শহরে ‘বালাম’ ধান!
- নিউজ ডেস্ক
‘বালাম’ হাওরের ধান হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বালাম ১৯৭৭ সালে স্থানীয় ধানের জাত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। শুধু হাওরের ফসলি জমিতে ফলে এ ধান। হাওরের এ ধানকে নগরে ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন সিলেটের সুগন্ধি ধানের সংগ্রাহক আবদুল বাছিত সেলিম। দক্ষিণ সুরমার বিসিক শিল্পনগরীতে তিনি তাঁর ‘এবি কৃষি প্রকল্প’ থেকে বালামের ফলন ঘরে তুলেছেন চলতি আমন মৌসুমে।
সুগন্ধি ধানের একজন সংগ্রাহক সেলিম। নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার কদমতলিতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৯৯৬ সাল থেকে ধানের ব্যবসার সঙ্গে সুগন্ধি ধানের সংগ্রহ শুরু করেন। তাঁর এ সংগ্রহ নিয়ে ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘সেলিমের সুগন্ধি ধান’ শিরোনামে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তখন থেকে দেশে-বিদেশে তাঁর ধান সংগ্রহ সমাদৃত হয়। সুগন্ধি ধান সংগ্রহের পাশাপাশি চাষবাস না হওয়ায় হারিয়ে যাওয়া ধান চাষের দিকে মনোযোগী হন সেলিম।
কদমতলি এলাকায় সেলিম ‘এবি কৃষি প্রকল্পের সেলিম’ নামে পরিচিত। ‘এবি’ আবদুল বাছিতের সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ‘প্রকল্প’ মূলত তাঁর ব্যবসা। ধানবীজসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রি করেন তিনি। ১৯৯০ সালে ১৭ বছর বয়সে এ ব্যবসায় নামেন। সাধারণ ধান ও সুগন্ধি ধানের দামের মধ্যে বিশাল তফাত থাকায় সুগন্ধি ধানের বীজ আকৃষ্ট করে তাঁকে। এসব বীজ বিক্রির পাশাপাশি চাষাবাদও করেন।
১৯৯৬ সালে সেলিমের প্রেরণায় সুগন্ধি ধানের প্রথম আবাদ হয় দক্ষিণ সুরমার হাওরে। শুরুতে একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে কাটারিভোগের আবাদ করে ১৬ মণ ধান পেয়েছিলেন। এই ধান উৎপাদনে ব্যয় হয় আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাওয়া যায় ২২ হাজার টাকা।
দক্ষিণ সুরমার গুটাটিকর এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে তিনটি প্লট রয়েছে সেলিমের। গত বছর রোপা আমন মৌসুমে সেখানে চিনিগুঁড়া ও কাটারিভোগের চাষ করেন। এবার ২০ শতক জায়গায় নতুন করে রোপণ করেন বালাম। প্রথমবারই সফল হন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণের মাঠ পর্যবেক্ষণে বালাম ধানের হেক্টরপ্রতি ফলনের অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে।
বিসিক শিল্পনগরীতে সেলিমের প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নবান্ন উৎসবে প্রদর্শনের জন্য বালাম ধান শুকানো হচ্ছে। ধান থেকে কিছু চাল বের করা হয়েছে। চাল দেখতে অন্য রকম। শুঁকতে গেলেই সুগন্ধি।
সেলিমের দাবি, সিলেট নগরে বালাম ধানের উৎপাদন প্রথম। এর মধ্য দিয়ে সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকায় প্রায় তিন যুগ চাষ না হওয়া বালাম ধান তাঁর চাষের মধ্য দিয়ে আবার ফিরল। বালাম ধানের ফলন বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ৪ মণ ছিল। পরিকল্পিত চাষাবাদে তিনি তাঁর জমিতে বিঘাপ্রতি ফলন ১৩ দশমিক ২৬ মণে উন্নীত করেছেন। এ নিয়ে একধরনের গর্ববোধ করে সেলিম বলেন, ‘বিষয়টি আমি মহানগর কৃষি বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তাঁরা সরেজমিনে দেখে গেছেন। তিন যুগ পর ফেরানোর স্বীকৃতিও কৃষি বিভাগ দেবে বলে আশা করছি।’
মহানগর কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, বালাম ধান মূলত হাওরের ফসলি জমির ধান। একসময় এ ধান বেশি চাষাবাদ হতো। তিন যুগ পর সেলিমের চেষ্টায় ফিরল কি না, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।