পথচলায় ২০ পেরিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- আবু রিফাত জাহান
৪ বছরের ফুটফুটে শিশু সন্তান আর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র কয়েক মাস আগেই (৯ জানুয়ারি,২০২২) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৯ম সমাবর্তন আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন উম্মে শিফা সুলতানা। বর্তমানে এই দম্পতির উভয়ই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার, সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আর তাদের মিষ্টি শিশু সন্তান, মায়ের সমাবর্তন আয়োজনে নেচে-গেয়ে-আমোদে-উচ্ছ্বাসে মুগ্ধ চোখে সুবিশাল গ্রীন ক্যাম্পাসের সম্পূর্ণ নির্যাস উপভোগ করেছে। এইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। বছর ২০ পেরিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় আজ শিফা দম্পতিকে সমাবর্তন দিল, হয়তো আজ থেকে আরো ২০ বছর পেরিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই দম্পতির আজকের ছোট্ট মিষ্টি সন্তানটিও উল্লাসের সাথে নিজের সমাবর্তনে অংশ নিবে। আর এভাবেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
মাত্র ২০ বছর আগে যে বিশ্ববিদ্যালয় তার আত্মপ্রকাশ করেছিল, আজ তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজারের অধিক। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গাইছে সফলতার গান, মাথা উঁচু করে দেশে-বিদেশের মঞ্চে নিজেদের স্বকীয়তা প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার গল্প লেখার জন্য এর চাইতে বেশি বলার প্রয়োজন নেই।
মাত্র দুইটি অনুষদ আর ৬৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় ২০০২ সালের ২৪ শে জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেছিল, ২০ বছর শেষে তার বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ২২ হাজারের অধিক। রয়েছে ২০০ একরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সুবিশাল ক্যাম্পাস, যেখানে আছে নিজস্ব ছাত্রাবাস, পরিবহন ব্যবস্থা, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, লাইব্রেরি, সুবিশাল খেলার মাঠ এবং আরো কত কি! সব কিছু মিলিয়ে আশুলিয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি’ দেশের নজরকাড়া ক্যাম্পাসগুলোর একটি। এই সুবিশাল সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গ্রীন ক্যাম্পাসের তকমাও।
এছাড়া অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকেও দেশের মধ্যে সবচাইতে এগিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। করোনাকালীন সময়ে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮ মাসের বন্ধে প্রতিকূল সময় পার করেছে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তখন দেশকে পরিচয় করিয়েছে ‘ব্লেন্ডেড লার্ণিং সেন্টার’ ও ‘গো-এডু’র মতো প্লাটফর্মের। আর তারই ফলস্বরুপ শিক্ষার্থীরা করোনায় পিছিয়ে যাওয়ার তালিকায় না থেকে পেয়েছে তাদের সমাবর্তন; যোগ দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সেবায়। সেই সাথে উন্নত বিশ্বের মতো দেশে প্রথমবারের মতো ধারণা দিতে যাচ্ছে অনলাইন ডিগ্রি ও প্লাটফর্ম ভিত্তিক শিক্ষাদান।
আর এই দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার জন্যই সেরাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা আজকের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সফলতার র্যাংকিং এখন ঈর্ষণীয়। কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২১-এ এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এর অবস্থান ৪র্থ। এছাড়াও ‘ইউআই গ্রিনমেট্রিক ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং ২০২১’ এবং ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন ইউনিভার্সিটি ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২০’-এ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ও স্বীকৃত সবকটি র্যাংকিং এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার অবস্থান ধরে রেখেছে। অতিসম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির অলিম্পিকখ্যাত বিশ্ব সম্মেলন ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (ডব্লিউসিআইটি-২০২১) ‘ই-এডুকেশন এন্ড লার্নিং’ এ “গ্লোবাল আইসিটি এক্সসেলেন্স এওয়ার্ড” পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে; এমন অজস্র অর্জন আজ সেরাদের তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানকে অনন্য করে তুলেছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সর্বস্তরের মানুষের কাছে এবং সর্বোপরি শিক্ষাঙ্গনে এর স্বক্ষমতা প্রকাশের সময়কাল ছিল ২০১১-২০১২ সালের দিকে। এ সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের বুকে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো উপস্থাপনের চেষ্টা করে এবং ব্যাপকভাবে সাড়া লাভ করে। এছাড়া ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এই প্রতিষ্ঠানের চমৎকার সব কার্যক্রমগুলো মানুষের নজর কেড়েছে। তাই এই অল্প সময়েই দেশের শিক্ষাঙ্গনে প্রতিষ্ঠানটি অনন্যতা লাভ করে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের স্বক্ষমতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার জানান দিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত।
ফলে বিশ্বের প্রায় ৪৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দেশে-বিদেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে দিয়েছে। যার সুযোগ লাভ করছেন অনেক ড্যাফোডিলের অনেক শিক্ষার্থীরা এবং আরো উচ্চতর শিক্ষা-গবেষণার কাজে তারা স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের প্রকাশ করে বেড়াচ্ছে। আর পাশে বটগাছের ছায়ার মতো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বিনির্মানে সাহায্য করে যাচ্ছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণাকর্মে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করার রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ‘একজন শিক্ষার্থী, একটি ল্যাপটপ’ ক্যাম্পেইনের ঢালাও প্রচারণার মাধ্যমেও তথ্য ও প্রযুক্তিগতভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে প্রাঞ্জলতা সৃষ্টি করেছে।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তার ২০ বছরের গৌরবজ্জ্বল অধ্যায় পার করে, শিক্ষাঙ্গনে দেশের প্রতিনিধি হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম বয়ে আনার লক্ষ্যে ২১ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিবছর এই দিনটিকে ঘিরে ড্যাফোডিল পরিবার একত্রিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সকলে একত্রে উদযাপন করে আপন প্রতিষ্ঠান ও প্রিয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে। তবে, করোনা পরিস্থিতির দরুন এবারে এখনও শারীরিক উপস্থিতিতে আয়োজন সম্ভবপর হয়নি, তাই অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছাবার্তা, স্মৃতিচারণ, শুভকামনা, অভিনন্দন, আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেক অনেক বার্তা জায়গা করে নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। প্রায় ৩০ লাখের মতো মানুষের যোগাযোগ স্থাপন করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অফিশিয়াল পেজগুলো থেকে শুভেচ্ছাবার্তা ও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. এম সবুর খান। তিনি দীর্ঘ কঠিন সময়ে সকলকে পাশে থাকার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। সুদীর্ঘ ২০ বছরে সকলকে সাথে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান ও এর সুবিশাল গ্রীন ক্যাম্পাস গড়তে তাদের পরিশ্রম ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, তবে সবকিছুর উর্ধ্বে আজকের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফলতার পিছনে তিনি সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা বারংবার স্মরণ করিয়ে দেন।
করোনা পরিস্থিতির আগের কথা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘ফাউন্ডেশন ডে’ উপলক্ষে ক্যাম্পাস মাতিয়েছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে, বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি(ডি আই ইউ) ক্যাম্পাসে বেশ কয়েক বছর আগের এই জমকালো কনসার্ট দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। আর আলোড়ন হবে না কেন! ডি আই ইউ ক্যাম্পাসে সেদিনের ‘ফাউন্ডেশন ডে’ উপলক্ষে যে আয়োজন ছিল, তাতে অংশগ্রহণ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
আর তাই, মুহুর্তে আলোড়ন সৃষ্টি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের এমন বাঁধ-ভাঙা আনন্দ, উল্লাস দেখে। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসকে ভালোবাসে না, এমন পাওয়াটা যেমন বিরল; ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো ছিল। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের এই নজরকাড়া অংশগ্রহণই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে বড় সফলতা। তাই মাত্র ২০ পেরিয়ে ২১-এ যখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, তখন শিফা দম্পতিও তাদের মেয়ের জন্য স্বপ্ন দেখেন মুগ্ধ দৃষ্টির গ্রীন ক্যাম্পাস।