ঘাস চাষে স্বাবলম্বী কৃষক

ঘাস চাষে স্বাবলম্বী কৃষক

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ, গাভীর খামার হাঁস-মুরগির খামার স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান ছাড়াও বেকার যুবক, গৃহিণী এবং কৃষকরা উন্নতজাতের ঘাস চাষকে তাদের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছে। শুরুতে জেলার চাষীরা রাস্তার পাশে ও আইলের ধারে চাষ করলেও এখন রীতিমতো বিঘার পর বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নেপিয়ার জাতের বিদেশী ঘাস চাষ। চাষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। চাষীরা ঘাস চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। খামারীদের মাঝে সবুজ ঘাসের অভাবও মিটিয়ে দিচ্ছেন নেপিয়ার ঘাস চাষীরা। জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার জার্মান থেকে এই ঘাসের চারা আমদানি করে। প্রথমে সাভার ডেইরি ফার্ম থেকে এই ঘাসের চারা বিতরণ করা হতো।

পরবর্তীতে প্রায় বিশ বছরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস কৃষকদের ফ্রি চারা বিতরণ করে। এ ঘাস খেলে গরু মোটাতাজা ও অধিক দুধ দেয় বলে কৃষি কর্মকর্তারা এই ঘাস গরুকে খাওয়ানোর জন্য খামারীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রথমে এটি চাষে ততটা আগ্রহী না হলেও চার-পাঁচ বছর ধরে ভাল উৎপাদন ও অধিক দাম পাওয়ায় এ ঘাস চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে বীজ, সার, তেল খরচ ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ধান, ভুট্টা বা অন্যান্য ফসল চাষ করে যে আয় হয় সেই একই জমিতে কম খরচে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে প্রায় তিন গুণ বেশি আয় হয়। এই ঘাস জমিতে লাগানোর আড়াই মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়। পরবর্তীতে গোড়া থেকে আবার বেড়ে ওঠে। প্রতি মাসে একবার বিক্রির উপযোগী হয়। বাজারে চাহিদাও বেশি। সেচ ও সার খরচ কম।

এই ঘাস খেলে গাভী বেশি দুধ দেয়। উপজেলার বাহাদুরপুর এবং বড় গোপিনাথপুর গ্রামের অন্তত আশি জন মহিলা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাস চাষের সঙ্গে জড়িত। সবুজ ঘাস খাওয়ানোর ফলে গবাদি প্রাণী যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তেমনিভাবে পশুর মালিকও আত্মতুষ্টি লাভ করেন। বর্তমানে পীরগঞ্জ উপজেলায় ৭৬৫টি দুধের খামার ছাড়াও গরু মোটাতাজাকরণে ১ হাজার খামার রয়েছে। এসব খামারের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে ৫ হাজার ৭০০ জন কৃষক ৩০০ একর জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করছে।

উপজেলার ১০টি জায়গায় স্থায়ী ঘাসের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ২শ’ জনের অধিক কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদন ও বিপণন করে ঘাস চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ৫-৬ কেজি ওজনের একটি ঘাসের আঁটি দশ টাকা এবং একটি ঘাসের মূল .৭০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি শতক জায়গায় প্রতি কাটিং এ ২৫০ কেজি ঘাস পাওয়া যায়। ঘাস লাগনোর দুই মাস পর প্রথম কাটিং এবং তারপর প্রতি এক মাস পর পর বছরে ৭-৮টি কাটিং দেয়া সম্ভব। বর্তমানে বছরে ১৮ হাজার মেট্রিক টনের অধিক উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। উন্নত জাতের ঘাস খাওয়ানোর ফলে পশুর উৎপাদন ৫১% হারে বৃদ্ধি পায়।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment