বিশ্বসেরা ৫ উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগপ্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে গবেষণার ভিত্তিতে গত বছর (২০১৮) বিশ্বসেরা ১০০টি উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তালিকার শীর্ষ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও অন্যান্য খবর তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
১. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৪ সাল থেকেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনীতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। সেরা উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অ্যাডভান্স সায়েন্স, নতুন ধারার প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তাদের গবেষণার ক্ষেত্র বাড়িয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্যামেরা প্রযুক্তি, চালকবিহীন গাড়ি এবং অসুস্থ হলে মানুষ কী পরিমাণ ওষুধ সেবন করবে- এমন নানান উদ্ভাবনী ব্যাপারে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করেছেন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ৫৯ বিজ্ঞানী ও গবেষক। বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সান মাইক্রো সিস্টেমস, ইয়াহু, ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা, এইচপির সহপ্রতিষ্ঠাতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ইউটিউবের সহপ্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জাভেদ করিমও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের একজন। ১৮৯১ সালে সিলিকন ভ্যালির কাছে স্ট্যানফোর্ড শহরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন লিল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড ও তার স্ত্রী জেন স্ট্যানফোর্ড।
২. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত শরীরবিদ্যা এবং প্রকৌশলী গবেষণার জন্য বিখ্যাত হলেও বর্তমানে জীববিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ব্যাপক সমাদৃত। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির সফলতার ঝুলিতে রয়েছে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিগত অবদানের ইতিহাস। পেনিসিলিনের প্রথম রাসায়নিক বিক্রিয়া গবেষণা, রাডারের বিকাশ, কোয়ের্ক আবিষ্কার এবং চৌম্বকীয় কোর মেমোরি উদ্ভাবন বিদ্যাপীঠটিকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৮ সালে বানানো হয় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন কম্পিউটার ‘হুইয়ার্লউইন্ড ১’। এমআইটির জাদুঘরে এখনো তা সংরক্ষিত আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা ২৫ হাজার ৮০০ প্রতিষ্ঠান চলছে গোটা পৃথিবীতে। এমআইটির শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, বিগ ডেটা, স্টেইনএবল এনার্জি, হিউম্যান হেলথসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক বিষয়ে গবেষণায় করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানসহ ৮৫ জন নোবেল বিজয়ী, ৫৮ জন বিজ্ঞানী, যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন গবেষক এবং উদ্ভাবকও রয়েছেন। ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজ শহরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান। বিগত তিন বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সেরা তিনে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৩৬ সালে। ১৬৩৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান জন হার্ভার্ডের নামে এর নামকরণ হয়। বোস্টনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিখ্যাত এই বিদ্যাপীঠ থেকে ৪৫ জন নোবেল বিজয়ী, ৩০ জন রাষ্ট্রনায়ক এবং ৪৮ জন পুলিৎজার জয়ী পড়াশোনার সোনালি অধ্যায় শেষ করেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি এখানেই অবস্থিত। সাড়ে ২০ মিলিয়ন ভলিউম, ৪০০ মিলিয়ন ম্যানুস্ক্রিপ্ট, ১০ মিলিয়ন আলোকচিত্র, ১২৪ মিলিয়ন ওয়েবপেইজ আর্কাইভ, ৫.৪ টেরাবাইট ডিজিটাল আর্কাইভসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের সংগ্রহ আছে এখানে। হার্ভার্ডের ইতিহাসে ২০১টি দেশ থেকে ৩ লাখ ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে এসেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান বয়স ৩৮২ বছর।
৪. পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিল। তালিকায় অবস্থান চারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনী শিক্ষার্থী গড়ার কারখানা এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ২৫ জনই বিশ্বের বিলিয়নেয়ার। বিদ্যাপীঠটি নাকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যাপীঠটি পিনসিলভানিয়ার মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইভি লীগের সদস্যও। মূলত শিল্পকলা ও মানববিদ্যা, সামাজিক বিজ্ঞান, স্থাপত্য এবং যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে বিদ্যাপীঠটি বিখ্যাত। ১৭৪০ সালে বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিদ্যাপীঠ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন নোবেল বিজয়ী, ১৬৯ জন গুগেনহেম ফেলো, যুক্তবাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ১২ জন প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ জন সিইও পড়াশোনা করেছেন।
৫. ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়
তালিকায় গতবারের চেয়ে দু’ধাপ এগিয়ে সেরা পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটলে অবস্থিত। এটি ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল বিজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞানে লিন্ডা বি বাক, মার্টিন রডবেল ও অর্থনীতিতে জর্জ স্টিগ্লার পড়াশোনা করেছেন।
তালিকায় আমেরিকা ও ইউরোপের সংখ্যা বেশি থাকলেও গবেষণা ও উদ্ভাবনীতে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করায় এশিয়ার মধ্যে থেকে জাপান, চীন ও কোরিয়া স্থান করে নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন দিন গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে প্রচুর ডলার ব্যয়ের ফল হাতেনাতেই পাচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞানী, গবেষকরা বিশ্বকে এগিয়ে নিতে নতুন নতুন কাজ করে যাচ্ছেন। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। জার্মানি ও জাপানের নয়টি করে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় আছে।
এছাড়া ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম সেরা উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
সূত্র : রয়টার্স
প্রচ্ছদ ছবি : স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
Video source : WORLD ECONOMY