সফল ব্যবসায়ী হতে হলে
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
চাকরির বিকল্প ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রেও একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সব বাধা কাটিয়েও হয়ে ওঠা সম্ভব সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু কীভাবে? ব্যবসার খুঁটিনাটি বিষয়ে কীভাবে নজর রাখবেন? ব্যবসায় নামতে চান আপনি? তাহলে পুঁজি, শ্রম, কর্মী, কাঁচামালসহ যাবতীয় আয়োজন সারতে হবে।
বৃহস্পতিকে তুঙ্গে রাখতে আঙুলে নীল-পলাও গলিয়ে নিয়েছেন আগেভাগেই। লক্ষ্মীলাভের সূচনা এই হাল বলে। কিন্তু দাঁড়ান! কোথাও যেন সব হিসাব-নিকাশ গুলিয়ে যাচ্ছে! অস্থিরতা বাড়ছে। চেষ্টা করছেন মন হালকা করার। কিন্তু কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ কিছুতেই বিদায় নিতে চাইছে না। কেবল মনে হচ্ছে, চালটা কোথাও বেঠিক পড়ল না তো? শেষমেশ লাভের মুখ দেখতে পাব তো? আচ্ছা, ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে যাবে তো? দাঁড়াবে মানে? জেট প্লেনের গতিতে ছুটবে! চাকরির টোপ কাটিয়ে একবার স্রোতের বিপরীতে পা ফেলার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন, তখন মুহূর্তে ঢোক গিললে হবে? এগোতে আপনাকে হবেই। আর এ ব্যাপারে আপনার মানসিক ব্যারাম সারানোর দাওয়াই রইল।
- উপভোগ করুন
আর সবার মতো দশটা-পাঁচটার দাসত্বেও বিমানে চড়বেন না বলেই তো ব্যবসায় নেমেছেন। নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছেন। সাধু সিদ্ধান্ত! তা হলে কাজটা তো আপনাকে উপভোগ করতেই হবে। এই ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে চরম আশাবাদী হওয়াটা প্রথম এবং প্রাথমিক শর্ত। কারণটা জানেন? ব্যবসায় লাভ-লোকসান একেবারেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। কখন কোনটা আসবে, আগে থেকে তার আঁচ পাওয়া সহজ নয়। আর মজার ব্যাপার কী বলুন তো? টসটা আপনাকে করতেই হবে। কাজেই আগে থেকে লোকসানের চিন্তায় ঘেমেনেয়ে একশা হয়ে পড়লে আপনি কিন্তু অলরেডি ডিসকোয়ালিফায়েড!
- ঝুঁকি নিন
ব্যবসায় নামলে ঝুঁকি নেওয়ার মতো বুকে পাটা থাকতে হবে। সাহসী হতে হবে। সামান্য বিপদেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকলে এ পেশা আপনার জন্য নয়। ব্যবসা ভালো চললে যেমন নিজেকে আরব শেখ ভাবাটা বাড়াবাড়ি, তেমনই তির আশঙ্কাতেই দুচোখ থেকে পদ্মা-মেঘনা বের করাটাও নেহাতই বোকামি। ঠা-া মাথায় ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনে ঝুঁকিও নিন। আর বি পজিটিভ।
- স্বকীয়তা বজায় রাখুন
কাজের ক্ষেত্রে স্বকীয়তা বজায় রাখুন। এই প্রতিযোগিতার যুগে সফল হতে গেলে সৃষ্টিশীল হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে প্রতিপওে থেকে কয়েক কদম এগিয়ে থাকতে হবে। বুদ্ধির দিক থেকে। দূরদর্শিতার দিক থেকে। সঠিক পরিকল্পনার দিক থেকে। নেতৃত্বদানের দিক থেকে। সর্বোপরি ঝুঁকি নেওয়ার দিক থেকে। এই বাজারে সাফল্যকে টিকিয়ে রাখার প্রধান শর্ত হলো ‘মগজাস্ত্রে’ও প্রয়োগ।
- সবাইকে নিয়ে চলুন
ব্যবসাটা আপনার। কিন্তু আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আপনার সংস্থা বা সংগঠনের কর্ম-আধিকারিকরা। সুতরাং তাদের মতামতকেও গুরুত্ব দিন। সবার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ শুনুন। পরে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
- নেতৃত্ব দিন
ব্যবসাকে লাভের অভিমুখে ধাবিত করতে যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। ব্যবসা আপনার। সেদিক থেকে এই টিমের কা-ারি তো আপনি। কাজেই পেছন থেকে নয়, ফ্রন্টফুটে খেলে দলকে নেতৃত্ব দিন। ব্যবসা বলেই নিজের বাড়িতে বসে থেকে সহকর্মী ও অধস্তন কর্মচারীদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেবেন না। অফিসে যান। নিয়মিত আলোচনায় বসুন। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোয় অংশ নিন। সবার কথা মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। বিচার করুন। কেউ ভুল পরামর্শ দিচ্ছে বুঝলেই রাগের মাথায় তাকে দুকথা শোনাবেন না। মাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া শুধু ব্যবসা নয়, মানুষ হওয়ার েেত্রও জরুরি।
- পুনশ্চ
এগিয়ে চলার পথে আত্মবিশ্বাসকে পাথেয় করুন। ভয়কে জয় করুন। নেতিবাচক ভাবনাচিন্তা এড়িয়ে চলুন। ব্যবসায় তির মুখে পড়লে কোনো অজুহাতের আড়াল খুঁজতে যাবেন না। প্রয়োজনে বাজারে নামার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। বিখ্যাত ব্যবসায়ীদের জীবনী পড়ুন। শূন্য থেকে শুরু করে যারা আকাশের চাঁদ ছুঁয়েছেন, তাদের থেকে শিা নিন। ব্যবসায় কী কী ধরনের সমস্যা আসতে পারে তার সম্বন্ধে বিষাদে জেনে নিন। পাশাপাশি সমাধান-সূত্রেরও খোঁজ রাখুন। ব্যবসায় উন্নতির গতি অুক্ষুন্ন রাখতে নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় নামুন। প্রতি মাসের লাভের হার আগের থেকে বাড়াতে থাকুন, যাতে অন্যে বলার আগেই আপনি নিজেই নিজের উন্নতির ট্র্যাক রেকর্ড ঊর্ধ্বগামী রাখতে পারেন। আরও একটি খুব দরকারি টিপস দিই? নিজের সংস্থার ব্র্যান্ড বা উৎপাদিত দ্রব্যে ঘন ঘন ডিসকাউন্ট বা ছাড় ঘোষণা করে লক্ষ্মীলাভের আশা করবেন না। আপনার ‘জিনিস’-এর মান ভালো হলে লোকে কিনবেই। তার জন্য ছাড়ের দরকার হবে না।
শেষে জানাই, ব্যবসায় নামা আর ছবি আঁকার মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। সাদা ক্যানভাসে নানা রঙের মিশেলে যেমন সুন্দর একটি ছবি ফুটে ওঠে, তেমনই পরিকল্পনা-মূলধন-শ্রমিক প্রভৃতির সমাহারে সফল ব্যবসা জন্ম নেয়। পার্থক্য শুধু একটা। ছবি আঁকা শেষ হয়। ব্যবসা কিন্তু নয়। বরং যত দুর্বার গতিতে তা এগিয়ে চলবে, ততই মঙ্গল! এবং লাভজনক।