সড়কই যখন মৃত্যুর ফাঁদ!
- ঋতুপর্ণা চাকী
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিটি মানুষের মধ্যেই প্রথম যে আতঙ্কটি তাড়া করে তা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর তাড়া করবেই না কেন? প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই আমাদের চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণহানির চিত্র।
সড়ক মহাসড়কগুলো যেন মৃত্যুর ফাঁদ পেতেই বসে আছে। সারা বিশ্বের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশর অবস্থান এখন চতুর্থ পর্যায়ে। ২০২০ সালের তথ্য মতে, এই বিদায়ী বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬০০ জন (সূত্র: বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি)। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সড়ক মহাসড়ক দুর্ঘটনায় এত প্রাণহানির কারণ কী? কেন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং। অনেক সময় দেখা যায় চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অতিরিক্ত গতির কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এছাড়া অপ্রশস্ত রাস্তা, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী উাঠানো বা অতিরিক্ত মালামাল উঠানো, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ সড়ক পথের দৈর্ঘ্য যেখানে ২৫ হাজার কিলোমিটার সেখানে এই বিশাল সংখ্যক যানবাহনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার মতো নেই কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা।
এছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থাতো রয়েছেই। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, একইসাথে তালে তাল মিলিয়ে বাড়ছে যানবাহন সংখ্যাও। বর্তমানে এখন ঢাকাতে প্রতি কিলোমিটার রাস্তায় ২৪৭টির মতো গাড়ি চলে। এছাড়া ঢাকার মেট্রপলিটন এলাকায় ২২৩.৩০ কিলোমিটার রাস্তায় আনুমানিক ৫ লাখ ৫০ হাজারের মতো গাড়ি চলে। অন্য বড় বড় শহরগুলোতেও এরকম চিত্রই দেখতে পাওয়া যায়। এত বিপুল সংখ্যক যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাধারণত রিকশা, ভ্যান, বেবি ট্যাস্কি, নছিমন, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এই যানবাহনগুলোর কারণে সড়কদুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই এই যানবাহনগুলোর চালকরাই তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যাক্তি। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে এমন আহত বা নিহত হওয়ায় ভেঙ্গে যাচ্ছে শত শত পরিবার। চরম অসহায় ও দরিদ্রতার সাথে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। এরকমই একটি পরিবার হচ্ছে মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ চৌধুরীর পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যাক্তি ছিলেন হাবিবউল্লাহ। পেশায় ছিলেন অটোরিকশা চালক। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হবার পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে চরম অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী।
এ বিষয়ে এআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পুরো পরিবহণ ব্যবস্থা মুনাফাকেন্দ্রিক হওয়ায় এক নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত বিশ্বে পরিবহণে সাবসিডি দেওয়া হলেও আমাদের দেশে এখানে তা দেওয়া হয়নি। আর এই খাতটি মনিটর বা নিয়ন্ত্রণের জন্যও কোনো কার্যকর প্রতিষ্ঠান নেই এখন পর্যন্ত। যা আছে তাদের জনবল খুবই সামান্য। আর সেই জনবলও দক্ষ নয়।