চাকরি ছাড়ার আগে কী ভাববেন?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
হুুট করেই সিদ্ধান্ত। গত মাসে তাড়াহুড়োর মধ্যে চাকরি বদল করেন আনিকা আলম। পুরোনো অফিসে কোনোমতে একটি পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নতুন অফিসে যোগ দেন আনিকা। আগের অফিসের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ই-মেইল ও ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও আনিকা কোনো সাড়াই দেননি। সাড়া না দেওয়ায় যা হয়েছে তা আনিকার জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। পুরোনো অফিসে কয়েক বছর চাকরি করার জন্য আনিকার অর্জিত ছুটি বাবদ বেশ কিছু অর্থ বরাদ্দ ছিল। আগের ছুটি-ছাটা আর বেতন-বোনাসের হিসাবে বেশ বড় অঙ্কের টাকা থেকে বঞ্চিত হন আনিকা। আনিকার নামে অফিস থেকে একটি ল্যাপটপ কিম্পউটার বরাদ্দ ছিল, সেই ল্যাপটপের খোঁজ নিয়েই বেশ হেপায় পড়তে হয় মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের।
মানবসম্পদ পরামর্শক এবং বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক রুবিনা খান এমন আচরণকে নিজের পেশার সঙ্গে দূরত্ব আর ব্যক্তিত্বের অধঃপতন হিসেবেই দেখেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তিকেই চাকরি ছাড়ার আগে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত। হুটহাট সিদ্ধান্তে চাকরি পরিবর্তন শুধু নিজেরই ক্ষতি নয়, কর্মস্থলের সার্বিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।’ হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের তথ্যমতে, যেসব কর্মী হুটহাট সিদ্ধান্তে চাকরি ছাড়েন, তাঁরা সারা জীবনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়বার কর্মস্থল বদলাতে পারেন। তাঁদের নামে অফিসে ঊর্ধ্বতনদের সন্দেহের মাত্রা একটু বেশিই থাকে।
চাকরি বদলের আগে কিংবা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আগে কিছু বিষয় নিজের জন্য আর পুরোনো অফিসের জন্য ভাবা উচিত। রুবিনা খান জানান, ‘পেশার প্রয়োজনে মানুষ চাকরি বদলাতেই পারেন। নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চাকরি পরিবর্তনের সময় দায়িত্বশীল আচরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
মানবসম্পদ পরামর্শক রুবিনা খান চাকরি ছাড়ার আগে ও চাকরি ছাড়ার সময় যা যা খেয়াল রাখার কথা জানান—
* প্রায় প্রতিটি অফিসেই চাকরি ছাড়ার কয়েক দিন আগে মানবসম্পদ বিভাগকে অবহিত করার নিয়ম চালু থাকে। এ সময় মানবসম্পদ বিভাগ নতুন কর্মী নেওয়াসহ আপনার প্রাপ্য বেতন-বোনাসের হিসাব করার সুযোগ পায়।
* আপনার অর্জিত ছুটি আর বেতন-বোনাস-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে এ সময় আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর মানবসম্পদ বিভাগকে অবহিত করুন।
* আর্থিক হিসাবনিকাশের দিকে খেয়াল রাখুন। বিল-বকেয়া কিংবা ছোটখাটো সব আর্থিক হিসাব মিটিয়ে ফেলুন।
* আপনার নামে অফিস থেকে বরাদ্দ হওয়া ক্যামেরা, ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস, গাড়ি-মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে লিখিত ছাড়পত্র নিয়ে নেবেন।
* পুরোনো অফিস থেকে আপনার অব্যাহতিপত্র আর অভিজ্ঞতার সনদ মানবসম্পদ বিভাগ থেকে নিতে ভুলবেন না। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ প্রকাশ করে, দায়িত্বশীল কর্মীরা কর্মস্থল বদলের সময় অব্যাহতিপত্র আর অভিজ্ঞতা সনদ নিতে ভুল করেন না। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অভিজ্ঞতা সনদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
* অফিসে ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি ও ফাইল মুছে ফেলুন। অন্য প্রয়োজনীয় ফাইলসমূহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিন।
•* আপনার অফিসে ব্যক্তিগত ব্যবহারের বিভিন্ন বস্তু যেমন বই, ছবির ফ্রেম, অ্যাকুরিয়াম কিংবা শখের কলমদানি, মগ, গ্লাস সরিয়ে ফেলুন। অফিসের লাইব্রেরি থেকে বই নিলে তা ফেরত দিন।
* চাকরি ছাড়ার শেষ দিন পর্যন্ত অফিসের নিয়মকানুনকে শ্রদ্ধা করুন। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েই প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মী পুরোনো কর্মস্থলে অসৌজন্য ও বিশৃঙ্খল আচরণ করেন।
* চাকরি ছাড়ার সময় অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে পুরোনো রাগ-অভিমান কাটিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখুন। •
* •সবশেষে, পুরোনো কর্মস্থলের সবাইকে ই-মেইলে কিংবা সরাসরি ধন্যবাদ জানিয়ে নতুন উদ্যমে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করুন।
চাকরি ছাড়ার সময় যা করবেন না
* পুরোনো অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা দলিলপত্র নতুন অফিসে কাজে লাগবে, এমনটা ভেবে নিজের সঙ্গে নেওয়া কখনোই উচিত না।
* পুরোনো সহকর্মী কিংবা অফিসের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ কিংবা বাজে আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন।
* নতুন চাকরি সম্পর্কে পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প অনেক সময় অন্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে। এ আচরণ থেকে বিরত থাকুন।
* নতুন জায়গায় যোগদানের আগের কয়েকটা দিন পুরোনো অফিসে নতুন অফিসের কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকুন।