ট্রাভেল এজেন্সিতে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
মানুষের যতগুলো শখ বয়েছে তার মধ্যে ট্রাভেল তথা নতুন নতুন জায়গা, দেশ, বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা, সাগর, নদী, পাহাড়, প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ানো অন্যতম। এ ছাড়া কাজের প্রয়োজনেও মানুষকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের কারো না কারো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এই ভ্রমণপ্রিয় এবং কাজের প্রয়োজনে নানা স্থানে যাওয়া মানুষগুলোকে অর্থের বিনিময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করে থাকে তাদের বলা হয় ট্রাভেল এজেন্সি। বাংলাদেশে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। রিজার্ভেশন অফিসার, ট্যুর ম্যানেজার, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, সেলস এক্সিকিউটিভসহ সর্বনি¤œ ১৫ জন থেকে শুরু করে ১০০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব এজেন্সিতে কাজ করে থাকে। সব মিলিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য এখানে একটি বিশাল কর্মক্ষেত্র রয়েছে। গ্রাজুয়েশনের পাশাপাশি স্বল্প কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তরিকতা ও মননশীলতার সাথে কাজ করলে এই সেক্টরে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। যোগ্যতা ট্রাভেল এজেন্সিতে বেশির ভাগ পদে চাকরির জন্য ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির প্রয়োজন। পাশাপাশি যে পদে চাকরি করবেন সেই পদের জন্য কিছু অতিরিক্ত যোগ্যতা দরকার। যেমনÑ রিজার্ভেশন অফিসারের জন্য টিকেটিং এবং রিজার্ভেশন সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। ট্যুর ম্যানেজারের জন্য এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা ডিপ্লোমা থাকতে হবে। ট্যুর অপারেটরের জন্যও একটি প্রশিক্ষণ বা ডিপ্লোমা থাকলে ভালো হয়। আর ট্যুর গাইডের জন্য ইংরেজিতে দক্ষতাসহ অন্য যে কোনো বিদেশি ভাষার ওপর দখল থাকা আবশ্যক। সেই সাথে ভৌগোলিক জ্ঞানেও পারদর্শী হতে হয়। সেলস এক্সিকিউটিভ হওয়ার জন্য এই বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ও মানুষের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে। পাশাপাশি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে সক্ষম হতে হবে। কোথায় প্রশিক্ষণ নেবেন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিসহ বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সির প্রশিক্ষণ অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং বিমান বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদেয় ট্রেনিং প্রোগ্রামটি একজন ব্যক্তিকে ট্রাভেল এজেন্সি শিল্পে দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্রশিক্ষণটির নাম হলো ‘ট্রাভেল এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর’। ১৮ সপ্তাহব্যাপী এই কোর্সটি করতে একজন ব্যক্তিকে ন্যূনতম এইচএসসি উত্তীর্ণ হতে হবে। রিজার্ভেশন অফিসার ট্রাভেল এজেন্সির কাজ বলতে অনেকেই আমরা শুধু প্লেনের টিকিট রিজার্ভেশনের কাজ করাকেই বুঝে থাকি। একজন ভ্রমণকারীর প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট রিজার্ভেশন, কনফার্মেশন অথবা বাতিল করার কাজ করে থাকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ট্রাভেল এজেন্সিতে যে ব্যক্তিবর্গ করে থাকেন তাদেরকে বলা হয়ে থাকে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসার। যে কোনো ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসারের দায়িত্ব অনেক। মূলত তাদের কাছ থেকেই ট্রাভেল এজেন্সিতে আগত ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো এয়ারলাইনসের টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। ট্রাভেল এজেন্সির অফার এবং ব্যবসায়িক কর্মপরিধির ওপর ভিত্তি করে ছোট বা মাঝারি আকারের ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসার থাকেন ৫ জন থেকে ১৫ জন। সেই হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী আনুমানিক দুই/আড়াই হাজার ট্রাভেল এজেন্সিতে এই পেশাতে বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আবার নতুন নতুন এয়ারলাইনস চালু হওয়ায় এই সেক্টরে আরও বেশি জনবলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলে এই পেশাতে দক্ষ জনবলের বেশ অভাব রয়েছে। ট্যুর ম্যানেজার এজেন্সির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো স্থানে ট্যুর পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই, প্ল্যানিং, খরচ এবং লিয়াজোঁ মেইনটেইন করা ট্যুর ম্যানেজারের দায়িত্ব। সাধারণত ট্যুর ম্যানেজার ট্যুরে অংশ নেন না। কিন্তু ট্যুরের সব লাভ-লোকসানের দায়িত্ব তাকে বহন করতে হয়। ট্যুর অপারেটর ট্যুর অপারেটরের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত প্যাকেজ ট্যুরের সাথে সম্পৃক্ত থাকা। একজন ট্যুর অপারেটরের ট্যুর সংক্রান্ত যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হয়। ট্যুর অপারেশন পরিচালনাকারী হিসেবে তার ওপর সব দায়িত্ব অর্পিত হয়। ট্যুর গাইড এই পদের নামের সাথেই পেশার কাজের পরিধি চিহ্নিত করা যায়। মূলত ট্যুর পরিচালনার সময় ট্যুর গাইডকে ভ্রমণকারীদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং সে স্থানের ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্য বিশদভাবে জানাতে হয়। সেলস এক্সিকিউটিভ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ও প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের অবস্থান উন্নত করতে সেলস এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের কাজ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কোম্পানির প্রয়োজনে কাস্টমারদের সাথে সমন্বয় সাধন করা।