১ বছরের সহজ বিপণন পরিকল্পনা
সাবরিনা তাবাসসুম : দি মার্কেটিং প্ল্যান হ্যান্ডবুক বইটিতে লেখক রবার্ট ডব্লিউ ব্লাই দেখিয়েছেন কীভাবে এক বছরের মার্কেটিং পরিকল্পনা করা যায়। রবার্টের মতে ব্যবসার মার্কেটিং কৌশলের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে অল্প কয়েক বছরেই বিরাট পরিবর্তন আসতে পারে। তাই প্রথমে ১ বছরের মার্কেটিং পরিকল্পনা করা উচিত। এখানে তাঁর লেখা অনুযায়ী ১ বছরের জন্য মার্কেটিং পরিকল্পনা কীভাবে করা যায় তা তুলে ধরা হলো।
কাগজে অথবা স্প্রেডশিটে মার্কেটিং পরিকল্পনা করুন এবং নিচের বিষয়গুলো সেখানে অন্তর্ভুক্ত করুন।
লক্ষ্য : পরের বছর আপনি কী অর্জন করতে চান ?
কৌশল : কী কৌশলে আপনার লক্ষ্য অর্জন করবেন ?
কার্যপ্রণালী : কীভাবে কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করবেন ?
যা করণীয় : প্রতিটি কৌশল কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন ?
সময়সূচী : এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কত দিনে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব সে ব্যাপারে একটি সময় ঠিক করা।
জন সম্পদ : কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য কাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হবে ?
এরপর বার্ষিক মার্কেটিং বাজেট তৈরি করুন। যেটা সাধারণত আপনার মোট বার্ষিক বিক্রয়ের ০.০১ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকবে।যদি আপনি ব্যবসা মাত্রই শুরু করে থাকেন সেক্ষেত্রে বিক্রয় কম থাকবে এবং আপনার বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য নতুন গ্রাহক খুঁজতে হবে।অতএব ব্যবসার শুরুর দিকে মার্কেটিং বাজেটের জন্য আপনার বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।
মার্কেটিং বাজেট পরিকল্পনার পর সেটা তিনটি ক্ষেত্রের জন্য আলাদা করুন। মাসিক, মৌসুম ভিত্তিক এবং মার্কেটিং মাধ্যমের জন্য। মার্কেটিং মিডিয়াম হতে পারে
- সংবাদপত্র
- কনজিউমার ম্যাগাজিন
- ব্যবসা সংক্রান্ত প্রকাশনা
- এফ এম রেডিও
- স্যাটেলাইট রেডিও
- সরাসরি মেইল
- ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ স্থান
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- সামাজিক মাধ্যম
মূল প্রচারণার পরিকল্পনাটি প্রথমে করুন। কারণ এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর জনবল এবং সময়। মূল প্রচারণার দিনগুলো নির্ধারিত করার জন্য একটি ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করুন। ক্যালেন্ডারে মাস, প্রচারণা, প্রচারণার সম্ভাব্য ব্যয়, জনবল/সম্পদের প্রয়োজনীয়তা, যথার্থ ব্যয়, সম্ভাব্য এবং আসল ফলাফল – এরকম শিরোনাম রাখুন।
আপনার পরিকল্পনাকে আয়ত্ত্বে আনার জন্য যা করতে পারেন তা হল, পরিকল্পনাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা। এ কারণেই আপনাকে বড় বিষয়গুলো অর্থাৎ মূল প্রচারণার কথা আগে ভাবতে হবে। এর মাধ্যমে প্রথমত আপনি চিন্তা করার সময় পাবেন যে প্রতিটি প্রচারণার জন্য আসলে কী কী প্রয়োজন পড়তে পারে।এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য রয়েছে কিছু সহজ উপায়।
মনে রাখবেন, আপনি ১ বছরের লক্ষ্য নির্ধারন করে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৌশল ঠিক করছেন। এখন আপনি যদি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিজের লক্ষ্যগুলোকে পুনর্মূল্যায়ণ করেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কতটুকু অর্জন হয়েছে এবং কতটুকু বিচ্যুতি হয়েছে। এইজন্য ১ বছরের পরিকল্পনাটিকে ২ টি ভাগে ভাগ করে প্রথম ৬ মাসের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করাটাই সঠিক হবে।
পরিকল্পনার ষষ্ঠ মাস থেকে বছরের শেষের মাঝামাঝি রয়েছে নবম মাস। চিন্তা করে দেখুন যে এই ৯ মাসে কী কী কাজ শেষ করতে হবে যেন ঠিক ১ বছরের মধ্যেই আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে আপনি সক্ষম হবেন।
এখন আপনার পরিকল্পনার প্রথম মাস থেকে ষষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি রয়েছে তৃতীয় মাস। চিন্তা করে দেখুন যে এই ৩ মাসে আপনাকে কী কী কাজ শেষ করতে হবে যেন আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে সচল থাকেন এবং ৬ মাসের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হতে পারেন। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়মিত কাজ না করেন সেক্ষেত্রে পরিকল্পনার প্রথম ৩ মাস কোন উন্নতি ছাড়াই দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আগামী এক মাসে আপনি কী করবেন সেই পরিকল্পনা করাটা কিন্তু খুব সহজ। তাই নিজেকেই প্রশ্ন করুন যে এই প্রথম মাসে আপনাকে কী কী কাজ শেষ করতে হবে যেন আপনি আপনার লক্ষ্যে অর্জনের পথ থেকে সরে না গিয়ে আগামী ৩ মাসের লক্ষ্যে অর্জনে সক্ষম হবেন। মাস শেষে আপনি একই ভাবে এগিয়ে যেতে থাকুন। বিষয়টি মাথায় রাখুন যে ৩ মাসের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার মাত্র ২ মাস হাতে আছে।
সাবধানতা
মার্কেটিং কার্যাবলী এবং ব্যয় কখনই এক নিয়মে চলেনা। কখনো প্রচন্ড ব্যস্ত মৌসুম থাকবে কখনো খুব ধীর গতিতে চলবে সব কিছু। আপনার পরিকল্পনা অবস্থার সাথে পরিবর্তন করতে হবে। উদাহরণ সরূপ এ্যাকাউনন্টিং এবং ট্যাক্স প্রিপারেশান ফার্মগুলো সাধারণত জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রচন্ড ব্যস্ত থাকে, কিন্তু বছরের বাকি সময়গুলোতে তাদের ব্যবসা ধরে রাখার জন্য তাদের ঐ বাকি সময়টাতে আরও প্রচারণার প্রয়োজন পড়ে। আবার কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলোকে সারা বছরই এক টানা একই কাজ করতে হয়। যেমন ইলেক্ট্রিকাল কন্ট্র্যাক্টার। এ ধরনের ব্যবসাগুলোকে সারা বছরই প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। সুতরাং যেটাই পরিকল্পনা করবেন চেষ্টা করবেন সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার। ফলাফলগুলো নিয়মিত যাচাই করুন যেন তা পরের বছরের পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে পারেন।