সাংবাদিকতার অনুসরণীয় যে নারীরা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
পৃথিবী এগিয়ে চলছে। আর তার সাথে সাথে এগিয়ে চলছে মানুষও। শুধু পুরুষই নয়, তাদের পায়ের সাথে সমান তাল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরাও। ঘরে-বাইরে কোথায নেই নারীরা? বিশেষ করে নারী সাংবাদিক, তাদের কথা তো মোটেই ভুলে যাওয়ার মতন নয়। জীবনের বাজি রেখে দুর্গম থেকে দুর্গমতর স্থান থেকে তারা এনে দিয়েছেন খবর, করেছেন অসম্ভব রকমের কষ্ট, আর উঠে এসেছেন সবার চাইতে উঁচুতে। আর সারা বিশ্বের নারী সাংবাদিকদের ভেতরে এমন শ্রেষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিকের কথাই নীচে বলা হল।
১. জিল আব্রামসন
কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন মার্কিন এই লেখক ও সাংবাদিক। সেসময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে দ্যা হার্ভার্ড ইন্ডিপেন্ডেন্টে এ কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে চলে যান টাইম ম্যাগাজিনে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সালের সময়টা জিলের সেখানেই কাটে। এর পাশাপাশি দ্যা আমেরিকান ল ইয়ারে এক যুগ কাটান তিনি। ১৯৮৬ সালে জিল লিগ্যাল টাইমের প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং দুই বছর পর দ্যা ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে চলে যান। সেখানে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল অব্দি কাজ করেন তিনি। সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে যোগদান করে খুব দ্রুত চলে যান অনেক উপরে। তবে ১৯৯৭ সালে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে চলে যান জিল। আর ২০০০ সালে সেখানেই ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এখানে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ঝামেলার মুখোমুখি পড়তে হয় তাকে। ১৯৯৫ সালে জিল ও তার ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের সহকর্মী জেন মায়ার যৌথভাবে স্ট্রেঞ্জ জাস্টিস:দ্যা সেলিং অব ক্লারেন্স থমাস বইটি লেখেন। ২০০০-২০০১ সালের এই এক বছর জিল প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন। একই সময়ে আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস এন্ড সায়েন্সের ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে টাইমসের সাথে ৬ মাসের জন্যে কাজ করার কথা বলা হলেও ২০১১ সালে টাইমস জিলকে নিজেদের সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ও ঘোষণা করে। তবে ২০১৪ তে এসে টাইমস থেকে তাকে না করে দেওয়া হয়। তবে এখনো অব্দি মানুষ তাকে টাইমসের সম্পাদক হিসেবেই এক নামে চেনে। ২০১২ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকানুযায়ী বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী নারীর ভেতরে অন্যতম একজন হিসেবে জিলকে নির্বাচিত করা হয়।
২. আরিয়ানা হাফিংটন
দ্যা হাফিংটন পোষ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক আরিয়ানা হাফিংটনের লেখক ও অভিনেত্রী হিসেবেও বেশ পরিচিতি রয়েছে। গ্রীসে ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত সাংবাদিক কন্সটানটিনোস ও এলি স্ট্যাসিনোপোউলোর মেয়ে এই নারী মিডিয়াকর্মী ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে প্রথম বিদেশি ও তৃতীয় নারী হিসেবে ক্যামব্রিজ ইউনিয়নে যোগ দেন আরিয়ানা। আরিয়ানা বড় বোন আগাপি বেশ ভালো লেখক হিসেবে পরিচিত। তখন তিনি নিজের লেখালেখি শুরু করেছিলেন। এদিকে বার্নার্ড লেভিনের সাথে বেশকিছু জায়গায় যেমন- ফেস দ্যা মিউজিকের একটি সংখ্যায় দেখা যায় আরিয়ানাকে। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিবিসিতে তাদেরকে একসাথে কাজ করতে দেখা যায়। বার্নার্ডের অনুপ্রেরণায় তার সম্পাদকীয় সাহায্য নিয়ে লিখতে শুরু করেন আরিয়ানা। কিন্তু একটা সময় তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে ১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন তিনি। এরপর তেকে একের পর এক বই লিখে যান আরিয়ানা। নারীদেরকে নিয়ে ১৯৭৩ সালে দ্যা ফিমেল ও্যমেন লেখেন তিনি। এরপর ন্যাশনাল রিভিউ এর পাতায় ছাপান বেশ কিছু আর্টিকেল। একে একে প্রকাশিত হয় তার লেখা মারিয়া ক্যালাস ও পাবলো পিকাসোর জীবনী। মাইকেল হাফিংটনকে বিয়ে করার পর কনজারভেটিভ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। কাজ করতে থাকেন আরো বেশি। ১৯৯৭ সালে নিজের লেখা গানের জন্যে অ্যামি এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন আরিয়ানা। ১৯৯৮ সালে রেডিও অনুষ্ঠান লেফট, রাইট এন্ড সেন্টারে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এবং একটা সময় রিপাবলিকদের সমর্থন করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ডের দূত হিসেবে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পরে বার্লিনের সামিটে যোগদেন তিনি। ২০১৪ সালে বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকার ৫২ তম অবস্থানে রাখে তাকে ফোর্বস।
৪. ক্রিস্টিয়ান আমানপুর
১৯৫৮ সালের ১২ই জানুয়ারি জন্ম নেওয়া ক্রিস্টিয়ানের প্রধান পরিচয় তিনি একজন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক। সিএনএন প্রধান আন্তর্জাতিক মুখপাত্র এবং সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল এর আমানপুর অনুষ্ঠানটির বর্তমান উপস্থাপক তিনি। এবিসি নিউজেও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০১৪ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে তিনিই একমাত্র সাংবাদিক যাকে সবচাইতে বেশি সংখ্যক বিশ্বনেতা অনুসরন করেন। তবে এত পরিচিতির তুঙ্গে থাকা এই নারীর শুরুটা হয় ইরানে। ব্রিটিশ-ইরানি আমানপুর ইরানে নিজের প্রাথমিক শিক্ষা নেবার পর ইউনিভার্সিটি অব রোডে আইল্যান্ডে সাংবাদিকতার ওপরে পড়াশোনা শেষ করেন। সে সময় একই সাথে ডব্লিউবিআরইউ-এফএম ও এনবিসিতে কাজ করতেন তিনি। ১৯৮৩ সালে সিএনএনে ডেস্ক সহকারী হিসেবে যোগ দেন আমানপুর। এরপর কাজ শুরু করেন মুখপাত্র হিসেবে। আমানপুরের জীবনের সবচাইতে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনাটি ঘটে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়। এরপর থেকেই একনাগাড়ে অনেকগুলো জায়গায় মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে পারসিয়ান গালফ ওয়ারের ওপর করা তার কাজ পুরো বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। একের পর এক অসাধারন সব কাজের বিনিময়ে সিএনএন এর প্রধান আন্তর্জাতিক মুখপাত্রের স্থানে উঠে আসেন আমানপুর আর সেখানেই ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল অব্দি কাজ করে যান। যুদ্ধের অনেক দূর্গম স্থান থেকে নানারকম তথ্য ও ইন্টারভিউ এনে দেওয়া ছাড়াও মোজাম্মদ খাতামী, মাহমুদ আহমেদিনিজাদ, টনি ব্লেয়ার, হিলারি ক্লিনটন, গাদ্দাফি, পারভেজ মোশাররফ সহ আরো অনেকের সাথে কথা বলেছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে এসে সিএনএন ও এবিসি নিউজের কোনটাকে বেছে নেওয়া হবে এই নিয়ে কথা-বার্তা চলতে থাকলে যৌথভাবে উভয় জায়গাই তাকে কাজ করতে অনুমতি দেয়।