বেছে নিতে হবে সঠিক ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্যটা জ্ঞান অর্জন হলেও বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালে চাকরি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নেয় আমাদের ভেতরে। অনেকেই আবার গত্বাঁধা চাকরিজীবন পছন্দ করতে পারে না কোনোভাবেই। তবে যারা চাকরি না করে নিজেরাই নিজেদের কর্মের সংস্থান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাদের চ্যালেঞ্জটা কম নয়। রয়েছে ঝুঁকি। আবার ভালো বেতনের একটি চাকরিই জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা নয়। নিজের জন্য সঠিক চাকরি খুঁজে পাওয়াটাও অন্য এক চ্যালেঞ্জ। কোন ধরনের পেশা বেছে নেবেন, কোন ধরনের চাকরি আপনার উপযোগী, এমন কিছু কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
বিবিএ’র শেষ সেমিস্টারেই একটা নামকরা বহুজাতিক ফার্মে চাকরি হয়ে গেল ইমনের। স্বাভাবিকভাবেই শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করেই যোগ দিল সেই প্রতিষ্ঠানে। বিবিএ’র রেজাল্ট তখনও হয়নি। শুরুতে ‘জোশে’র সাথেই চলল অফিসের কাজকর্ম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বেচারার নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। প্রচণ্ড খাটুনিতে তিন মাসের মধ্যেই ওজন কমে অর্ধেক! রোজ রাতে বাড়ি ফেরার সময় তাই ইমনের প্রতিজ্ঞা—কালই রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়ে দেব। কিন্তু সকাল হলেই মনে হয় ধুস, আবার নতুন চাকরি খোঁজার কত ঝামেলা। তার চেয়ে যেমন চলছে, তেমনই চলুক। তবে একটা কথা সারাদিনই মনের মধ্যে এলোমেলো ঘুরপাক খায়—’ইস, কেন যে সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে পড়লাম না! যেকোনো বিষয় নিয়ে পড়ে একা কলেজে যোগ দিলেই তো আর এত কষ্ট করতে হত না। সমাজে মান-সম্মানটাও বজায় থাকত!’ বাস্তবিক অর্থে কলেজে পড়ানোর কাজটাও তেমন সহজ নয়। আসলে কোনো কাজই সহজ নয়। প্রতিটি কাজেই সাফল্যের জন্য প্রয়োজন নিজের মেধা, শ্রম আর সময়। আর এর সাথে আরও প্রয়োজন নিজের সন্তুষ্টি। কাজের উপর নিজে সন্তুষ্ট থাকলে কাজকে কাজই মনে হয় না। কাজের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে যায় তুষ্টিতে। আর কাজ করে সন্তুষ্ট না হতে পারলে পরিশ্রম কম হলেও তাতে ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর-মন। ইমনের অবস্থাটি ঠিক তাই।
ইমনের মতো এমন দুরবস্থা যাতে সকলের না হয়, তাই আমাদের আগে থেকেই একটু সজাগ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ক্যারিয়ার নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখা তো চাট্টিখানি কথা নয়। দুর্মুল্যের এই বাজারে চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখাও তো সহসাই মেলে না। মিললেও হয়ত এমনটির সাক্ষাত্ মেলে, যাকে পছন্দ করাটা মুশকিল হয়ে যায়। এর জন্যই ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে প্রথম এবং প্রধান যে চিন্তাটি হওয়া উচিত তা হলো নিজের পছন্দের কাজটি করার চেষ্টা করা। কিন্তু সেই সঙ্গে আদৌ আমার কাজটা করার সক্ষমতা রয়েছে কিনা, এটা নিজের কাছে পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে নিতে হবে। অর্থাত্ ধরুন অনেক টাকা উপার্জন করা যায়, এমন কোনও চাকরিতে ঢুকে দেখা গেল, শুধু রাতে ঘুমানোর সময় ছাড়া আপনার প্রায় বাদবাকি সময়টা অফিসেই থাকতে হচ্ছে। তা হলে এত অর্থ উপার্জন করাটাও কিছুদিন পর নিরর্থক লাগতেই পারে। যদি নিজের জন্য সময় না থাকাকে আপনার অস্বাভাবিক না লাগে, তাহলে হয়ত সমস্যা নেই। কিন্তু যদি নিজেকে সময় না দিতে পেরে অসহ্য বোধ হয়, সেক্ষেত্রে এত টাকা উপার্জন করেও আপনার মানসিক প্রশান্তি মিলবে না। কাজেই নিজের পছন্দের কাজটি খুঁজে বের করা জরুরি।
এর মানে অবশ্য এই নয় যে পছন্দের এবং ভালোলাগা ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারলেই বাকি জীবনটা নির্ঝঞ্ঝাটভাবে কাটিয়ে দেয়া যাবে। একটা কথা জেনে ও মেনে রাখাই ভালো, সব চাকরিই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে একঘেয়ে লাগতে বাধ্য। আবার নিজের ইচ্ছেকে সম্মান দিয়ে চাকরি পছন্দ করলেও সব চাকরির অল্প-বিস্তর দোষত্রুটি থেকেই যায়। তাই চাকরি করার সময় মনকে সেইভাবেই তৈরি করে নেওয়াটা জরুরি।
ধরা যাক, কারও স্বপ্নের পেশা সাংবাদিকতা। কিন্তু দেখা গেল ওই পেশায় যে ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন তা ওই ব্যাক্তির সঙ্গে একেবারেই মেলে না। এই ব্যাপারগুলোও চাকরি বেছে নেওয়ার আগে মাথায় রাখা জরুরি।
ব্যাক্তিত্বের রকমফের অনুযায়ী কিছু ক্যারিয়ার সাজেশন এখানে দেওয়া হলো-
- অর্থ উপার্জন যদি কারও মূল লক্ষ হয় এবং সে যদি পরিশ্রমী হয়, তবে তার জন্য প্রাইভেট সেক্টর অত্যন্ত উপযোগী হবে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে পরিশ্রমটা একটু বেশি হলেও টাকাটা পাওয়া যায় বেশিই। ফলে খাটুনি বেশি হলেও টাকায় পুষিয়ে যাবে।
- খুব বেশি পরিশ্রম করার ধাত যদি কারও মধ্যে না থাকে, তাহলে তার জন্য ভালো হয় সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করা। শিক্ষাজীবন শেষ করে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান আর গণিতে একটু চর্চা করলেই সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ভালো করা যাবে। তবে প্রতিযোগিতার এই বাজারে চাকরির পড়ালেখাতেও একটু মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। এই সময়টাতে একটু বেশি পরিশ্রম করতে পারলেই সরকারি চাকরির সব সুবিধা উপভোগ করা যাবে।
- আপনার মধ্যে যদি সৃজনশীল কিছু করার তাগিদ থাকে, তাহলে ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ প্রায় সব ধরনের ডিজাইনিংয়ের দরজা খোলা রয়েছে আপনার জন্য। এ ছাড়া মিডিয়া হাউস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানেও আপনি ভালো করতে পারবেন।
- কথাবার্তা বলতে পাকাপোক্ত হলে মিডিয়ায় বা পাবলিক রিলেশন এজেন্সিতে চাকরি করলে উন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে আপনার। এই খাতে মূলতই কাজ হবে অন্যদের সাথে যোগাযোগের। কাজেই আপনার যোগাযোগের দক্ষতা আপনার কর্মজীবনে সাফল্যের পাথেয় হবে।
- সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য যদি আপনার দায়বদ্ধতা অনুভব করে থাকেন, তাহলে কোনও এনজিওতে কাজ করলে মানসিক সন্তুষ্টি পেতে পারেন। আবার অনেকটা সময় ব্যয় করলে এই পেশাতে উন্নতিও করা যায়।
- আসলে কাজের বিষয়টি প্রতিটি মানুষের জন্যই আলাদা। একজন মানুষের সাথে অন্য আরেকজন মানুষের যেমন মেলে না, তেমনি কাজের ক্ষেতও হয়ত মিলবে না। তবে সবকিছুতেই সাফল্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিজের পছন্দের কাজটি খুঁজে বের করা। এই কাজটি যদি করতে পারেন, তাহলে আপনার সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।