জমজমাট একদিন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
মঞ্চে পাঞ্জা লড়ছে দুই বন্ধু। তুমুল তালি আর চিৎকারে ফেটে পড়ছে মিলনায়তন। কে হারে, কে জেতে। ইতিমধ্যে দর্শক সারিতে দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সমর্থকরা। নিজ নিজ প্রতিযোগীর পক্ষে শ্লোগান দিচ্ছেন তারা। ধারাভাষ্যকার মাইকে চিৎকার করে বলে যাচ্ছেন, টান টান উত্তেজনা… জমে উঠেছে খেলা।
গত ২১ এপ্রিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা মিলনায়তনের দৃশ্য এটি। সারা দিন এরকম নানা আয়োজনে মেতে উঠেছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৩০ জন শিক্ষার্থী। কেউ এসেছেন ফেনি থেকে কেউ রংপুর থেকে। কেউবা এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে, আবার কেউ এসেছেন ময়মনসিংহ থেকে। উদ্যোক্তা হওয়ার অদম্য ইচ্ছাই তাদের টেনে এনেছে এতদূর।
সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করার জাতীয় মেধা অন্বেষণ ও বৃত্তি প্রতিযোগিতা Are You the Next Startup?এর প্রথম গ্রুমিং সেশনে অংশ নিতে এসেছেন এই তরুণ প্রতিযোগিরা। প্রতিযোগিতার অনলাইন আবেদন শুরু হয়েছিল গত ১লা এপ্রিল এবং আবেদন গ্রহণ শেষ হয় ১২ এপ্রিল। এরপর ২১৮টি আবেদন থেকে প্রাথমিক বাছাই শেষে ৭৫ জনকে ইমেইলে আমন্ত্রণ জানানো হয় গ্রুমিং সেশনে অংশ নেওয়ার জন্য। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ৩০ জন অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়। গ্রুমিং সেশন চলবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ০১ মে ২০১৭।
গ্রুমিং সেশন শুরু হয় সকাল সাড়ে আটটায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিস্তৃত সবুজ মাঠে সম্মিলিত শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে। এরপর স্বাধীনতা মিলনায়তনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারপর একের পর এক চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতার নানা পরীক্ষা। কখনো গান গেয়ে, কখনো অভিনয় করে, কখনো বিতর্ক করে, কখনো গল্প বলে, কখনো সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এসব প্রতিযোগিতার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীরা জানান নিজেদের অনুভূতির কথা, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল নতুন কিছু করার। প্রথা ভেঙে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। সেই ইচ্ছার কারণেই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া।’ বলছিলেন টাঙ্গাইল থেকে আসা নাঈমা জাহান চাঁপা।
সুদূর ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন ওয়ালিদ। ইতিমধ্যে একটি ব্যবসায় উদ্যোগ পরিচালনা করছেন তিনি। এই বৃত্তি প্রতিযোগিতার খবর পেয়ে তার মনে হলো, সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত। তার ভাষ্য, ‘আমি তো একটি ব্যবসা পরিচালনা করি। এর মাধ্যমে কিছু প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান অর্জিত হয়েছে। ভাবলাম, এই প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞানের সঙ্গে একাডেমিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে পারলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটা অনেক সহজ হবে।’
গ্রুমিং সেশনে একসময় উপস্থিত হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাদেরকে নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই তোমাদেরকে আজ সারাদিন নানা ধরনের সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি তোমাদের মধ্যে সেই অদম্য স্পৃহা আছে কি না যা তোমাকে সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সফল উদ্যেক্তায় পরিণত করবে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উদ্যোক্তাদের রোল মডেল তৈরি করতে চায় উল্লেখ করে মো. সবুর খান আরও বলেন, একটা সময় ছিল যখন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য খুব একটা পড়াশোনার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটে একজন উদ্যোক্তাকে টেকনোলজির ব্যবহার জানতে হয়, আন্তর্জাতিক ব্যবসার খবরাখবর রাখতে হয়। তাই তার পড়াশোনা জানা জরুরি। এসময় তিনি আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের উদাহরণ টেনে বলেন, শেখ আকিজ বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি কিন্তু তিনি তার সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে পড়ালেখা করিয়েছেন। তার সন্তানরা এখন আকিজ গ্রুপের হাল ধরেছেন বলে এখনও আকিজ গ্রুপ শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে।
দিনব্যাপী গ্রুমিং সেশন পরিচালনা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু। আর অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের (আইআইসি) প্রকল্প পরিচালক আবু তাহের খান। এছাড়া অনুষ্ঠানে ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশীপ’ বিভাগ ও Are You the Next Startup? সম্পর্কে ধারনা দেন এন্ট্রাপ্রেনিউরশীপ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ মারুফ রেজা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক ইজাজ-উর-রহমান সজল।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ শেষ হয় গ্রুমিং সেশন। এবার নীড়ে ফেরার পালা। ‘বৃত্তির সুযোগ পাই বা না পাই, এই দিনটি স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আজীবন’। বলছিলেন ফেনি থেকে আসা নয়ন কুমার দাশ। অপরদিকে নিজেদের মধ্যে ফোন নম্বর আর ফেসবুক আইডি বিনিময় করতে ব্যস্ত ইমরান, রিজভি, ইনজামামুল, শাহরিয়ার, সাইফুল্লাহ, শাম্মি ও অন্যান্য প্রতিযোগিরা। বিদায়বেলায় তাদের সবার এক উচ্চারণ—সবাই নিশ্চয় বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবো না, তবে আমাদের এই বন্ধুত্ব থেকে যাবে আজীবন। ফোনে কথা হবে… ফেসবুকে নক দিও…।