খণ্ডকালীন চাকরির খুঁটিনাটি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে আমাদের দেশে চার-পাঁচ বছর লেগে যায়। কোথাও কোথাও সেশনজটে এটি পরিণত হয় ছয়-আট বছরে। এই দীর্ঘ সময় পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর অবসর থাকে। যারা বাস্তবধর্মী, সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী, তারা এ সময়ে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু নষ্ট না করে কোনো-না-কোনো কাজে ব্যয় করতে পারেন। এতে আপনার দতা, জ্ঞান ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে।
দেশে খণ্ডকালীন চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র হচ্ছে মেলায় বিক্রয় প্রতিনিধি বা প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানকারী প্রতিনিধির চাকরি। বর্তমানে রিহ্যাব ফেয়ার, প্লাস্টিক প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফেয়ার, বাণিজ্যমেলা, প্রযুক্তিমেলা, আইসক্রিম মেলা, আসবাবপত্রমেলা, তাঁতমেলা, বস্ত্রমেলা, গাড়িমেলা, বইমেলা, চলচ্চিত্রমেলাসহ বিভিন্ন ধরনের মেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় আমাদের দেশে। আর এসব মেলায় অংশ নেয় বহু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্টলেই দু-একজন কর্মকর্তা থাকেন, বাকি সবাইকে নেয়া হয় খণ্ডকালীন চুক্তিভিত্তিতে। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে থাকেন দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী। পড়াশোনার ফাঁকে এই খণ্ডকালীন চাকরি বেশ ভালো পরিমাণ অর্থেরও জোগান দিয়ে থাকে।
কাজের ধরন: পণ্যের প্রদর্শন ও বিক্রিই এ পেশার মুখ্য বিষয়। আর এ জন্য সব ধরনের ক্রেতার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। বিভিন্ন চরিত্রের ক্রেতাই আপনার সামনে আসবে। আবার অনেকেই শুধু আপনার পণ্যের বিস্তারিত জানতে চাইবে, দামদর নিয়ে আলাপ করবে কিন্তু আসলে তার কেনার কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনাই নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি সামালও দিতে হবে আপনাকেই। এসব নিয়ে অবশ্য বেশি ভাবার কিছু নেই। কারণ নিয়োগদাতারা এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই কার্যক্রম শুরুর আগে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে কাজের ধরন নিয়ে চিন্তিত না হলেও চলবে।
সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধা: আয়-রোজগারের ব্যাপারটা একেক প্রতিষ্ঠানের জন্য একেক রকম। কেউ দৈনিক, কেউ সাপ্তাহিক আবার কেউ পুরো মাসের টাকা একসাথে দিয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যমেলার মতো আয়োজনে মেলার সময় পুরোটাকে ধরেই একটা চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। সেটি আপনার সাক্ষাৎকারের সময়েই স্পষ্ট করে দেয়া হবে। একেক প্রতিষ্ঠানের বেতনও একেক রকম। তবে গড়ে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ আছে এসব পেশায়। তিন বেলা খাবারও দেয় সাধারণত প্রতিষ্ঠানই। সাথে থাকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পোশাক।
যোগ্যতা: শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে সাধারণত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই নির্বাচন করা হয়। তবে সহজ-সাবলীল-সুন্দর উপস্থাপনা, দেখতে স্মার্ট হওয়া, নিজের বক্তব্যকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারা, শুদ্ধ বাংলা ও ইংরেজি বলতে পারার ক্ষমতা এসব বিষয় এ পেশার যোগ্যতা হিসেবে কাজ করে। আসলে নিয়োগদাতারা সব সময়ই এমন কাউকেই নিয়োগ দিতে চান যার আচার-ব্যবহার সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। যিনি সহজেই ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের গুণাবলি ক্রেতার কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
চাকরির সময়: এসব খণ্ডকালীন চাকরির সময় সাধারণত মেলার গেট খোলা থেকে শুরু করে গেট বন্ধ হওয়া পর্যন্ত। তাই আপনি হিসাব করে নিতে পারেন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, কখনো কখনো রাত ১০টাও হতে পারে। আবার কোনো কোম্পানি দুই শিফটে লোক নেয়; সে ক্ষেত্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা বা বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত করতে হবে।
কিভাবে শুরু করবেন: ঈদ, বৈশাখ, পূজা বা যেকোনো উৎসবে যদি খণ্ডকালীন চাকরি জোগাড় করতে চান, তাহলে অবশ্যই বড় বড় শপিংমলের চেইন শপগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া বাণিজ্যমেলা, কম্পিউটার-মেলা, তাঁতমেলা, ফার্নিচার-মেলা প্রভৃতি শুরু হওয়ার আগে থেকেই সময়সূচি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে। ধারণা রাখতে হবে, এসব মেলায় কোন কোন প্রতিষ্ঠান নিয়মিত অংশ নেয়। সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সাধারণত ইলেকট্রনিক পণ্য, বস্ত্র ও কুটির শিল্প, সিরামিক, টয়লেট্রিজ, প্রসাধনী, খেলাধুলার সামগ্রী, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসব মেলায় অংশ নেয়। এসব চাকরির জন্য সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলো মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়। আবার এসব চাকরিতে নিয়োগের জন্য বেশি সময়ও নেয়া হয় না। তবে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এসব বিষয়ে তথ্য থাকে। তাই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখুন অথবা নিজের জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে যোগাযোগ করুন এসব কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে। অথবা জীবনবৃত্তান্ত দিয়ে রাখুন মেলার আয়োজকদের কাছে। আর এসব মেলায় আগে কাজ করেছে, এমন কারো সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তার মাধ্যমে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজটি করে নিতে পারবেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়া: দেশী-বিদেশী বড় বড় উৎপাদন ও আমদানিকারক কোম্পানিগুলো মেলা শুরুর দু-এক মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেয়। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আবেদন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়। কিছু কোম্পানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কর্মী নিয়োগ করে। এ ক্ষেত্রে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। ছোট আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিগত পরিচয়ের মাধ্যমেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করে। এ জন্য বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ সুযোগ: মেলায় খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কিছু সুবিধা পাবেন। কাজ করার ফলে আপনি ওই প্রতিষ্ঠান ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। মার্কেটিং, জনসংযোগ ও বিক্রয় কার্যক্রমে আপনার দক্ষতা সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে স্থায়ী কোনো চাকরি পেতে এটি অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে লাগবে।এক্সপো মেকারের হেড অব অপারেশন নাহিদ হাসনাইন সিদ্দিকী জানান, ছাত্রাবস্থায়ই একজন ছাত্রজীবনের কনফিডেন্ট অর্জন করতে পারে, যেকোনো জায়গায় ইন্টারভিউ ফেস করার ক্ষমতা সে রাখে। একেকটি ব্র্যান্ড একেক রকম, ব্র্যান্ডের সাথে মিল রেখে আমাদের পুরো ক্যাম্পেইনের ডিজাইন করতে হয়। পণ্যের প্রচারণা বা মার্কেটিংয়ের নতুন আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেয় এসব তরুণ। তাই দরকার হয় মাঠপর্যায়ে কাজ করার। আগে দরকার নিজেকে একটু ঝালিয়ে নেয়ার। মাত্র দু-চার দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষার্থীরা নেমে পড়তে পারেন খণ্ডকালীন বিভিন্ন কাজে। এই বাড়তি আয় পড়ালেখার খরচ মেটানো ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় আনছে বৈচিত্র্য। তাই শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ এই খণ্ডকালীন চাকরি।