সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও থাকুক পেশাদারত্ব

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও থাকুক পেশাদারত্ব

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রেও। প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে নিজের সিভি কাঙ্ক্ষিত চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট পৌঁছানো সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। সেই সঙ্গে এটা নিশ্চিত নয় যে আপনি চাকরিদাতার সঙ্গে দেখা করে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন এর মাধ্যমে। কিন্তু সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আপনি সরাসরি চাকরিদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।


এ ক্ষেত্রে চাকরিদাতারা সহজেই আপনার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার পাশাপাশি আপনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন। চাকরি ও প্রার্থী সন্ধানের প্রচলিত রীতি পাল্টে দিয়েছে লিংকডিন, ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শুধু চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য চাকরির সন্ধানের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নয় বরং চাকরিদাতাদের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়ারও একটি বিশেষ স্থান বা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে অ্যাকটিভ থাকছেন এবং চাকরিদাতাদের তিন ভাগের এক ভাগই এখন এ সুযোগটি নিচ্ছেন তাঁর কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায়।

ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের এক অনলাইন জরিপে চাকরিপ্রত্যাশীদের ‘আপনি দিনে কতটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরি খোঁজার জন্য ব্যয় করেন’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে ৪৮ শতাংশ চাকরিপ্রার্থী জানান যে তাঁরা প্রায় প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চাকরি খোঁজ করে থাকেন। ১৯ শতাংশ জানান, তারা সপ্তাহে তিন-চারবার লগইন করে থাকেন। ২২ শতাংশ জানান যে তাঁরা মাসে তিন-চারবার লগইন করেন। আর মাত্র ১১ শতাংশ বলেন যে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমই ব্যবহার করেন না। জরিপে বলা হয়, চাকরিদাতারা চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের আগে তাঁর সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে। জরিপে অংশে নেওয়া প্রায় ৬৫ শতাংশ চাকরিদাতা জানান যে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে প্রার্থীর পেশাদারি মনোভাব সম্পর্ক জানার চেষ্টা করেন। কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে যেহেতু চাকরিদাতারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন, সেহেতু একজন চাকরিপ্রত্যাশী হয়ে আপনারও বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত সামাজিক মাধ্যমগুলোতে থাকা আপনার প্রোফাইলের প্রতি।

সে ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে যে সামাজিক মাধ্যমে যে কনটেন্টগুলো শেয়ার করছেন বা যা বলছেন সেগুলো গ্রহণযোগ্য এবং সেগুলো আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করছে। এমন কিছু শেয়ার না করাই ভালো যা আপনার পেশাদারিকে হেয় করবে। বরং আপনার সাফল্য, অর্জন, চিন্তা ও কাজের প্রতিফলনই হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রোফাইলটি। লক্ষ রাখতে হবে যেন আপনার কোনো কাজ বা কথায় বৈষম্যর পক্ষে আপনার অবস্থান প্রকাশ না পায়। বিশেষ কোনো জব ইন্ডাস্ট্রির প্রতি যেন আপনার বিরূপ মনোভাব প্রকাশিত না হয়। আপনার শেয়ার করা কোনো কনটেন্টের মাধ্যমে যেন কোনো পেশার মানুষকে হেয় করা না হয়। আপনার ব্যবহৃত ছবি যেন আপনার পেশাদারি ব্যক্তিত্বেরই প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার দেওয়া সেসব তথ্য যেন সঠিক এবং নির্ভুল হয়ে থাকে। চাকরিদাতা আপনাকে সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমেই খুঁজতে পারেন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আপনাকে এসব মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে তথ্য সাজাতে হবে। কাজেই সব মাধ্যমে তথ্য সঠিক এবং একই রাখার চেষ্টা করতে হবে। গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে যে যথাযথ মাধ্যমে আপনি যথাযথ তথ্য দিয়ে নিজের প্রোফাইলটি সাজিয়েছেন কি না।

চাকরিদাতা আপনার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে আপনার দেওয়া তথ্য দেখার মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করবে আপনার মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। সব ধরনের তথ্য তাঁরা খুঁজবে না, তবে সব ধরনের তথ্যই তাঁদের চোখে পড়বে। চাকরিদাতা সে ধরনের তথ্যের জন্যই আপনাকে যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজবে, যেগুলো অন্যদের চেয়ে আপনাকে ব্যতিক্রমী করে। পেশাজীবনের অর্জনগুলাকে প্রাধান্য দিয়ে আপনার প্রোফাইল সাজাতে হবে। আপনার সৃজনশীল কাজ বা চিন্তাগুলোর সমষ্টি থাকবে, বিশেষ করে আপনার যোগাযোগ দক্ষতার প্রতিফলন থাকবে আপনার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে। পাশাপাশি আপনাকে সুন্দর এবং অর্থবহ সামাজিক যোগাযোগ তৈরিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।

অনলাইনে থাকা প্রোফাইল যেন আপনার বর্তমান কাজের পরিবেশ, সাফল্য, ব্যক্তিগত ধ্যানধারণা এবং সামাজিকভাবে আপনার অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে সে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র : প্রথম আলো।   favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment