শিক্ষার্থীরা, তৈরি হচ্ছেন তো ?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
স্রেফ পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে থেকে যে ভালো ক্যারিয়ার গড়াটা কঠিন, সেটা অনেক শিক্ষার্থীই বুঝে ফেলেছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁরা অভিজ্ঞতার ঝুলিটা ভারী করছেন। পাশাপাশি যোগ্যতার একটা পরীক্ষাও হয়ে যাচ্ছে। গত বছর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান মন্দ ছিল না। বিতর্ক থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিং, রোবোটিকস কিংবা নতুন ব্যবসায়িক ভাবনাসংক্রান্ত প্রতিযোগিতা—সব ক্ষেত্রেই ছিল আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের সরব উপস্থিতি। এ বছর সামনে কী কী বড় প্রতিযোগিতা আসছে? শিক্ষার্থীরাই বা কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন? সে খবর নিতেই আমরা কথা বলেছিলাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘এসিএম-আইসিপিসি’। রুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী প্রীতম কুমার পাল বলছিলেন, ‘এটা অনেক বড় প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট-ফুটবলের বিশ্বকাপের মতো। বিভিন্ন দেশে প্রথমে আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হয়। সেখান থেকে বিজয়ী কয়েকটা দল যায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। মে মাসে এ বছরের “ওয়ার্ল্ড ফাইনাল” অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।’ বাংলাদেশে এসিএম-আইসিপিসির আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা গত বছরই শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দল শীর্ষ দুটি স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল। এখন তারা চূড়ান্ত পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া গুগলের ‘কোড জ্যাম’ আর ফেসবুকের ‘হ্যাকার কাপ’ বেশ বড় পরিসরের দুটো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। কোড জ্যামের নাম নিবন্ধন শুরু হবে আগামী ৭ মার্চ।
এশিয়ার অন্যতম বড় প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা উৎসব ‘টেককৃতি’। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) আয়োজিত এ উৎসবে রোবোটিকস, ইলেকট্রনিকস, বিজনেস, ডিজাইন, কোডিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতা হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অংশগ্রহণ করে কোনো না কোনো দল। এ প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কারও এসেছে বাংলাদেশের ঝুলিতে। এ বছর টেককৃতির উৎসব চলবে আগামী ২৩ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। রোবোটিকস কম্পিটিশন প্রসঙ্গে ‘ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ’ (ইউআরসি)-এর কথাও বলতেই হয়। এ প্রতিযোগিতায় ভবিষ্যতের ‘রোভার’ বানানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ইউটাহর মরুভূমিতে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন রোবটগুলো ভবিষ্যতে নভোচারীদের সঙ্গে মঙ্গলগ্রহে কাজ করবে। এবারের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে জুন মাসের ১ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত।
বিতার্কিকদের জন্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ‘ডব্লিউইউডিসি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতিবছর একেকটি দেশে এ প্রতিযোগিতার আসর বসে। ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর শুরু হয়ে এ বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি আসর শেষ হয়েছে। আগামী বছরের সূচি এখনো প্রকাশ করা না হলেও ২০১৭ সালের শেষ ভাগেই হবে বলে দেশের বিতার্কিকেরা জানালেন। ওদিকে ভারতের ও পি জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর একটি সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। গত বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সে উৎসবে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দুটো পুরস্কারই পেয়েছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। এ বছরের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
‘বিজনেস কম্পিটিশন’ জগতের বড় নাম বিজমায়েস্ত্রো। ইউনিলিভার আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মূল আসর—ফিউচার লিডারস লিগে গত বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছরও একটি দল মূলপর্বে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরও একটি বড় বিজনেস কম্পিটিশন—ব্র্যান্ডউইটজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) এই প্রতিযোগিতার আয়োজক। ‘এ বছরের ব্র্যান্ডউইটজে আমাদের দল ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছে।’ বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থী হোসনে মদীনা। ফাইনালের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেখানে ভালো কিছু করার আশা করছেন তিনি। গত নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ আয়োজন। এ বছরের শেষ দিকে ব্র্যান্ডউইটজের আরেকটি আসর বসবে।
এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে থাকবে নানা প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীরা, তৈরি হচ্ছেন তো?