অলসতা কাটিয়ে জেগে উঠুন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
কাজ নেই এমন মানুষ যেমন কেউ নেই, তেমনি কাজ করতে ভাল লাগে এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আমরা অনেকেই অলসতা করে আজকের কাজ রেখে দিই কাল করব বলে। নিজের অলসতাকে প্রশ্রয় দিয়ে ভাবি, ‘আমি হয়ত এই কাজের জন্য প্রস্তুত নই। সামনের সপ্তাহে করব, অথবা সামনের মাসে, অথবা সামনের বছরে। হিসেব করে দেখুন, এমন কত কাজ জমে গেছে আপনার, যা আপনি কবেই করে ফেলতে পারতেন! কিন্তু করা হয় নি এখনো।
প্রতিটা কাজের শুরুতে আমরা অনেক পজেটিভ থাকি। কিন্তু মুষড়ে পড়ি কিছুদিনের মাঝেই। শুধু নিজের ব্যক্তিজীবনে নয়, দল বেঁধে করতে যাওয়া অনেক কাজ থেমে থাকে। অনেক গ্রুপ তৈরি হয় কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ঝিমিয়ে পড়ে কার্যক্রম। কত কত প্রজেক্ট পড়ে থাকে একইভাবে। শেষ করা সম্ভব কিন্তু কেন জানি শেষ হয় না।
কিন্তু কেন এমন হয়? কারণ আমরা অল্পসময়েই অনেক পেতে চাই, যে কাজের জন্য যতটুকু সময় দেওয়া জরুরি ততটুকু দিই না, তার আগেই হতাশ হয়ে যাই, কারণ আমরা ছাড়তে পারি না পুরোনো বদভ্যাসগুলো এবং নিজেকে সাজাতে পারি না নতুন কাজটির জন্য নতুনরূপে।
এ সমস্যা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে জাপানিরা অনুসরণ করেন একটি চমৎকার কার্যকরি প্রক্রিয়া। তারা মেনে চলেন একটি নিয়ম।
কাইযেন- ১ মিনিট প্রিন্সিপাল
জাপানি সংস্কৃতিতে একটি প্রাকটিস খুবই প্রচলিত। এর নাম কাইযেন যাকে বলা হয়, ’one-minute principle’। এর লক্ষ্য হল আত্মোন্নয়ন। এই মেথডে বলা হয়, একটা মানুষকে এক মিনিটের জন্য একটা কাজ করতে হবে, প্রতিদিন করতে হবে এবং একই নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে। এই প্রাকটিসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, অলসতম মানুষটিরও এটা করতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ অনুশীলনের সময়টা খুবই কম, মাত্র ১ মিনিট। একই সাথে আপনি কোন অজুহাতও দিতে পারবেন না কাজটি না করার, করতেই হবে। কারণ সময় লাগছে মাত্র ৬০ সেকেন্ড।
তবে ১ মিনিটের কাজটিও এমন একটি কাজ বেছে নিন যা আপনাকে আনন্দ দেবে। হতে পারে আপনি মহৎ ব্যাক্তিদের কোন উক্তির সংকলন পড়লেন অথবা ছোট কোন ড্রয়িং প্রাকটিস করলেন অথবা বড় কোন কাজেরই ছোট একটা অংশ করলেন।
এই অনুশীলন জাগ্রত করবে আপনার ভেতরের আত্মবিশ্বাসকে। আপনার ভেতরে নিশ্চয়ই কোন হীনমন্যতা রয়েছে অথবা রয়েছে নিজের সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা। আমাদের জীবনে যখন ‘করা হয় না’ এমন অনেকগুলো কাজ জমে যায় তখন আমরা নিজেরাই নিজেদের অযোগ্য ভাবতে শুরু করি। ১ মিনিটের দৈনিক এই অনুশীলন আপনি যখন রপ্ত করতে পারবেন তখন সেটি ধীরে ধীরে আপনার ভেতর থেকে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাগুলো ভাংতে সাহায্য করবে।
কাইযেনের সৃষ্টি জাপানে। শব্দটি দুইটি আলাদা অর্থ বহন করে। ‘kai’ (change) এবং ‘zen’ (wisdom)। এই মেথডটির উদ্ভাবক মাসাকি ইমাই, তিনি বিশ্বাস করেন এই জীবনদর্শনটি যেমন ব্যবসায় খুব কাজে দেবে তেমনি কাজে দেবে ব্যক্তি জীবনেও।
আপনার মনে সন্দেহ থাকতে পারে যে সামান্য এই অভ্যাসটি কিভাবে একজন মানুষকে কর্মমূখী করে তুলতে পারে, কাটাতে পারে অলসতা।
কিন্তু আত্মোন্নয়নের জন্য কখনো কখনো একটি পদক্ষেপই যথেষ্ট। যে কোন প্রাকটিস যখন নিয়মিত হয় এবং আপনি সেটাতে সফল হন তখন তা প্রভাব ফেলে অন্য কাজের নিয়মতান্ত্রিকতা এবং সফলতায়। জাপানে এই পদ্ধতিটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কৌশল উন্নয়নের জন্য। ব্যক্তির উন্নয়ন থেকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে পরিক্ষিত সফল মেথডটি আপনিও কাজে লাগাতে পারেন নিজ জীবনে।