সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
চাকরি যেন সোনার হরিণ। একটা চাকরি পাওয়ার জন্য চাকরিপ্রার্থীর কতই না কষ্ট করতে হয়। ইন্টারভিউয়ের দৌড়ে অনেকেই পিছিয়ে পড়ে হারিয়ে ফেলে সুবর্ণ সুযোগ। অনেকেই বোঝেন না কিভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডকে ফেস করবেন। অনেকে আবার ভয়ে সব কিছু গুলিয়ে ফেলেন। ভালোভাবে ইন্টারভিউ ফেস করার জন্য রয়েছে অনেক উপায়। তার মধ্যে কয়েকটি মেনে চলতে পারলে অনেকেই ভালোভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগদাতাদের আসলে নিজেকে তুলে ধরতে হয়। নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে হয় এবং তাদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। এ কাজগুলো করার জন্য আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন :
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা : যে প্রতিষ্ঠানে আপনি সাক্ষাৎকার দিতে যাবেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকাটা খুবই জরুরি। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তাদের অন্যান্য কার্যক্রম আছে কি না লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বিশেষ কোনো নীতি অনুসরণ করে কি না সে বিষয়গুলো আগেই জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট, প্রেস রিলিজ, তাদের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস সেক্টর, ওয়েবসাইট বিভিন্ন জায়গা থেকে এ বিষয়ে তথ্য পেতে পারেন। সুযোগ থাকলে কারোর সাথে কথা বলেও অনেকটা তথ্য জানতে পারবেন। এসব তথ্য আপনাকে আস্থা জোগানোর সাথে সাথে কেন আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করবে।
প্রার্থিত পদ সম্পর্কে জানুন : দ্বিতীয় ধাপে যে পদে আপনি যোগ দিতে আগ্রহী সেই পদটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। আপনার কাছে কী চাওয়া হচ্ছে যদি এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন তাহলে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া খুবই সহজ হয়ে যাবে। বিজ্ঞাপনে যেটুকু লেখা আছে তার চেয়ে একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কন্ট্রাক্ট নাম্বার দেয়া থাকলে টেলিফোন করেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। কী ধরনের যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি বুঝে নিন। প্রতিষ্ঠানের চাওয়া বুঝতে পারলে নিজেকে প্রস্তুত করতে সহজ হবে।
নিজেকে জানুন : ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হওয়ার আগে একবার নতুন করে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাগুলো যাচাই করে নিন। আপনি এই পদে কেন প্রার্থিতা করছেন এবং এর জন্য আপনি কতটা যোগ্য সেটা ভালোভাবে বুঝে নিন। এর ফলে আপনার নিজের ওপর আস্থা বাড়বে। বোর্ডের সামনে নার্ভাস হয়ে পড়তে হবে না।
চর্চা করুন : ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে যাওয়াটা খুবই সাধারণ ঘটনা। অনেকেই নার্ভাস হয়ে জানা প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারে না। অনেকে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। এলোমেলো কথা বলে এসব কোনোটাই আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে না। তাই এ জাতীয় সমস্যা এড়াতে আপনি বাসায় বসে ইন্টারভিউয়ের প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন। তাহলে ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবেন।
আচরণের দিকে নজর দিন : ইন্টারভিউ দেয়ার সময় আপনাকে হতে হবে ভদ্র, বিনয়ী ও বন্ধুসুলভ। সাথে সাথে সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত। যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে পারে সাক্ষাৎকার গ্রহীতারাও সাধারণত তাদের সাথে সেভাবেই কথা বলে না।
তারা যেন আপনার আচরণে সন্তুষ্ট হন তার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার জন্য ইন্টারভিউ দেয়াটা সহজ হয়ে যাবে। বিভিন্নমুখী প্রশ্ন এলেও ধৈর্য ধরে শান্তভাবে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন।
সময় নিন : তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিতে যাবেন না। পানি খেতে চাওয়া, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়াটাও আপনার জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনার বক্তব্য বুঝিয়ে বলার জন্য যে সময়টুকু নেয়া প্রয়োজন নিন। এতে আপনার চিন্তাগুলোও সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে উত্তর দিতে গিয়ে অযথা দেরিও করবেন না। এ বিষয়গুলোও আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে না।
নিজে সন্তুষ্ট হওয়ার চেষ্টা করুন : এমনভাবে ইন্টারভিউ দিন যেন আপনি নিজে সন্তুষ্ট হতে পারেন। এমন কিছু করবেন না বা বলবেন না যার জন্য পরে নিজেকেই দোষী মনে হতে পারে।
রিলাক্স করুন : এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো চাকরি হবে বা এটাই আপনার জন্য শেষ সুযোগ, এমনটা ভাববেন না। আপনার জন্য আরো সুযোগ আছে, ভাবতে পারলে অনেকটাই রিলাক্স থাকা যায়। ইন্টারভিউ যদি খুব খারাপ হয় তাহলেও আপনাকে আস্থা রাখতে হবে যে, সামনে হয়তো এর চেয়েও ভালো সুযোগ আসবে।
সময় মেনে চলুন : ইন্টারভিউয়ে সময়মতো হাজির হওয়া খুবই জরুরি। কারণ যা-ই থাক না কেন, দেরিতে পৌঁছানোটা কখনো ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা ভালোভাবে মেনে নেবেন না। বলা যায় দেরি হয়ে যাওয়া মানে প্রথমেই পিছিয়ে পড়া।
পর্যবেক্ষণ করুন : ইন্টারভিউ হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার পথ। ইন্টারভিউ বোর্ডে অনেকজন থাকেন তাদের সবার প্রশ্ন করার ধরনও এক রকম হবে না। সে জন্য আপনার পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে কে, কিভাবে কথা বলছেন তা পর্যবেক্ষণ করাটাও জরুরি। কেউ যদি সহজভাবে কথা নাও বলেন তাহলেও আপনার বিনয়ের সাথে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনার আচরণই আপনাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার আচরণ হতে হবে বিনয়ী এবং বন্ধুসুলভ। সব বিষয়ে সচেতন থাকাটাও প্রয়োজন।
চাকরির প্রস্তুতি বিষয়ে আজকাল বহু গাইড বই পাওয়া যায়। সেসব বই থেকে আপনি সহযোগিতা নিতে পারেন। কারণ চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা ভালো প্রস্তুতি। সব বিষয়ে লক্ষ রেখে যদি ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া যায় তাহলে চাকরি নামক সোনার হরিণ নিশ্চয়ই ধরা দেবে।