প্রেজেন্টেশনের পরামর্শ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, করপোরেট অফিস, অনুষ্ঠানের মঞ্চ কিংবা কোনো ব্যবসায়িক ভাবনা বা উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা—সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন বা উপস্থাপনা। কেউ কেউ ভাবেন শুধু ব্যক্তিগত প্রতিভার জোরেই অনেকে ভালো উপস্থাপনা করেন, অনবরত কোনো বিষয়ে সুন্দর করে কথা বলেন। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, বক্তব্য দেওয়ার উন্মুক্ত মঞ্চ টেডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেওয়া সফলদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যক্তিগত আগ্রহ আর চর্চাতেই আসলে মানুষের উপস্থাপনাশৈলী দারুণ হয়। শিক্ষাজীবনে কীভাবে দারুণ উপস্থাপনার দক্ষতা আয়ত্ত করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়ে প্রশাসন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক সাইফ নোমান খান। তিনি মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই নিয়ম করে চর্চা করলে ভালো ‘প্রেজেন্টেশন’ দেওয়ার গুণ আয়ত্ত করা যায়। এ বিষয়ে ১০টি পরামর্শ পাওয়া গেল তাঁর কাছে।
১
নিজের সম্পর্কে জানুন: ভালো উপস্থাপনার প্রধান শর্ত হচ্ছে নিজের দুর্বলতাগুলোকে জানা ও সেগুলো কাটিয়ে ওঠা। কথায় জড়তা বা উচ্চারণে সমস্যা থাকলে ক্লাসে প্রেজেন্টেশনে ভালো করা কঠিন। শুদ্ধ বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যবহারিক উচ্চারণ জানতে হবে, শিখতে হবে। ভুল আর দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টাই মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।
২
চর্চার বিকল্প নেই: ভালো প্রেজেন্টেশন শেখার জন্য একটাই মন্ত্র, চর্চা। জড়তা কাটানোর জন্য স্মার্টফোনে নিজের উপস্থাপনার ভিডিও ধারণ করে ভুলগুলো সংশোধন করে নিজেকে শুধরানো যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য রাখছেন এমনটা ভেবে উঁচু ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলুন।
৩
দুশ্চিন্তাকে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে ভাবুন: প্রেজেন্টেশনের সময় দুশ্চিন্তার জালে আটকে যাওয়া স্বাভাবিক। এটা কাটানোর আসলে কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই বরং দুশ্চিন্তাকে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কল্পনা করে উপস্থাপনাকে আকর্ষণীয় করা যায়।
৪
গল্প বলতে শিখুন: খুব কঠিন কোনো বিষয়ও খুব সহজে উপস্থাপন করা যায়। আপনি যদি যেকোনো বিষয় গল্পের মতো উপস্থাপন করা শিখতে পারেন, তাহলে আপনার উপস্থাপনাও আকর্ষণীয় হবে। শ্রোতার চোখে চোখ রেখে আলাপের ঢঙে কথা বলুন।
৫
‘মুখস্থ’ কিংবা স্রেফ ‘দেখে দেখে পড়া’ নয়: এই চেষ্টা উপস্থাপনাকে একঘেয়ে আর বিরক্তিকর করে তোলে। শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। নিজের মতো করে ভিন্নভাবে কথা আর শব্দ গুছিয়ে বলা শিখুন। সাধারণ শব্দ ভিন্নভাবে ব্যবহার করে উপস্থাপনাকে আকর্ষণীয় করা যায়। কোনো শব্দ একটু জোর দিয়ে বলুন। কোনো কোনো শব্দ বা বাক্য ছুড়ে দেওয়ার আগে একটা ছোট্ট প্রয়োজনীয় বিরতি নিন।
৬
বিষয় ও শ্রোতাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন: ‘প্রেজেন্টেশন’ দেওয়ার আগে আপনি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত সর্বশেষ তথ্য জেনে নিন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আপনার উপস্থাপনার শ্রোতা কে বা কারা তা আগে থেকে জেনে তার/তাদের বয়স-আগ্রহ বুঝে উপস্থাপনার গল্প সাজিয়ে কথা বলুন।
শিক্ষকের সামনে বা শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন বন্ধুর সামনে কিংবা উন্মুক্ত কোনো প্রতিযোগিতায় প্রেজেন্টেশন দিতে যে প্রস্তুতি নেবেন তা একইভাবে হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে কথা বলার সময় প্রয়োগ করুন।
৭
অনলাইন থেকে শিখুন: ইউটিউবে উপস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কিছু ভিডিও আছে। অনেক সময় এগুলো বেশ কাজে আসে।
৮
অনুকরণ বা অনুসরণ করুন: স্টিভ জবস, শেরিল স্যান্ডবার্গ বা মুহম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কিংবা আপনার প্রিয় কোনো ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন ভাষণ, সাক্ষাৎকার থেকে কথা বলার ধরন অনুসরণ করে উপস্থাপনার কৌশল আয়ত্ত করতে শিখুন। শুরুতে অনুকরণ করার চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে আপনার সহজাত একটি ঢং তৈরি হয়ে যাবে।
৯
দর্শকের চোখের দিকে তাকান: প্রেজেন্টেশনের সময় ‘আই কন্টাক্ট’ বা দর্শকের চোখে চোখ রাখাটা খুব জরুরি। ক্লাসে বা মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শক যেন এটা বিশ্বাস করেন, কথাগুলো আপনি তাঁকেই বলছেন। আপনার শূণ্য দৃষ্টি দর্শকের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আলাপের ঢঙে কথা বলুন।
১০
হাসুন আর হাসাতে শিখুন: বিভিন্ন ধরনের উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুল করি তা হলো মুখ গোমড়া করে রাখা। অবস্থা বুঝে পরিমিত হাসি যেকোনো প্রেজেন্টেশনকে আকর্ষণীয় করে তোলে। সুন্দর করে হাসতে শিখুন। হাসির কারণেই আপনাকে আত্মবিশ্বাসী দেখাবে আর শ্রোতাদের মনোযোগ আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে।