শিমে ঘুচছে বেকারত্ব
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ঈশ্বরদীতে ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ ‘রূপবান’ শিমের ফুলে ভরে গেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু শিমফুলের দৃশ্যই চোখে পড়ে। এরই মধ্যে ‘রূপবান’ নামের নতুন জাতের শিম বাজারে আসতে শুরু করেছে। এজন্য ঈশ্বরদীর শিমচাষি এখন মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছে শিমের ফুল বাছাই ও পরিচর্যা নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বিরামহীনভাবে উপজেলার মুলাডুলিসহ প্রায় ২০ গ্রামের চাষি এখন শিম চাষের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শিম শীতকালীন সবজি হলেও আগাম জাতের শিম রূপবানের ফল ঘরে উঠতে শুরু হয়েছে। এজন্য শিমচাষির ঘরে ঘরে আনন্দ লক্ষ করা যাচ্ছে। শিমের বাম্পার ফলনে এলাকার কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অনেক বেকার মানুষ শিম চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন।
জানা যায়, দেশের প্রধান শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়ন। শিম শীতকালীন সবজি হলেও এখন বর্ষার সময় শিম চাষের উপযুক্ত মৌসুম হওয়ায় ঈশ্বরদীর প্রায় আড়াই হাজার চাষি তাদের নিজ জমি ও খাজনা করে নেয়া জমিতে শিম বপন করেছেন। মুলাডুলি ছাড়াও শেখপাড়া, আটঘরিয়া, ফরিদপুর, রামনাথপুর, রাজাপুর, দুবলাচড়া, পারখিদিরপুর, পতিরাজপুর, গোপালপুর, মাঝগ্রামসহ পাশের এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ শিম চাষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে আগাম জাতের রূপবান শিম বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগাম জাত হওয়ায় প্রতি কেজি শিম ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ এলাকায় প্রতি বছর এক থেকে দেড় কোটি টাকার শিম উৎপাদন হচ্ছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর থেকে এলাকার কৃষক শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এ কারণে মুলাডুলির ঐতিহাসিক আমবাগানে শিমের বিশাল আড়ত ও সমিতি চালু হয়েছে ৮ থেকে ৯ বছর আগে। ফলে ১৫ বছর ধরেই এ এলাকায় ট্রাকে মালামাল পরিবহন, হোটেল ব্যবসাসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক কর্মকা- জোরদার হয়েছে। এলাকার মানুষের আর্থিক পরিবর্তনও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। মুলাডুলির শিমচাষি নজরুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে শিমের আগাম জাত রূপবান চাষ হচ্ছে। এতে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন চাষি। শিমচাষি আবদুল হাকিম জানান, তিনি ৫ বিঘা শিমক্ষেত থেকে এরই মধ্যে ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। তার খামারের দিকে তাকালে দেখা যায়, শুধু শিম আর শিম। শিমফুলের গন্ধে এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে আগাম লাগানো ৫ বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার ‘রূপবান’ শিম এরই মধ্যে বাজারে বিক্রি করেছেন। খরচের তুলনায় দাম একটু বেশি পাওয়ায় সব চাষির মুখে হাসি ফুটেছে। পাড়া-মহল্লায় আনন্দের জোয়ার বইছে।
কৃষক জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে শিম চাষ করা যায়। মাত্র ৩ মাসে এ ফসল প্রতি বিঘায় বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকার। ফলে কৃষক সমাজে আনন্দের জোয়ারে যাতে ভাটা না পড়ে, সেজন্য কৃষক এখন শিমের মরা ফুল বাছাই ও ফুল রক্ষার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শিমক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করছেন। অতি বৃষ্টিতে কিছু ফুল শিমগাছ থেকে ঝরে পড়লেও তারা তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়েননি। শিমচাষি জানান, সহজ শর্তে তাদের ব্যাংক ঋণ দরকার। সহজ শর্তে কোনো ব্যাংক কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে এ শিম চাষ প্রসারিত করা সহজ হতো। এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকা-ও বৃদ্ধি পেত। সফল শিমচাষি শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির পেছনে না ঘুরে এবং বসে না থেকে শিম চাষে ঝুঁকে পড়ারও আহ্বান জানান তারা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল জানান, গেল বছর ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছিল। কৃষক এখন আগাম জাতের রূপবান শিম চাষে ব্যস্ত। তাছাড়া ফলনও ভালো, যা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, শিমচাষিকে তারা সার্বিক সহযোগিতা করায় গেল বছরের চেয়ে এবার ৪০০ হেক্টর জমিতে বেশি শিম চাষ হয়েছে। ঈশ্বরদীতে প্রায় ১২ হাজার পরিবার শিম চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শত শত বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন এ শিম চাষকে কেন্দ্র করে। অন্যদিকে দেশীয় জাতের শিম চাষের জন্যও কৃষক পুরোদমে বেড তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	