ইউজিসির দায়িত্ব আরো বেশি
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান লইয়া প্রধান বিচারপতি বলিয়াছেন—ইহাদের মান একেবারে নিম্নপর্যায়ে। এমন মন্তব্য তিনি করিয়াছেন আইন শিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নমান লইয়া। সম্প্রতি একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই গণবিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অবৈধ বলা হয় নাই। শুধু বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলিয়া ধরা হইয়াছে। বিজ্ঞপ্তিতে দেশের ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকিতে বলিয়াছে ইউজিসি। ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মানবৃদ্ধির জন্য নেওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ বণ্টন হয়। কিন্তু মানবৃদ্ধির কাজটি কাগজে-কলমে হয় মাত্র; বাস্তবে কোনো তদারকি হইতেছে না মর্মে অভিযোগ রহিয়াছে। জানা যায়, বেসরকারি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগটি ইউজিসি দ্বারা অনুমোদিত কিংবা মানসম্পন্ন—সেই ব্যাপারে ইউজিসি’র ওয়েবসাইটেও কোনো তথ্য নাই। এমন কী সচেতন শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগও করিতেছেন যে, কোনো কর্মকর্তার নিকট হইতেও এই বিষয়ে কোনো তথ্য  পাইতেছে না তাহারা। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকিলেও তাহাদের কোন কোন বিভাগ বা বিষয় অনুমোদিত তাহা ইউজিসি প্রকাশ করে নাই। শিক্ষার্থীরা কেবল লোভনীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হইয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
পাইতেছে না তাহারা। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকিলেও তাহাদের কোন কোন বিভাগ বা বিষয় অনুমোদিত তাহা ইউজিসি প্রকাশ করে নাই। শিক্ষার্থীরা কেবল লোভনীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হইয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
স্বাভাবিকভাবেই ইহাতে প্রতারিত হইবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। দেখা যায় যে, অনুমোদন নাই এমন বিভাগেও ভর্তি হন শিক্ষার্থীরা। আর অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম না থাকিবার কারণে শিক্ষার্থীরা শুধু সময় পার করিয়াই সনদ পাইয়া থাকেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রকৃত শিক্ষার ধারে কাছে দিয়াও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ ঘটিতেছে না। ফলে শিক্ষাজীবন পার করিবার পর চাকুরির বাজারে গিয়া প্রতিযোগিতায় টিকিয়া থাকিতে পারিতেছেন না তাহারা। গত বৎসরের একটি জরিপ হইতে জানা যায়, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিতেছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়িতেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকাসহ সারাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী রহিয়াছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা, শিক্ষকের মান, অবকাঠামো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য—সবদিক হইতেই তাত্পর্যপূর্ণ পার্থক্য রহিয়াছে। আইনে বলা আছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করিয়া তাহার অধীনে কার্যক্রম চালাইবে। বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি হইতে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাইবে না। ইহাকে সেবাখাত হিসাবে আইনে উল্লেখও করা হইয়াছে। কিন্তু অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই আইনের প্রকৃত প্রতিফলন দেখা যাইতেছে না।
দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৬টি। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যেইভাবে তদারকি করিতেছে তাহাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির ব্যাপারে সংশয় প্রকাশের যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে। বলা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী একঅর্থে অন্ধকারেই পড়িয়া রহিয়াছে। ইউজিসি’র দায়িত্ব সেই অন্ধকার দূর করা। কেবল সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করিলেই তাহাদের দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না।

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	