প্রকৌশল ক্যারিয়ারে ট্রিপল ই
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রকৌশলী একটি সম্মানজনক পেশা। এ পেশার স্বপ্ন কম-বেশি সবারই থাকে। তবে এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে বলা হয় ‘প্রকৌশলবিদ্যার আত্মা’। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আবির্ভাব হয়েছে মূলত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে, ট্রিপল ই । আর বাংলায় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিককৌশল। ইলেকট্রন নিয়েই যার কাজ, নামের মাঝেই ধারণা পাওয়া যায়। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ এখন অনেকেরই। অভিভাবকদেরও পছন্দের বিষয় এটি। তাই দেশে এবং বিদেশে, প্রায় সব জায়গায়ই এই বিষয়ে পড়াশোনার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে এই ধরনের পেশার মূল্যায়ন অনেকটাই দৃশ্যমান। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের দেশে খুবই চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ।
ট্রিপল ই কী?
ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার একটি প্রধান শাখা যা মূলত তড়িৎ, ইলেকট্রনিক ও তড়িৎচুম্বকত্ব নিয়ে কাজ করে। উল্লেখযোগ্য পেশা হিসেবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আত্মপ্রকাশ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, যখন টেলিগ্রাফি এবং বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাপ্তি বিদ্যুৎশক্তি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক, টেলিযোগাযোগসহ আরও কিছু উপশাখাজুড়ে বিস্তৃত। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে অনেক সময় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংও বোঝানো হয়ে থাকে। তবে যখন শুধু ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয় তখন মূলত যে শাখা বড় আকারের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি যেমন বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন, বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র আকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, সমন্বিত বর্তনী ইত্যাদি ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের অন্তর্গত। অন্য কথায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত শক্তি সঞ্চালনের জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগান আর ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইঞ্জিনিয়াররা তথ্য আদান-প্রদানের কাজে বিদ্যুৎশক্তিকে ব্যবহার করেন। মৌলিক তত্ত্বের দিকটি বিবেচনা করলে বলা যায়, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরকের মধ্য দিয়ে প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কেন পড়বেন?
যদি সমীকরণ সমাধান করতে মজা লাগে, ফিজিক্সের বিদ্যুতের চ্যাপ্টারগুলো অসহ্য না লাগে, তাহলে ট্রিপল ই আপনাকে হতাশ করবে না। যদি সার্কিট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে মজা লাগে, রোধের সমান্তরাল সন্নিবেশ, হুইটস্টোন কার্শফের অঙ্ক করতে ভালো লাগে কিংবা ফিজিক্স বা ম্যাথের জটিল জটিল সব অঙ্কে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে বলব ট্রিপল ই শুধু আপনার জন্য। আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হলো ট্রিপল ই।
শ্রেণিবিভাগ
অনেক বড় পরিসরেই বিস্তৃত ট্রিপল ই’র শ্রেণিবিভাগ। তবে আপাতদৃষ্টিতে ট্রিপল ই ফ্যাকাল্টিকে ভাগ করা যায় চারটি উপশ্রেণিতে। পাওয়ার, ইলেকট্র্রনিক্স, কমিউনিকেশন এবং কম্পিউটার
যেখানে পাওয়ার, ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশনকে ফোকাস করে এবং কম্পিউটারের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় ধারণাকে সংমিশ্রিত করে গঠিত ট্রিপল ই বিষয়টি। এ ছাড়া শুধু ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশনকে ফোকাস করে গঠিত ইসিই/ইটিই বিষয়টি প্রায় ৭০% ক্ষেত্রেই ট্রিপল ই’র অনুরূপ।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্র্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উপায় কী?
এসএসসি/সমমান পাসের পর ডিপ্লোমা (সময়কাল ৪ বছর)।, এইচএসসি/সমমান পাসের পর বিএসসি (সময়কাল ৪ বছর)। মাস্টার অব সায়েন্স ইন ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (সময়কাল ১.৫ বছর)।
বিএসসির ভর্তি যোগ্যতা
এইচএসসি (বিজ্ঞান)সহ গণিত, পদার্থ, রসায়ন। এইচএসসি জিপিএ হতে হবে সর্বনিম্ন ৩.৫ (অতিরিক্ত বিষয়সহ)। এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএর সমষ্টি সর্বনিম্ন ৮.০ হতে হবে (অতিরিক্ত বিষয়সহ)।
উচ্চশিক্ষা
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্র্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষা অর্জনের গুরুত্ব পেয়েছে। দেশের সবগুলো পাবলিক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।
কাজের সুযোগ
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ সংস্থা, টেলিযোগাযোগ এবং অপটিক্যাল ফাইবার শিল্প, ন্যাভিগেশনাল সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্প, এরোস্পেস উৎপাদন শিল্প, অটোমোবাইল শিল্প, স্থাপত্য ও নির্মাণ সংস্থা, প্রকৌশল সেবা, সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, সশস্ত্রবাহিনী, রেলওয়ে, হাসপাতাল, বাংলাদেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক জায়গায় কাজের সুযোগ আছে।
দায়িত্ব
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্র্রনিক্স ইঞ্জিনিয়াররা বিদ্যুৎ উৎপাদন সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক মোটর, রাডার এবং ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যোগাযোগব্যবস্থা, অটোমোবাইল, জাহাজ ও বিমানের বৈদ্যুতিক সিস্টেম প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকেন।
- পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক মোটর, অটোমোবাইল, এয়ারক্র্যাফ, স্পেস ক্র্যাফের ইগনিশন সিস্টেম এবং সব ধরনের ইঞ্জিনের ডিজাইন, উৎপাদন এবং পরিচালনা করে।
- বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারের উন্নত পদ্ধতি গবেষণা ও ডিজাইন করে।
- প্রস্তুতকারক, নির্মাণ এবং ইন্সটলেশনের জন্য নির্দিষ্ট হিসাবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বিস্তারিত হিসাব গণনা করে।
- একটি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বাজেট এবং সময়সীমা নিয়ে কাজ করে।
- নির্দেশিকা পূরণ করতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নির্দেশনা প্রদান করে।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের সময় অপারেশনাল ইস্যু এবং সমস্যা সমাধান করে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ, যোগাযোগ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদন বা এর সাবডিভিশনের বিশেষজ্ঞ।
- বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত কাজের সীমা বিস্তৃত যেমন একোস্টিক, স্পিচ, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সামঞ্জস্য সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ, অটোমোবাইল থেকে যানবাহন প্রযুক্তি, পার্থিব বিজ্ঞান এবং রিমোট সেন্সিং, লেজার এবং ইলেকট্রো অপটিক্স, রোবোটিক্স, আল্ট্রাসনিক, ফেরোইলেকটিক্স এবং ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল।
চাকরির বাজারে ট্রিপল ই
যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে ততদিন এর ডিমান্ড থাকবে। দেশে থাকতে পারলেও যেমন সোনায় সোহাগা, তেমনি দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করারও অফুরন্ত সুযোগ। দেশে-বিদেশে সব জায়গায়ই উচ্চ মর্যাদা। চাকরি নেই, হাজার হাজার স্টুডেন্ট হয়ে গেছে, এমন শোনা কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। যদি যোগ্যতা আর মেধা থাকে তবে ট্রিপল ই পড়ে একদিনও বেকার বসে থাকতে হবে না বরং চাকরিই আপনাকে খুঁজে নেবে।