দস্যি ছেলেপুলেদের গল্প!
- মেহেরাবুল হক রাফি
হ্যারি পটার! নামটা শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোল ফ্রেমের চশমা-পরা এক ককেশিয়ান বালকের ছবি। গত দুই দশক ধরে ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সকল বয়স ও শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে জে কে রাওলিংয়ের অনবদ্য এই সৃষ্টি। বইয়ের পাতা থেকে সেলুলয়েডের পর্দা, সবখানেই সমালোচক এবং দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে হগওয়ার্টসের দস্যি ছেলেপুলের গল্প।
হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাওলিংয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডেই। শৈশবকালে ছোট বোনকে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিজে থেকে বানানো রূপকথার গল্প দিয়েই লেখালেখির হাতেখড়ি রাওলিংয়ের। তখন হয়তো ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি যে ভবিষ্যতে এই রূপকথার রাজ্যই তাকে জগতজোড়া খ্যাতি এনে দিবে। জীবিকার তাগিদে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ডিভোর্সের পর সিঙ্গেল মাদার হিসেবে দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিলো। অর্থ উপার্জনের তাগিদেই শেষমেশ হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম আর কাগজ। দিনের বেলায় স্কুলের হাড়ভাঙা খাটুনি, আর রাত জেগে দিস্তার পর দিস্তা কাগজে লেখালেখি।
এতো কষ্টের ফসল ঘরে তোলাটাও যেনো ছিলো আরেক সংগ্রামের গল্প। পেঙ্গুইন থেকে শুরু করে হার্পারকলিন্স; নামীদামী সব প্রকাশকের দ্বারস্থ হয়েও বেশ কয়েকবার প্রত্যাখাত হয় ফিলোসফার’স স্টোনের ফার্স্ট ড্রাফট। কয়েক বছর পর অখ্যাত ব্লুমসবার্গ পাবলিকেশন্স থেকে প্রথম প্রকাশ পায় রাওলিংয়ের পটার-সাম্রাজ্যের প্রথম কিস্তি। এরপরের গল্প যেকোনো রূপকথাকেও হার মানাতে সক্ষম।
একে একে হ্যারি পটার সিরিজের আটটি বই জায়গা করে নেয় নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট-সেলিং উপন্যাসের তালিকায়। হলিউডের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রোস কিনে নেয় সিরিজের সিনেমা-স্বত্ত্ব। একসময়ের কপর্দকহীন জে কে রাওলিং পরিণত হন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লেখকে। লেখালেখি করেও যে বিলিওনিয়ার হওয়া সম্ভব সেটিই বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ৫৬ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ লেখক। হ্যারি পটারের জগতকে শুধু হগওয়ার্টসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। বরং ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট প্রিক্যুয়েলের মাধ্যমে উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডকে করেছেন আরো বেশি উন্মুক্ত।
নব্বই দশকের শেষভাগে হ্যারি পটারের জাদুর দুনিয়াকে সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য তোরজোড় শুরু হয়। সিরিজের প্রথম দুটি কিস্তি পরিচালনা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় হোম-এলোন খ্যাত ক্রিস কলম্বাসকে। হ্যারি, হারমায়োনি এবং রন চরিত্রে অডিশনের জন্য ততকালীন পুরো ব্রিটিশ কিশোর-সমাজ যেনো হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো। এতো এতো বালক আর বালিকার মধ্যে থেকে অবশেষে বেছে নেওয়া হয় ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ, এমা ওয়াটসন এবং রুপার্ট গ্রিনকে। অন্যদিকে হ্যারির আর্চ-এনিমি হিসেবে পরিচিত ভল্ডেমর্ট চরিত্রে কাস্ট করা হয় বিখ্যাত অভিনেতা রাল্ফ ফিয়েনেসকে। এরপর আল্ফানসো কুয়ারোন এবং ডেভিড ইয়েটসের মতন নামী-দামী পরিচালকের হাতে হাতবদল হয়েছে পটার সিরিজের অন্যান্য কিস্তির।
টকিনের লর্ড অফ দ্যা রিংস সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত হ্যারি পটার অনেকক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গিয়েছে ফ্যান্টাসি জনরার আরো অনেক দুর্দান্ত কাহিনীকেও। বই বিক্রির দিক থেকে ফিকশন ক্যাটাগরিতে আজও সবার উপরে হ্যারি পটারের স্থান। ঠিক তেমনি পটার সিরিজের আটটা মুভি বক্স অফিসেও কামিয়েছে শত মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ছেলেবুড়ো থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর দর্শকদের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে রাওলিংয়ের এই অমর সৃষ্টি।
বর্তমানে রাওলিং ব্যস্ত রয়েছেন ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট সিরিজের বাকি সিনেমাগুলোর স্ক্রিপ্ট লেখার কাজে। সামনে এইচবিও ম্যাক্সের প্ল্যাটফর্মে আসার কথা রয়েছে পটারভার্স সিরিজ। যেখানে দেখানো হবে হগওয়ার্টসের চার হাউজের প্রতিষ্ঠাতার উত্থান এবং ফার্স্ট উইজার্ডিং ওয়ারের ঘটনা। সবমিলিয়ে বলা যায় যে, আরো অন্তত এক যুগ উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডের নানান দিক আবিষ্কারের সুযোগ পাচ্ছে পটারহেডরা।