ক্ষমতাধর রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

ক্ষমতাধর রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

  • তৌহিদুর রহমান

ইতিহাসের পাতা বলে একসময় অর্ধবিশ্ব শাসন করতো ব্রিটিশ রাজ পরিবার। গণতন্ত্রের উত্থানের পর থেকে কালের পরিক্রমায় ইংরেজ শাসকদের ক্ষমতা কমতে থাকলেও তা ব্রিটিশ রাজপ্রধানের ক্ষমতা বা গাম্ভীর্যতার উপর কখনোই ছাপ ফেলতে পারেনি। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রধান হলেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। পুরো নাম এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি। ব্রিটিশরা ভালোবেসে ডাকে মহারাণী এলিজাবেথ। 

রাজা ষষ্ঠ জর্জের  মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালে মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন কুইন এলিজাবেথ। গণতান্ত্রিক দেশ হবার কারনে নামমাত্র মহারাণী হলেও ইংল্যান্ডের রাজপ্রধান হিসেবে কুইন এলিজাবেথ এর রয়েছে কিছু বিশেষ ক্ষমতা যা বিশ্বের অন্য কোন ক্ষমতাবান ব্যাক্তির নেই এবং সচরাচর ব্যবহার না করার কারনে অনেকেই জানে না এই নামমাত্র রাণীর ক্ষমতা কতটুকু। 

বর্তমানে ইংল্যান্ড গনতান্ত্রিক দেশ হলেও সেখানে মহারাণীর শাসনকার্য চালিত হয়, যা অন্য কোন গনতান্ত্রিক দেশেই সম্ভব নয়। দেশের জনগণ ভোট দিলেও মহারাণীর সম্মতিক্রমেই ব্রিটেনের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত হয়। তিনি সকল আইন এবং সংবিধানের উর্ধ্বে। তিনি আদেশ করলেই যে কোন সময় ইংল্যান্ডের সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন কাউকে ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারেন। তিনি চাইলেই সংসদ কে না জানিয়েও যেকোন দেশের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন এবং শেষ করতে পারেন। ব্রিটিশ সরকার চাইলেই কোথাও পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারবে না। শুধুমাত্র কুইনের আদেশেই পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব। 

যেহেতু কুইন আইনের উর্ধ্বে তাই কুইনের উপর আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতাও কারো নেই। তাই তিনি কোন অপরাধ করলেও তার কোন শাস্তি  হবে না। এমনকি বিশ্বের যেকোন দেশে তিনি কোন অপরাধ করলেও তার উপর কেউ আইন প্রয়োগ করতে পারবে না। যদিও মহারাণী কখনো আইন ভঙ্গ করেননি। তিনি চাইলেই যাকে ইচ্ছা তাকে কোন কারন না দেখিয়েই গ্রেফতার করাতে পারবেন। তবে তার জনপ্রিয়তা কমায়, এমন কোন কাজই কুইন এখন পর্যন্ত করেননি।

মহারাণী এলিজাবেথ পৃথিবীর একমাত্র ব্যাক্তি যার কোন দেশে ভ্রমণ করতে পাসপোর্ট লাগে না। রাণী ছাড়া রাজপরিবারের বাকি সবাইকেই পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হয়। এলিজাবেথ রাণী হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৯৫ বার ভ্রমণ করেছেন কোন পাসপোর্ট ছাড়াই। এছাড়া রাণীর গাড়িতে কোন নম্বর পত্রেরও প্রয়োজন হয় না। এমনকি তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই যেকোন দেশে গাড়ি চালাতে পারবেন। মোটকথা, মহারাণী এলিজাবেথের কোন প্রকার পরিচয় পত্রেরই প্রয়োজন নেই। লাইসেন্স না থাকলেও কুইন ভালই গাড়ি চালান। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীর জন্য ট্রাক চালিয়ে চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

গ্রেট ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর সকল ক্ষমতাও রাণীর হাতে কারন সেখানে কুইনের নামে জীবন দেওয়ার শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় সৈনিকেরা। 

মহারাণী এলিজাবেথ শুধু ইংল্যান্ডেরই নয়, উনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ আরও ১২ টি দেশের রাণী। রাণী চাইলে যে কোন সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেও ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেন। তিনি তারই একটি দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

ঐতিহাসিক পরম্পরা অনুযায়ী তিনি গ্রেট ব্রিটেনের সকল সামুদ্রিক সম্পদের মালিক। এছাড়া ব্রিটেনের সাগরসীমার সকল তিমি ও ডলফিন এবং টেমস ও টেমসের শাখা নদীর সকল রাজহাঁসের মালিক হলেন কুইন এলিজাবেথ। 

মহারাণী এলিজাবেথ কোনপ্রকার কর দিতে বাধ্য নন, তবে রাণী হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত রাজ্যকর দিয়ে আসছেন। তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা রাণী।

Sharing is caring!

Leave a Comment