ডিজিটাল লুটপাটের আরেক নাম ‘অনলাইন পাইরেসি’
- নিজেল কোরি ও ড্যানিয়েল ক্যাস্ট্রো
সমাজের ভালো দিকগুলো দেখার একটা চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারি। করোনা রোগীদের সেবা করতে গিয়ে ডাক্তার ও সেবিকারা ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন। শিক্ষকরা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বিরামহীন পরিশ্রম করছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী রাতদিন শুধু মাস্ক সেলাই করছেন আর বিতরণ করছেন যাতে মরনঘাতী ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়।
আর আমরা যারা অবশিষ্ট রয়েছি তারা কী করছি? সঠিক কাজই করছি। অর্থাৎ ঘরে বসে থেকে পছন্দের মুভি ও টেলিভিশন শো দেখছি। এর বাইরেও কিছু লোক রয়েছে যারা এই ভয়ংকর দুর্যোগের মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
আমরা জানি কোনো কিছুর দাম নিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে ডিল করার সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তারপরও কিছু মানুষ অতিরিক্ত লাভের জন্য ডিজিটাল পাইরেসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। তারা লাখ লাখ মুভি, টেলিভিশন শো, গান, ই-বুক ইত্যাদি অনলাইন থেকে চুরি করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রমের ফল এভাবে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এতে বিনোদন খাতের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়ছে অনেক কর্মী।
অনলাইন পাইরেসি আর কিছুই নয়, ডিজিটাল লুটপাট ছাড়া। এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্য এখনই নীতিনির্ধারকদের সোচ্চার হওয়া উচিত। বিশেষ করে নতুন স্বাভাবিক জীবনে যারা নাটক, চলচ্চিত্র, গান, ই-বুক ইত্যাদি তৈরি করবেন তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া উচিত।
যদিও ডিজিটাল পাইরেসি নতুন কোনো বিষয় নয়, তবে এই মহামারির সময়ে সবাই যখন ঘরে বসে নানা ধরনের বিনোদন খুঁজছে, তখন এই ডিজিটাল লুটেরাদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুশো’ নামের একটি পাইরেসি সনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে যে মহামারি শুরু হওয়ার প্রথম দিকে মুভি পাইরেসির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ভিডিও পাইরেসি সাইট ‘সোপটুডে’র সার্চের পরিমাণ গত বছরের মধ্য এপ্রিলের চেয়ে এ বছর ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই সাইটে মূলত বিনামূল্যে মুভি, টেলিভিশন শো, থিয়েটার শো ইত্যাদি দেখা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সাইটের অধিকাংশ কনটেন্টই চুরি করা। এই সাইট যারা পরিচালনা করেন তারা কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি ছাড়াই এবং পপ-আপ বিজ্ঞাপন ছাড়াই অর্থ উপার্জন করছেন।
এমনকি মানুষ যখন হলিউডের সর্বশেষ মুভি দেখার জন্য স্ট্রিমিং করছে তখন তারা (অনলাইন লুটেরা) অনৈতিক পন্থায়, অবৈধভাবে সেসব মুভির কোড চুরি করছে। ফলে নেটফ্লেক্স, এইচবিও, ডিজনি প্লাস, হুলু এবং অ্যামাজন প্রাইমের দর্শকরা চলে যাচ্ছে ওইসব অবৈধ সাইটে। এই চৌর্যবৃত্তির ফলে ভিডিও নির্মাতাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশ্বে এখন ১৪০টির মতো স্ট্রিমিং সাইট রয়েছে যারা বিভিন্ন মূল্যে গ্রাহকের কাছে ভিডিও সরবরাহ করে থাকে। মূল্য দিয়ে ক্রয় করা ছাড়া গ্রাহকের কাছে অন্যকোনো আইনি বিকল্প ছিল না। কিন্তু এখন অনলাইন দস্যুদের কারণে স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে।
গত বছর শুধু অনলাইন ভিডিও পাইরেসির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২৯ দশমিক ২ বিলিয়ন রাজস্ব হারিয়েছে। চাকরি হারিয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। আর জিডিপি হ্রাস পেয়েছে ৪৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন।
সন্দেহ নেই, এই অনলাইন পাইরেসির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদন খাত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারাচ্ছে। চাকরি হারাচ্ছে এই খাতের লাখ লাখ কর্মী। আদালতকে এখনই স্বপ্রণোদিত হয়ে এইসব পাইরেসি বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রারের নীতি নির্ধারকরা ইন্টারনেট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে একত্রে এই সমস্যার সমাধান করেতে পারে। সার্চ ইঞ্জিন রেগুলেটরি ইচ্ছা করলেই অবৈধ লিংকগুলো ওয়েবপেজ থেকে অপসারণ করতে পারে।
কংগ্রেসের বিচার বিভাগের উচিত হবে অবৈধ বিদেশি সাইটগুলোর তালিকা তৈরি করা এবং অনলাইন পাইরেসির সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনা প্রদান করা।
সূত্র: ইনসাইডসোর্স
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
নিজেল কোরি: ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।
ড্যানিয়েল ক্যাস্ট্রো: ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।