আকর্ষণীয় পেশা বীমা প্রতিনিধি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাংলাদেশে বীমা গ্রাহক বাড়ার সাথে সাথে বীমা কোম্পানীও বাড়ছে। ফলে দেশের বেকারত্ব হ্রাসেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯টি জীবন বীমা কোম্পানী রয়েছে। এসব কোম্পানীতে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী নিয়োজিত। কোম্পানীগুলোর অন্যতম কাজ হচ্ছে পলিসি গ্রাহক সৃষ্টি করা। আর এ কাজ করে থাকে বীমা প্রতিনিধিরা। বীমা প্রতিনিধিরা প্রথমে এজেন্ট পরবর্তীতে প্রথমত এমও ম্যানেজার, সহকারী কন্ট্রোলার, ডেপুটি কন্ট্রোলার, জেএভিপি, এভিপি, ভিপি ইভিপি এবং সর্বশেষ কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার যোগ্যতাও রাখে। বিভিন্ন কোম্পানী ভিন্ন ভিন্নভাবে পদবী ব্যবহার করে থাকে। এ পেশায় সম্মান থাকার পাশাপাশি রয়েছে অধিক পরিমাণে কমিশন। একজন বীমা প্রতিনিধি মাসে অন্ত তিনটি পলিসি গ্রাহক সৃষ্টি করলে ১০ হাজার টাকার অধিক কমিশনে পাওয়া সম্ভব। এ পেশায় নিয়োজিত হতে হলে একজন বীমা প্রতিনিধির (এজেন্ট) অবশ্য কি কি থাকতে হবে তার নিন্মে বিবরণ দেয়া হল :
বীমা প্রতিনিধি হিসেবে এ পেশার ধরন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর জোনাল ইনচার্জ রুনা লায়লা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পেশা হিসেবে ইন্স্যুরেন্স পেশার জুড়ি নেই। এ পেশায় যেহেতু শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই কাজ করে থাকে। কলেজ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বর্তমানে ইন্স্যুরেন্স পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে একমাত্র ইন্স্যুরেন্স পেশায় আসতে হলে কাউকে তদবির বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পেছনে হাঁটতে হয় না কিংবা অনিয়ম, দুর্নীতি বা আত্মীয়স্বজন বলে স্বজনপ্রীতিরও কোন সুযোগ নেই। সততা, নিষ্ঠা এবং যথাযোগ্য পরিশ্রমের মাধ্যমে এ পেশায় একজন বীমা প্রতিনিধি ঐ কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ পেশার গুরুত্বের বিষয়ে ডেল্টা লাইফের এভিপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ পেশার মাধ্যমে আমি আমার জীবনকে অনেক উঁচুতে নিয়েছি। বর্তমানে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।
তরুণ-তরুণীদের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা ইন্স্যুরেন্স পেশায় জড়িয়ে নিজকে স্বাবলম্বী করে তুলুন। কেননা দেশে একমাত্র ইন্স্যুরেন্স পেশায় মামা-খালুর প্রয়োজন হয় না। খুব সহজেই বীমায় আসা যায়। বেতন বীমা প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী দ্রুত নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেন। এ পেশায় প্রথমে তিনটি পলিসি গ্রাহক জোগাড় করে একটি এজেন্সি কোড নিয়ে মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেতে পারেন। তবে বর্তমানে কোম্পানীগুলো কমিশনের পাশাপাশি বেতন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বেতন পাওয়ার জন্য বীমা প্রতিনিধি সহকারী কন্ট্রোলার হিসেবে পদোন্নতি নিতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন নামে পদবী নির্ধারণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে বীমা প্রতিনিধি থেকে তিন ধাপ অতিক্রম করার পর বেতনভুক্ত হয়। পেশাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার জন্য কোম্পানীগুলো প্রথমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এ পেশায় বীমা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগের সময় দুইটি পলিসি গ্রাহক সংগ্রহ করতে হয়।
বীমা প্রতিনিধিদের কোম্পানীগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতি মাসে পলিসি গ্রাহক সৃষ্টির জন্য প্রতিনিধিদের নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে মোটরসাইকেল প্রাইভেটকারও দিয়ে থাকে। বীমা প্রতিনিধিদের কাজ বীমা প্রতিনিধি হিসেবে কোড নাম্বার নেয়ার পর থেকে প্রথমে একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখান থেকে ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে ধারণা লাভ করে মাঠে গিয়ে কাজ করে। বীমা প্রতিনিধিদের কাজ হলো যারা ফুলটাইম কাজ করবে তারা প্রতিদিন যে কোন সময় যে কোন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তার কাছ থেকে পলিসি সংগ্রহ করে। অনেক সময় নতুন অবস্থায় বীমা প্রতিনিধিরা নিজে পলিসি গ্রাহককে বুঝাতে সক্ষম না হলে তার উপরোক্ত স্যারকে নিয়ে যায়। এইভাবে ক্রমান্বয়ে বীমা প্রতিনিধিকে তার উপরে যে কয়েকজন রয়েছে তারা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে থাকেন। আবার অনেক বীমা প্রতিনিধি সপ্তাহে এক বা দুদিন কাজ করে থাকেন। অতিরিক্ত আয়ের জন্য আবার তারা অনেকে বিভিন্ন পেশায় জড়িত রয়েছেন। এ পেশায় মূলত ফুলটাইম এবং পার্টটাইম দুই ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা একজন বীমা প্রতিনিধি মাধ্যমিক পাস হলেও এ পেশায় যোগদান করতে পারবেন। তছাড়া কোম্পানীগুলোর অফিসিয়াল কাজ করার জন্য অনার্স ও মাস্টার্সধারীদের এ পেশায় কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মানবসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লা বলেন, বর্তমান সময়ে তার কোম্পানীতে এমবিএ এবং বিবিএ পাস শিক্ষার্থীরা ডেল্টা লাইফের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। বীমা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়া বীমা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগের বিষয় অন্যান্য পেশায় নিয়োজত প্রতিষ্ঠানের ন্যায় আলাদা। এখানে নিয়োগের সময় কোন ব্যাংক ড্রাফট কিংবা কোন রকম টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে যেসব এজেন্সী অফিস কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তারই আলোকে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, সংশ্লিষ্ট ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। পরবর্তী দুইটি ছোট হোক বা বড় হোক বীমা গ্রাহক তৈরি করতে হবে এবং পলিসি গ্রাহক বীমা অংকের ন্যায় প্রথমে বছরের প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে হবে এবং জমা দিতে হবে।
বীমা শিল্প বীমা ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। বিশ্বের উন্নত দেশে এ শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলেও আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের দেশে লাইফ এবং জেনারেল মিলেয়ে ৬০টি কোম্পানী চালু আছে এবং প্রায় ৮/১০ লাখ লোক এখানে নিয়োজিত আছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে এ পেশায় নিয়োজিত কর্মীগণের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের বেকারত্বের একটি বিরাট অংশ এখানে কাজে লাগাতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জীবন বীমার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানেও এর গুরুত্ব বাড়ালে দেশ ও জাতি অনেক লাভবান হবে।