শব্দ প্রকৌশলী হতে চান?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
অনেকেই আছেন যারা কোনো কাজকেই পেশা হিসেবে নিতে চাচ্ছেন না। বলছেন এ পেশা আমার ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না তার উত্তরও দিতে পারছেন না। গানবাজনা বেশ পছন্দ করেন। গানের প্রতি মনোযোগও ভালো। মনে মনে ইচ্ছাও হয় যদি সাউন্ড সিস্টেমটাকে অপারেট করতে পারতাম, তাহলে আরও মজা করে শুনতে পারতাম। এমন ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই আপনি আপনার পেশাকে নিশ্চিত করতে পারেন। হতে পারেন একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার।
সাধারনত আমরা যে ধরনের গান বাজনা শুনে থাকি তা শ্রুতিমধুর করার কাজটাই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার করে থাকেন। বর্তমানে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের বেশ চাহিদাও রয়েছে। যে অনুপাতে বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশন বেড়ে চলেছে সে অনুপাতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হচ্ছে না। অভিজ্ঞ এক জন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হাসান মাহামুদ হিমু। বর্তমানে তিনি চ্যানেল ২৪-এ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার কাছে জানতে চাই, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এমন জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে তিনি জানান, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে অবশ্যই সাউন্ড সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। সবাই সাউন্ড সম্পর্কে ভালো বোঝে না। সবার বোঝার কথাও না।
ক্যারিয়ার হিসেবে কেউ যদি এই পেশাকে বেছে নিতে চায় তাহলে তাকে কী করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ হতে চাইলে হতে পারবে এতে কোনো বাধা নেই। তবে এ পেশায় সবাই আসতে পারে না। ফ্যামিলির অনেক বাধা থাকে, মনে করে এটা মনে হয় ভুল কোনো পথ বা পেশা। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা মোটামুটি সম্মান নিয়েই চলে এটাই বাস্তবতা।
জানতে চাই, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হতে কেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার? তিনি বলেন, ‘মোটামুটি শিক্ষিত হলেই চলে তবে যত শিক্ষিত হবে, ততোই ভালো। এ ক্ষেত্রে ইংরেজিও জানা দরকার। আন্তর্জাতিক লেসনগুলো বুঝতে হলে ইংরেজি জানতে হবে। আমাদের দেশে এই বিষয়ে লেখাপড়ার যথেষ্ট সুযোগ নেই, শুধুমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর কোর্স চালু করেছে। ওয়েস্টার্ন দেশগুলোতে এই ডিগ্র্র্র্রি নেওয়ার সুযোগ অনেক বেশি।
সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ কতটুকু? এই প্রশ্নের জবাববে তিনি বলেন—টিভি চ্যানেল, রেডিও চ্যানেল, রেকর্ডিং স্টুডিও, অডিটরিয়ামসহ বিভিন্ন সাউন্ড কোম্পানিগুলোতে (যারা সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া দিয়ে থাকে) কাজের সুযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়তই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়বেই।
এ রকমই আর এক অভিজ্ঞ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বর্তমানে এশিয়ান টেলিভিশনে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হচ্ছে সাউন্ড রেকর্ডিং, এডিটিং এবং ধারণকৃত শব্দ (রেকর্ডেড সাউন্ড) অথবা সরাসরি শব্দকে (লাইভ সাউন্ড) শ্রোতাদের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করা। এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে বলা হয় শব্দ পরিসঞ্চালন। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে আসলে পুরো সাউন্ড সিসটেমটাকে অপারেট করা।
সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন ১৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। আমাদের সেক্টরে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের বেশ কদর আছে। টেলিভিশনে পিসিআর নামে একটি বিভাগ আছে, এই বিভাগটি অডিও এবং ভিডিওর সমন্বয়ে গঠিত। টেলিভিশনে অডিও এবং ভিডিওকে অনেক গুরুত্ব দিতে হয়, কারণ এই দুইটির কোনো একটিতে সমস্যা হলে চ্যানেলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাই প্রত্যেক স্টেশনই অডিওর প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
চ্যানেলে কীভাবে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া আসলে বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। চ্যানেলের শুরুর দিকে দৈনিক পত্রিকাতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসব বিজ্ঞাপনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি কিছু নতুন কর্মীও নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তাদের বেতন স্কেলটা একটু কম থাকে।
সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী একটি প্রতিষ্ঠনের কর্ণধার ও অভিজ্ঞ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ শিবলির কাছে জানতে পারি, সাউন্ড সংশ্লিষ্ট ব্যবসা করতে চাইলে শুরুতেই লাগবে কিছু কাগজপত্র। যেমন—ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইত্যাদি। এ ব্যবসার জন্য শুরুতেই অফিস ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন নেই। চাইলে বাড়িতেই সাউন্ড সিস্টেমের সরঞ্জাম রেখে শুরু করতে পারেন। তবে বড় আকারে শুরু করতে চাইলে অফিসের প্রয়োজন হয়।
এ ব্যবসায় একবার বিনিয়োগ করলেই চলে। পরে যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও ভালোমানের সরঞ্জাম কিনলে যেমন টেকসই হবে, তেমনি ব্যবসার সুনামও বৃদ্ধি পাবে। ব্র্যান্ডের সরঞ্জাম কিনতে চাইলে প্রাথমিক পূঁজি লাগবে ৯ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো। পুঁজি কম থাকলে চায়না মেশিন দিয়েও শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লাগবে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। সাউন্ড সিস্টেম ও লাইটিং পরিচালনার জন্য লাগবে একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, একজন লাইন ডিজাইনার ও দুজন সুপারভাইজার বা স্টেজম্যান। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের মাসিক বেতন আট থেকে দশ হাজার এবং সুপারভাইজারদের বেতন ৫ থেকে ৭হাজার টাকা হতে পারে। এক প্যায়ার সাউন্ড সিস্টেমে সাধারণত ২টি স্পিকার, ২টি মনিটর, ১টি স্পিকার পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার, ১টি মনিটর পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার, কনসোল, ভয়েস প্রসেসর, ৬ থেকে ৮টি মাইক্রোফোন, মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড, পাওয়ার বোর্ড লাগবে। আলোকসজ্জার জন্য প্রয়োজন হবে বিভিন্ন ধরনের লাইট যেমন—ইফেক্ট, জ্যাব, লেজার, এলইডি লাইট, লাইট স্ট্যান্ড ইত্যাদি। স্মোকের জন্য প্রয়োজন হবে ফগ মেশিন, পাওয়ার বোর্ড ও ক্যাবেল। এক প্যায়ার সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে ব্যবসাটি শুরু করা যায়। তবে বড় আকারে শুরু করতে চাইলে তা বাড়াতে হবে।