স্বপ্ন যখন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই দিন দিন বাড়ছে কর্মমুখী শিক্ষার চাহিদা। তেমনি একটি কর্মমুখী বিষয় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। এই পেশায় যেমন রয়েছে অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ, তেমনি রয়েছে দেশ-বিদেশে ঘোরার সুবিধা। আর তাই বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম তাদের স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার হিসেবে এ সৌখিন পেশাকে বেছে নিচ্ছে। আর এ পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আপনাকে যা যা করতে হবে আসুন সেই বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই।
- ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ
মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা কর্মজীবনের শুরু থেকে বেশকিছু দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একজন ওয়াশ ইনচার্জ জাহাজ পরিচালনার পাশাপাশি সহযাত্রী সমুদ্রচারীদের নিরাপত্তা এবং সামুদ্রিক/নৌ-পরিবেশ সংরক্ষণ করে থাকেন। শিক্ষানবিস বা ট্রেইন ক্যাডেট অফিসার তার শিক্ষাবর্ষের সমাপ্তির পর সে জাহাজের অপারেশনাল লেভেলে একজন ডেক অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। ডেক অফিসাররা তাদের কর্মজীবনের শুরু করেন নেভিগেশন দিয়ে। অন্যদিকে নৌ-প্রকৌশলীরাও তাদের কর্মজীবন শুরু থেকে জাহাজের ইঞ্জিন, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উচ্চ প্রযুক্তির যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, নিউমেটিক হাইড্রলিক ও রেফ্রিজারেশন সিস্টেমে এই কাজগুলো দেখাশোনা করেন।
- কোথায় পড়বেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
দেশের মোট দুটি সরকারি ও একাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করানো হয়। সরকারি দুটি হল- বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নারায়ণগঞ্জ ও পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি চট্টগ্রাম।
- ভর্তির যোগ্যতা
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৪ বছর ও দু’বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোনো বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির আবেদন করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী পরপর তিন বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ব্যতিক্রম পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে এইচএসসি বা আলিম পরবর্তী শিক্ষার্থীরা কেবল আবেদন করতে পারবে।
- পড়াশোনার খরচ
সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকে অনেক কম। এখানে খরচ পড়বে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খচর একটু বেশি। এখানে প্রতিষ্ঠান ভেদে খচর পড়বে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো।
কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো ও সময়
* ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪ বছর
* ডিপ্লোমা ইন শিপবিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং- ৪ বছর
* মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন আর্টিফিসার- ২ বছর
* শিপ ফেব্রিকেশন- ২ বছর
* শিপবিল্ডিং ওয়েল্ডিং- ২ বছর
* শিপবিল্ডিং ড্রাফসম্যানশিপ- ২ বছর
- ক্যারিয়ার
তিন বছরের কোর্স শেষে একজন ক্যাডেট লাভ করবেন প্রিসি মেরিন সার্টিফিকেট। যা দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ ছাড়াও দেশী-বিদেশী নৌবন্দর, জাহাজ ব্যবস্থাপনা সংস্থা, পাওয়ার প্লান্টেও কাজের সুযোগ পাবেন। এছাড়া নামকরা নানা প্রতিষ্ঠান যেমন- বাংলাদেশ শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন, খুলনা শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ডসহ নানা দেশী-বিদেশী তেল কোম্পানিসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজের সুযোগ। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন-আইএমও হিসাব অনুযায়ী, যে দেশেই পড়াশোনা করেন না কেন, বিশ্বের যে কোনো দেশেই কাজ করার সুযোগ পাবেন। তা ছাড়া এই পেশায় যারা ক্যারিয়ার গড়েন তারা শুধুই দেশেই বসে থাকেন না। কিংবা শুধু দেশের প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেন না। তাদের কাজের ক্ষেত্রটা হয় বিশ্বময়। সিঙ্গাপুর, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, দুবাই ইত্যাদি দেশে আপনি নিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
- বেতন-ভাতা
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পর বেকার থাকা বা কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এখানে আয়-রোজগারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানভেদে হয়ে থাকে। অনেকটা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। এখানে আপনি ছাত্রাবস্থাতেই পেশাগত জীবন শুরু করতে পারেন। অসংখ্য বিদেশী প্রতিষ্ঠান ছাত্র অবস্থাতেই আপনাকে নিতে প্রস্তুত। বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবস্থায়ই আপনি সর্বনিু ৩০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি শুরু করতে পারেন। আয় করতে পারেন হয়তো আরও বেশি। আর দেশী জাহাজ বা প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারেন আপনি। এই পেশায় শুধু বেতনই নয়, থাকা-খাওয়াসহ সব কিছুই মানসম্মত।
- পদোন্নতি
এ পেশায় দ্রুত পদোন্নতি হয়। জাহাজের সর্বোচ্চ পদ ক্যাপ্টেন বা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হতে সময় লাগে গড়ে সাত থেকে আট বছর। বিভিন্ন সৈকত ব্যবস্থাপনা পেশাতেও নৌ-অভিজ্ঞতাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনি সহজেই সর্বোচ্চ শিখরে উঠে যেতে পারবেন।
- উচ্চশিক্ষা
দেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে আপনি উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশে বুয়েটে এমএস/এমএসসি ও পিএইচডি করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ পেশার ওপর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এছড়াও বিদেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পার্টটাইমে চাকরির সুযোগ আছে। পরিশেষে বলা যায়, দেশের জাহাজ শিল্পের গুণগত মান বিকাশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে এ সৌখিন ও আনন্দময় পেশায় গড়ুন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার।
1 Comment on this Post
Md Easin
Ami o Marin a portay chai.
2020 salay SSC exam a GPA-5.00 payasi…..
Ami kon marin Institute vorti hoib…..
Ami Marine a diploma kortay chai…..