হতে চাই প্রজন্মের বাহক
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামে জন্ম আমার। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব-কৈশোরের পুরোটাই কেটেছে যমুনা সার কারখানা আবাসিক কলোনির সবুজে সুরভিত সি্নগ্ধ মনোরম পরিবেশে। সেই সঙ্গে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনজুড়ে ছিল জামালপুর জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ যমুনা সার কারখানা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মায়ের অত্যধিক আদরে দুরন্ত শৈশব কাটলেও পড়াশোনায় খুব বেশি মনোযোগ ছিল বলে মনে পড়ে না। পরবর্তীকালে বাবার সুনিয়ন্ত্রিত শাসন, মায়ের স্নেহ ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের (বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষক আবদুুল গাফফার স্যার) আন্তরিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে পড়াশোনায় মনোযোগী হই। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করি এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। তারপর ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৃষিশিক্ষার জন্য সর্ববৃহৎ, স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে প্রকৃতিকন্যা বলে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদে ভর্তি হই। সবার মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, মনোরম পরিবেশ উপভোগ করা আর ভালো ফলের প্রত্যাশায় স্বাভাবিক পড়াশোনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। প্রথম সেমিস্টারের ফল প্রকাশের পর বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম আমি বিভাগে প্রথম হয়েছি। ফল নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস হয়নি। কারণ জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো কিছুতে প্রথম হয়েছি। আজও সেইক্ষণ স্মৃতির পাতায় অমলিন। এই ফল আমার বিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমার প্রত্যাশাও গগনচুম্বী হয়। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ডিভিএম ডিগ্রি লাভ করি।
এখন পর্যন্ত আমার শিক্ষাজীবনের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে অনুজদের বলব, প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। অনেক বাধা-বিপত্তি, হতাশা আসবে; কিন্তু মনে রাখতে হবে এ সবকিছুই শিক্ষার অংশ। কখনও হাল ছাড়া যাবে না। কারণ জীবনে কখন সফলতা ধরা দেবে, কেউ বলতে পারে না। তবে দৃঢ় মনোবল ও অধ্যবসায় নিয়ে চেষ্টা করলে সফলতা আসবেই। আর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্ব্বী নয়। জিপিএ পদ্ধতিতে সবাই যদি এ প্লাস পায় তবে সবাই প্রথম। তাই প্রতিযোগিতা করতে হবে নিজের সঙ্গে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বার আরও ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করে পড়াটা খুবই কার্যকর। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তা বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বর্তমানে আমি ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্সের ছাত্র। স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি করার ইচ্ছা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। কারণ আমি চিরতারুণ্যের মাঝে বাঁচতে চাই (A teacher never gets old because his soul is always surrounded by youngers & freshsers)। হতে চাই প্রজন্মের বাহক। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান, মূল্যবোধ ও আমার জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে চাই দেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের মাঝে, যাদের হাত ধরে বদলে যাবে এই সোনার বাংলা; বদলে যাবে বিশ্ব।
চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম ‘প্রাউস’ (প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন সংঘ)। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির ভিত্তি শক্ত করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের আরও অধিক বিকাশ ঘটাতে ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। এর মাধ্যমে গ্রামবাংলার দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি।