জামান সরকার সম্প্রতি কথা বলেছেন এক সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।
: ব্রাদার্স ফার্নিচার সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন
শরিফুজ্জামান : ব্রাদার্স ফার্নিচার দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। ফার্নিচার ট্র্যাডিং কোম্পানি হিসেবে ব্রাদার্সের যাত্রা শুরু ১৯৮০’র দশকের শুরুতে। ১৯৮৫তে নিজস্ব ফ্যাক্টরি স্থাপন করে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করে ব্রাদার্স। ১৯৯৪ সালে লিমিটেড কোম্পানিতের রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে দেশের ৩৫টি জেলায় ব্রাদার্সের আউটলেট আছে। ব্রাদার্সের অনেক সেগমেন্ট আছে যেমন- হোম সলিউশন, অফিস সলিউশন, ডোর সলিউশন, ম্যাট্রেস, এছাড়া শোপিসও সরবরাহ করছে ব্রাদার্স। দেশের প্রতিটি জেলায় ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে আমাদের।
: ফার্নিচার বিজনেসে দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা আপনি। কিভাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন?
শরিফুজ্জামান : ব্যবসা দিয়েই আমার ক্যারিয়ার শুরু। প্রথমে ট্রেডিং বিজনেজ শুরু করি। টানা ১২ বছর এ ব্যবসা করে পরে নিজেকে ব্রাদার্সের সঙ্গে যুক্ত করি। এটি আমার পৈতৃক ব্যবসা, তাই এখানেই সেট হয়েছি। আমি সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার পর এই ব্যবসা আরও গতি পায়।
: আপনি যখন উদ্যোগ নেন তখন কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছিল কিনা?
শরিফুজ্জামান : হ্যাঁ, যে কোনো কিছু শুরু করতে গেলে শুরুতেই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমার পথচলাও মসৃণ ছিল না। শুরুতেই যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি সেটি হচ্ছে ‘আইডেনটিফিকেশন ইস্যু’। অপরিচিত ও নতুন উদ্যোক্তা হওয়ায় ব্যাংক ঋণ দিতে চায়নি। বহু কষ্টে লোন ম্যানেজ করতে হয়েছে। যেটি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রথমেই নিরাশ করে ফেলে। যখন আমার লোন দরকার ছিল তখন ব্যাংক দেয়নি। অথচ এখন আমার লোন দরকার না হলেও ব্যাংক লোন অফার করছে। এমনি নতুন উদ্যোক্তাদের পদে পদে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেগুলো মোকাবেলা করতে পারলে একজন উদ্যোক্তা খাটি ব্যবসায়ীতে পরিণত হন।
: আপনার সফলতার পেছনে কোন বিষয়টি কাজ করেছে?
শরিফুজ্জামান : আমি আজকে যে অবস্থানে তার নেপথ্যে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে। একটি হচ্ছে আমার কঠোর পরিশ্রম, আত্মপ্রত্যয়, নিষ্ঠা অন্যটি হচ্ছে মানুষের দোয়া। এছাড়া আমার ব্যবসার মূলমন্ত্র হচ্ছে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে কাস্টমারের সন্তুষ্টি অর্জন। কাস্টমার আস্থায় থাকলে আপনি ব্যবসায় সফল হবেনই।
: একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার ভিশন কি?
শরিফুজ্জামান : আগামী ৫ বছরের মধ্যে ব্রাদার্স ফার্নিচারকে আমি দেশের লিডিং ফার্নিচার কোম্পানি হিসেবে দেখতে চাই। ব্রাদার্সকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। দেশের শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ব্রাদার্সকে দেখতে চাই। এটি সম্ভবও।
: যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে তারা কিভাবে শুরু করবে? তাদের প্রতি আপনার কোনো পরামর্শ…
শরিফুজ্জামান : প্রথমে নিজের যোগ্যতা-শক্তির জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে। আপনি কোন কাজে ভালো, সেটি নির্দিষ্ট করতে হবে। আপনি যে ব্যবসায় সর্বোচ্চ ইফোর্ট দিতে পারবেন সেটিতে উদ্যোগ নিন। তাতে ধৈর্যসহ লেগে থাকুন। আমি যেটি করেছি সেটি হচ্ছে- প্রথমে ৫টি ব্যবয়সা টার্গেট করেছি। ভেবে দেখলাম আমার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো। তাই ট্র্যাডিং বিজনেসে নেমে পড়লাম। অন্য চারটি টার্গেট বাদ দিয়েছি। সফলও হয়েছি। হালের তরুণদের অনেকের মধ্যেই ধৈর্যশক্তির অভাব। হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। রাতারাতি ধনী হতে চায়। কিন্তু ব্যবসায় রাতারাতি সফল হওয়ার কোনো ফর্মূলা নাই।
: নতুন উদ্যোক্তারা শুরুতে কি ধরনের ভুল করে থাকে?
শরিফুজ্জামান : তাদের মধ্যে প্রায় সময়ই ইমোশন কাজ করে। কিন্তু ব্যবসায় ইমোশনের কোনো স্থান নেই। যুক্তি দিয়ে, বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুবা অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
: বর্তমানে কোন সেক্টরে বিনিয়োগ সম্ভাবনাময়ী?
শরিফুজ্জামান : বর্তমানে ফার্নিচার বিজনেস খুবই সম্ভাবনাময়ী। বেত, কাঠ, বোর্ডের তৈরি বাহারি ফার্নিচার, শোপিস, ম্যাট্রেস এসবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিদেশে। টোটাল চাহিদার শতকরা ১ ভাগও আমরা মিটাতে পারছি না। তাই তরুণরা এই সেক্টরে এগিয়ে আসতে পারে।
: আপনার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কি পরিমাণ জনবল কাজ করছে?
শরিফুজ্জামান : ফ্যাক্টরি ও অফিস স্টাফ মিলিয়ে এখানে সহস্ত্রাধিক লোকবল কাজ করছে। সবচেয়ে বেশি জনবল কাজ করছে ফ্যাক্টরিতে, প্রোডাকশনে।
: বছরে কি পরিমাণ নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়?
শরিফুজ্জামান : এটি নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। যখন যে পরিমাণ জনবল দরকার হয় সেই চাহিদাপত্রের ভিত্তিকে বিভিন্ন সেকশনে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। তবে প্রতিবছর গড়ে দেড়শ’ জন নতুন লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়।
: ব্রাদার্স ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের কতটা গুরুত্ব দেয়?
শরিফুজ্জামান : ব্রাদার্স দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশ্বাসী। তাই আমরা তরুণদের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাদের চাকরিতে সুযোগ দিয়ে ইনোভেশন, সৃজনশীলতা বের করে আনার চেষ্টা করি। ফ্রেশারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনিটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়- ইন্টারঅ্যাকটিভ স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল ও মেরিট।
: অভিজ্ঞ প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন যোগ্যতা দেখা হয়?
শরিফুজ্জামান : তার আগের চাকরির সঙ্গে বর্তমান চাকরিতে যোগ্যতার মিল আছে কি না। তার যোগ্যতার সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত পদ ম্যাচ করে কিনা সেটি দেখা হয়। সবার আগে দেখা হয়, তিনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন? গ্রুপে কাজ করতে পারবেন কিনা, নেতৃত্বগুণাগুণ আছে কি না, জব হিস্ট্রি।
: চাকরি পেতে তরুণদের বেশ কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে। তারা ব্যবসায় ঝুঁকতে পারে কিনা?
শরিফুজ্জামান : একজন এনট্রেপ্রেনিওর হিসেবে আমি মনে করি, বাজারে প্রচুর চাকরি আছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থী নেই। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড না। তারা চাকরির বাজার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছে না। তাদের উচিত প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব যোগ্যতা চায় সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করা।
